সিলেটে রমজান মাসকে টার্গেট করে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য পন্যের দাম। বাজারে এখন ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। শনিবার (২৭ জানুয়ারী) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
গত বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের পুরোটা সময় নিত্যপণ্যের দাম ছিল লাগাম ছাড়া। ২০২৪ সালের শুরুতেও বাজারজুড়ে ক্রেতাদের কাছে একই অস্বস্তি। দিন-দিন বাড়তে থাকা পণ্যের দাম ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন শঙ্কার। সেই শঙ্কা বলছে-রমজান মাসে বেশি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হতে পারে লাগামহীন। যদিও রোজায় মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার এরই মধ্যে নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক-কর কমাতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
বাজারে চালসহ সব ধরনের সবজি ও অন্যান্য বেশ কিছু খাদ্যপণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। নির্বাচনের পরে প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এখনো সে দাম স্বাভাবিক হয়নি। কিছু দোকানে ২ থেকে ৩ টাকা কমতে দেখা গেছে। তবে বেশির ভাগ দোকানে বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই।
সিলেটের পাইকারি কালিঘাট বাজার ঘুরে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ডাল বেড়েছে মসুর ডালের দাম। গত ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে এ ডালের দাম কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মতো বেড়েছে। দেশি বলে যে ডাল বিক্রি হচ্ছে, তার সর্বনিম্ন মূল্য দেখা গেছে কেজি প্রতি ১৫০ টাকা। বেড়েছে ছোলার দামও। গত এক মাস আগেও প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এখন ওই ছোলার দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।একই ভাবে বেড়েছে অ্যাঙ্কর ডালের দামও। এ ডাল দিয়ে মূলত বেসন তৈরি করা হয়। রোজার সময় বেসন খুব দরকারি পণ্য হয়ে ওঠে। বর্তমানে এর দাম কেজি প্রতি ৭৫ টাকা।
বিক্রেতারা জানান, বোতলজাত ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে প্রতি লিটারে তিন থেকে চার টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা এবং পাম তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়, গত সপ্তাহের তুলনায় যা পাঁচ টাকা বেশি।
এ ছাড়া প্রতি কেজি খোলা চিনি এলাকা ভেদে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা এ যাবৎকালের সবোর্চ্চ। অন্য দিকে, অধিকাংশ খেজুরের কেজি প্রতি দাম ১০ টাকা বা তার বেশি বাড়ছে। আদা ও রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ১০ টাকা বেশি। এ ছাড়া ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সোনালি ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলেন, একেক পণ্যের দাম একেক অজুহাতে বেড়েছে। কিন্তু কোনো কিছুর দাম কমেনি। এদেশে আর কিছু কমে না, শুধু বাড়ে। সূত্র জানায়, রমজানকে ঘিরে সরকারের একাধিক সংস্থা তিন মাস আগেই বাজার তদারকিতে নেমেছে। তারা মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করছে।
ক্রেতারা বলছেন, রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীচক্র পুরোনো ছক কাজে লাগাচ্ছে। রমজান নির্ভর পণ্যের দাম তারা আগেই বাড়িয়ে নিচ্ছে। তাতে রমজানে নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না। একই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ভোক্তার পকেট কেটে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায়। এ অবস্থায় রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, দেশের আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক বেশি ছিল। সেই শুল্ক যাতে আমরা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি, সে বিষয়ে এনবিআরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :