ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মশক নিধনের সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। এখন থেকে মশক নিধনে কীটনাশক বিটিআই সরাসরি আমদাানি করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এমনটিই জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের নগর ভবনে ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমাদের বছরব্যাপী প্রস্তুতি এবং করণীয় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমিসহ সব কাউন্সিলরকে জবাবদিহি করতে হবে। আমরা আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের কাজের মূল্যায়ন করতে চাই। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের চেষ্টার কমতি থাকবে না। মশক নিধনের সঙ্গে যে প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাদের সবাইকে নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটি করা হবে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এই কমিটি কাজ শুরু করবে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, মশা নিধনে বিটিআই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হয়। এটা আমরা এক ঠিকাদারের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে ৫ টন এনেছিলাম। যার মূল্য ৭০ লাখ টাকা। বিটিআই যখন আনা হয়, সব পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েছি। কিন্তু ঠিকাদার মূল কোম্পানি থেকে আনেনি। ভিন্ন কোম্পানি থেকে আনায় মামলা করেছি। জামানত বাজেয়াপ্ত করেছি। এ ছাড়া মালামাল বাজেয়াপ্ত করেছি।
তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারের এ জালিয়াতি আমাদের শিক্ষা হয়েছে। মানের দিক দিয়ে সিটি করপোরেশন কখনও আপস করবে না। তবে বিটিআই জালিয়াতিতে সিটি করপোরেশনের মানহানি হয়েছে। আমরা সরাসরি বিটিআই আমদানি করব। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এখানে আর প্রতারণার সুযোগ থাকবে না।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাসার বলেন, নাগরিকরা সচেতন না হলে সিটি করপোরেশন একা ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে পারবে না। আমাদের দেশের মশাদের ৯৯ ভাগ কিউলেক্স মশা, যা মানুষকে কামড়ালেও তেমন কিছু হয় না। বাকি এক ভাগ হচ্ছে ভয়ঙ্কর, এডিস মশা। যার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। এই এক ভাগ ডেঙ্গু মশার মধ্যে ৪৩ ভাগের জন্ম হয় ভবনের বেসমেন্টে। নির্মাণাধীন ভবনে জন্ম হয় ২৩ ভাগের। বাকীরা জন্ম নেয় বিভিন্ন স্থানে জমা স্বচ্ছ পানিতে। এই বিষয়টা সবার জানা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ মশার সঙ্গে ডেঙ্গুবাহী এডিশ মশাকে না মিশিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা করা দরকার। ডিএনসিসির কার্যক্রমের পাশাপাশি নাগরিকরা সচেতেন হলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের সিড এনেছে। অনুমতি পেলে অচিরেই ভ্যাকসিন তৈরি করা যাবে। এসব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও উত্তর সিটি এক সঙ্গে কাজ করছে। অনেক কাজ করার পরও ডেঙ্গুর ব্যাপারে তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। অসফলেরর কারণ বের করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, একসময় দেশে কালাজ্বর ছিল। সেটা নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৪ সালে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে কাজের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য থাকার দরকার ছিল। আমাদের কীটতাত্তি¡ক সক্ষমতার অভাব আছে। প্রশিক্ষিত লোকের অভাব আছে, তাই এখন থেকেই কীটতাত্তি¡ক সক্ষমতার প্রশিক্ষণ দিয়ে কীটতত্তবিদ বাড়াতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে টেকনিক্যাল কমিটি করতে হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক ডেঙ্গু জরিপ করতে হবে। ল্যাবের সংখ্যাও বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
দুই সিটি করপোরেশনের সম্বনিত উদ্দ্যেগ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবি এম আবদুল্লাহ। তিনি জানান, ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন আনতে সবোর্চ্চ চেষ্টা করছে সরকার।
এ সময় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ৬ চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী। ইমরুল কায়েস বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনসচেতনতা ও জনসমপৃক্ততার ঘাটতি,নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের জ্ঞানের অভাব এবং অসহযোগিতা, পরিত্যক্ত অপরিকল্পিত ছাদবাগান,বেজমেন্ট পার্কিংয়ে জমা হওয়া পানি এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার তথ্যে অপ্রতুলতার কারণে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাই এসব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বিমান বন্দর প্রতিনিধি, মেট্রোরেল প্রতিনিধি, আইডিসিআর প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :