প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন বলেছেন, নারীকর্মীদের বিদেশ পাঠানোর ক্ষেত্রে একটা কাঠামো তৈরি করা হবে যাতে তারা একটা সুস্থ পরিবেশে কাজ করতে পারে। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন কথা জানিয়েছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ।
সচিব বলেন, আগের চেয়ে আগামীতে আরও বেশি শ্রমিক বিদেশে যাবেন। অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো আমরা। ডিসিদের কী নির্দেশনা দিয়েছেন, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তাদের পক্ষ থেকে কোরীয়, আরবি ও ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা কোর্স চালু করার প্রস্তাব ছিল। ভাষা কোর্সগুলোকে আরও কার্যকল করতে আমরা করণীয় ঠিক করেছি। ভবিষ্যতে এই ভাষা কোর্সকে আরও কার্যকর করতে হবে। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে বেশি লোক যাচ্ছেন, বিশেষ করে আরবি বা নতুন করে কোরিয়াতে দক্ষ লোক পাঠাচ্ছি, সেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভাষা একটা বাধা। যে কারণে ভাষা কোর্সকে আরও কার্যকর করতে চাচ্ছি।‘স্পোকেন ল্যাংগুয়েজের চেয়েও যেটা দরকার, সেটা হচ্ছে দক্ষতাভিত্তিক কমিউনিকেশন ল্যাংগুয়েজ। সেটার ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করছি,’ যোগ করেন তিনি।
রুহুল আমিন বলেন, আমাদের অনেক নতুন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ হয়েছে। সেখানে জনবলের অভাব আছে। সেটা দ্রুত পূরণ করতে কার্যক্রমও নেওয়া হয়েছে। অর্থবিভাগ ও জনপ্রশাসন বিভাগ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা নতুন করে লোক নিয়োগ দিতে পারবো। এখন আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আছি। এছাড়াও যেসব টিটিসিতে লোকবলের অভাব আছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেখানে নিয়োগ দেব।
সচিব বলেন, আমাদের নারীকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের আরেকটু সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দূতাবাসগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ভবিষ্যতে নারীকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে একটা ফ্রেমওয়ার্ক গঠন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে যখন নারী কর্মীদের বিদেশ পাঠাবো, তারা যেন ভালো পরিবেশে কাজ করতে পারেন। সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সবাই যেটা বলেছেন, সংখ্যার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা দক্ষকর্মী পাঠাতে পারছি কিনা। ১২ কিংবা ১৩ লাখ অদক্ষ কর্মী পাঠানোর চেয়ে আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারি, তাহলে রেমিট্যান্স ও দেশের উন্নয়নে তারা অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন।
শ্রমিকরা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতারিত হচ্ছে, তাতে সারা দেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ নিয়ে তিনি বলেন, বাইরে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয় না, কথা হচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এরইমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, আমরা যখন কর্মীদের বাইরে পাঠাই, মালয়েশিয়া থেকে যেসব নিয়োগদাতা ডিমান্ড (শ্রমিক চাহিদা) পাঠাই, সেটির বিপরীতে কর্মী পাঠাই। সমস্যা হচ্ছে, অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, কর্মীরা ঠিকমতো কাজ পাচ্ছে না। আমাদের দিক থেকে সে বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি এতে জড়িত, তাদের কর্মানুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সার্ভার লক করে দিচ্ছি। তাদের জরিমানা করছি।
‘কিছু ক্ষেত্রে যে প্রতারণা করা হয়েছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় থেকে। আমাদের দিক থেকে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আবার যেসব নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে আগে অভিযোগ ছিল, সেক্ষেত্রে কর্মানুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমরা মালয়েশিয়া সরকারকে এ বিষয়ে জানিয়েছে। এরইমধ্যে ৪৮টি কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সরকারও তাদের কর্মানুমতি দিচ্ছে না, আমরাও সেসমস্ত জায়গায় লোক পাঠাচ্ছি,’ বলেন সচিব।
সচিব বলেন, তবে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় আমাদের অনেক কর্মী থাকেন। সেখানে কিছু সমস্যা আছে। আমরা চেষ্টা করছি, সেই সমস্যা সমাধান করার। তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা যাবে, এমন না, আমরা ক্রমান্বয়ে সমাধানের চেষ্টা করছি। কর্মানুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোর সত্যায়ন ছাড়া অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কারণ যাতে নিয়োগদাতাদের সত্যতা ও কর্মী নিয়োগে তাদের সক্ষমতাটা যাচাই করে নেওয়া যায়, এসব যাচাই করেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আমরা ধীরে ধীরে এই সমস্যা দূর করতে পারবো।
‘বর্তমানে দুই হাজারের বেশি রিক্রুটিং সংস্থা আছে। আর যাদের কর্মানুমতি নেই, কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে ভিসা নিয়ে যায়, কিন্তু যারা প্রক্রিয়া সেরে কর্মানুমতি নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের বিষয়টি আমরা দেখছিই।’
একুশে সংবাদ/আ.মা.জ্যে/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :