দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে ‘আইন–শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার-সংশোধন) বিল-২০২৪’ পাস হয়েছে। বিলটি পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা ঘোরতর আপত্তি জানান। তারা সরকারকে সতর্ক করে বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে এই আইনের মাধ্যমে দমন-পীড়নের শিকার হবেন। তবে তাদের সেই আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিরের উপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাকালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র ক্রয়, বিক্রয়, গ্রহণ বা দাখিলে বাধাদান, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে ‘আইন- শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২’ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। আইনটি প্রণয়নের সময় এর মেয়াদ ছিল ২ বছর। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ক্রমান্বয়ে ৭ বার এর মেয়াদ বাড়ানো হয়, যে মেয়াদ আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হবে। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য এই আইনটি মেয়াদ শেষে বারবার সময় বাড়িয়ে স্থায়ীভাবে আইনে পরিণত করা প্রয়োজন।
বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আইনটি ২০০২ সালে বিএনপি সরাকরের সময় যখন করা হয় তখন আপনারা বলেছিলেন এটা নিবর্তনমুলক আইন, কালো আইন। এই আইনটি রাজনৈতিক কারণে বা যে কোনো কারণে সরকার ইচ্ছা করলে যে কোনো নাগরিককে হয়রানি করতে পারে। সেই আইনটা আপনারা রেখেছেন, আমি জানি না কেন রেখেছেন। আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো হলেও স্থায়ীভাবে আইনটি করার পর অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসলে তাদের উদ্দেশ্য তো ভালো নাও থাকতে পারে। তখন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানির শিকার হতে হবে।
জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গর্ত খুড়লে সেই গর্তে পড়তে হয়। বিএনপি গর্ত খুড়েছিলো গর্তে পড়তে হয়েছে। আজ আপনারা আইনটি স্থায়ী করছেন, সময় তো সব সময় এক রকম যায় না। তাই স্থায়ী না করে আইনটির মেয়াদ ৪ বা ৫ বছর বাড়াতে পারেন।
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য মাসুদউদ্দিন চৌধুরী বলেন, যখন ২০০২ সালে আইনটি হয়েছিলো তখন সবাই বিরোধীতা করেছি। এই ২২ বছরে মানুষের অবস্থা কি হয়েছে সেটা জনমত যাচাই করে দেখতে পারেন। যেহেতু সময় শেষ তাই ৪ বা বছর বাড়াতে পারেন।
জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ২০০২ সালে এই আইনটি করা হয়েছিলো। আমি মনে করি এই আইনটি করার উদ্দেশ্য ছিলো যাতে তাৎক্ষণিক বিচার পায়। অল্প সময়ের মধ্যে যারা অপরাধ করে তাদের বিচার হয়, তারা যেনো শান্তি পায়। সংসদ সদস্যরা অনেক সময় আমাদের কাছে সুপারিশ পাঠান এই আইনটির মাধ্যমে যেনো বিচার হয়। শুধু সংসদ সদস্য না অনেকেই প্রায়ই এই আইনটি ব্যবহার করার জন্য প্রায়ই সুপারিশ পাঠান। ওই একটাই যাতে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীরা শাস্তি পায়। আইনটির উদ্দেশ্যটা ছিলো সেইটাই। আর সংসদ সদস্যার কেউ বলেননি, এই আইনটি বাতিল করে দেন। কেউ বলেননি আইনটি যথাযোগ্য নয়, শুধু বলেছেন সময় বাড়িয়ে দিয়ে আইনটি চালু থাকুক। কিন্তু আমরা মনে করি বার বার সময় না বাড়িয়ে এটাকে স্থায়ী করলে সবার জন্যই মঙ্গল হবে। তবে আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই এটা কোনো অপপ্রয়োগ হবে না, এটা ভালো আইন, তাদের মেনে নিতে আমি অনুরোধ রাখবো।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :