মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোঃ আব্দুর রহমান বলেছেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ইলিশ বেড়ে উঠার পথে কোনভাবেই যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় সেজন্য যা যা করা দরকার আমরা করবো। এবছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কর্মসূচি ১১ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত পালন করা হচ্ছে। ‘ইলিশ হলো মাছের রাজা, জাটকা ধরলে হবে সাজা’ এ প্রতিপাদ্যে আমাদের এবারের কর্মসূচি। এ সময় ইলিশের অভয়াশ্রম সুরক্ষা এবং জাটকা নিধন বন্ধে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাটকা আহরণ বন্ধকালে ইলিশ আহরণে জড়িতদের যাতে সমস্যা নয়, সেজন্য তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (০৬ মার্চ) রাজধানীর সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ব্র্যান্ডেড এবং পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সেরা মাছ ইলিশ উল্লেখ্য করে মন্ত্রী বলেন, ইলিশের উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এটা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে। ইলিশ উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে আমরা প্রথম স্থানে রয়েছি।
তিনি বলেন, জাটকা রক্ষায় ও মা ইলিশ আহরণ বন্ধে জলে, স্থলে ও আকাশপথে বিভিন্নভাবে মনিটর করা হচ্ছে। ইলিশের অভয়াশ্রমে জাটকা নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যারা কারেন্ট জাল, বেহুন্দী জালসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জাল তৈরি করে জাটকা নিধন করে তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান ও জরিমানা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, জাটকাসহ অন্যান্য মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলে এ বছর ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে ৩০দিনে ১৭ জেলায় মোট ৯৩১টি মোবাইল কোর্ট ও ৩ হাজার ৪৭৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ৭ হাজার ৬৬৯টি বেহুন্দি জাল, ৪৪৮.৭১ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল এবং ১৯ হাজার ৭৪২ টি বেড় জাল, চরঘড়া জাল, মশারি জাল ও পাইজাল আটক করা হয়েছে এবং প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ১৯২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছি।
মন্ত্রী আরো বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাটকা আহরণে বিরত ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ৭১ টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসে ৫৭ হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন ভিজিএফ বিতরণ করা হয়েছ। কারণ আমাদের মৎস্যজীবীদের পরিবারের কথাও মাথায় রাখতে হয়। ভিজিএফ সহায়তার পাশাপাশি জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩১ হাজার ৭০০ জেলেকে চাহিদানুযায়ী নানা উপকরণ প্রদান করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কেউ যাতে জাটকা আহরণ করতে না পারে, ইলিশের অভয়াশ্রমে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখতে না পারে সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এমনকি মাছের বাজারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। দেশের যে বিস্তৃত এলাকায় ইলিশ উৎপাদন হয় সব জায়গায় ভূমিকা রাখতে না পারলেও আমরা চেষ্টা করছি কোন প্রান্তেই যেন জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে কেউ জাটকা আহরণ করতে না পারে।
ইলিশ সংরক্ষণে শুধু মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর নয়, সকলকে সম্পৃক্ত থাকতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব, নৌবাহিনী, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে। এমন কি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। আমরা জাটকা ধরবো না। বড় ইলিশ তৈরির সুযোগ করে দেবো। আমরা বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করবো না। এটা হোক জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে আমাদের অঙ্গীকার।”
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, জাটকা নিধনের সাথে যারা জড়িত, গোচরীভূত হওয়া মাত্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় সরকার কাজ করছে। মা ইলিশ রক্ষা পেলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। আর উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে দাম কমে আসবে। তবে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার এসব বিষয় সদিচ্ছার সাথে মনিটরিং করছে বলে তিনি জানান। শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জাটকা বা মা ইলিশ ধরা বন্ধ করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জাটকা বা মা ইলিশ ধরা বন্ধে সামাজিক ক্যাম্পেইন চালাতে হবে, জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। আর এসব কাজে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্ত্রী এ সময় মন্তব্য করেন।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব মো: আব্দুল কাইয়ূম, ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোঃ আলমগীর।
একুশে সংবাদ/আ.মা/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :