রাজধানীর ডেমরার টানা ১২ ঘণ্টা দাউ দাউ করে জ্বলছিল ভাঙ্গা প্রেস এলাকার ক্রীড়াসামগ্রীর গোডাউনে লাগা আগুন। সকাল ৮টায় আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ভস্মীভূত ধ্বংসস্তূপ থেকে ভালো জিনিস খুঁজে ফিরছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। টানা ১২ ঘণ্টা আগুনে অবশিষ্ট নেই তেমন কিছু, প্রায় সবই পুড়ে গেছে।
শুক্রবার (২২ মার্চ) গোডাউনের সামনে এভাবেই হতাশা প্রকাশ করেন অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মামুন মোস্তফা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ভাঙ্গাপ্রেস এলাকার ক্রীড়াসামগ্রীর গোডাউনে আগুন লাগে। মাত্র ১৫ মিনিটেরে মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট পৌঁছায়। এরপর ডেমরা, পোস্তগোলা ও সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশন থেকে মোট ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এরপর সকাল ৮টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনের তীব্রতা কমে আসার পর ফায়ার সার্ভিস ও ব্যবসায়ীর একত্রে ভেতর থেকে পুড়ে যাওয়া মালামাল বের করতে থাকেন। অধিকাংশ পণ্য পুড়ে গেলেও অল্প কিছু পণ্য রক্ষা পায়। সেসব পণ্য বসে বসে আলাদা করছিলেন মামুন মোস্তফা। তিনি বলেন, যেসব পণ্য বেঁচে গেছে সেগুলো আলাদা করে নিয়ে যাচ্ছি। যদিও তার পরিমাণ খুব কম। আমার প্রায় কয়েক কোটি টাকার পণ্য ছিল এ গোডাউনে, সব শেষ।
একইভাবে মালামাল সরাচ্ছিলেন আরেক কর্মী জাফর হোসেন। তিনি বলেন, স্টেডিয়ামে দোকান আছে। গোডাউনেই সব মালামাল রাখা হতো এখানে। কিন্তু এভাবে সব পুড়ে যাওয়ার পর কি বলার আছে। এ ক্ষতি সামলানো সম্ভব না। যেসব পণ্য পুড়েনি সেগুলো সরিয়ে নিচ্ছি।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৫০ কোট টাকা। যদিও ভবনের মালিকপক্ষ থেকে এখনো সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি। আগুন লাগা চারতলা ভবনটি খেলার সামগ্রীতে পূর্ণ ছিল। মূলত আমদানি করে খেলাধুলার সামগ্রী গুদামজাত করা হতো এ ভবনে। গুলিস্তানের হকি স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানগুলোকে সরবরাহ করা হতো সেসব পণ্য।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে দেখা গেছে, ভবনের পেছনের দোতলার জানালা ভেঙে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পোড়া, আধাপোড়া ব্যাডমিন্টনের র্যাকেট, কর্ক বের করছেন। কিছু পণ্য তখনো অক্ষত ছিল।
আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটির পুরো চারতলায় একেবারে ছাদ পর্যন্ত মালামাল মজুত করা। স্পোর্টসের এমন কোনো জিনিস নেই যা এখানে মজুত করা হয়নি। এত পণ্য রাখার কারণে পানি দেওয়া হলে তা ভেতরে যাচ্ছিল না। সব মালামাল সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে পানি দিতে হয়েছে। এজন্য আগুন নেভাতে সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, ভবনের সবকিছুতেই আমরা সমস্যা পেয়েছি। এখানে পণ্য মজুত করা হয়েছে কিন্তু কোনো গ্যাংওয়ে নেই। এখানে ৩ ফিট গ্যাংওয়ে থাকার কথা। সিঁড়ি অত্যন্ত সরু। আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও নেই। এখানে ন্যূনতম কোনো সিস্টেম মেইনটেইন করা হয় নেই। ভেতরের কাঠামোটা অত্যন্ত জটিল। আশপাশে কোনো পানির সোর্স নেই। গাড়ি দিয়ে পানি আনতে হয়েছে। সর্বশেষ প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে পাইপ দিয়ে পানি আনা হয়েছে।
আকতারুজ্জামান বলেন, এরই মধ্যে আমাদের মহাপরিচালক একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিটি গঠন করা হলে কমিটি বিস্তারিত সুপারিশ করবে। তারাই বিস্তারিত তথ্য দেবে এখানে কি কি ব্যত্যয় হয়েছে।
‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। মালিকপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ক্ষতির পরিমাণ। তারা ঠিক বলতে পারছেন না কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।’ কী কারণে আগুন লেগেছে জানতে চাইলে উপপরিচালক বলেন, আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি দুটিই তদন্ত-সাপেক্ষে বলা যাবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :