ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র ২৩ নাবিককে উদ্ধার করতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযানের পক্ষে নয় মালিকপক্ষ। এ বিষয়ে জাহাজের মালিকপক্ষ এবং সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট মহলে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে নাবিকদের উদ্ধারে জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মালিকপক্ষ।
জিম্মি হওয়ার সময় জাহাজ টিতে ২৫ দিনের খাবার ও ২০০ টন বিশুদ্ধ পানি মজুদ ছিল। পরবর্তী সময়ে এই খাবারে ভাগ বসায় জলদস্যুরা। হিসাব খাবারের সংকট হওয়ার কথা থাকলেও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন জলদস্যুরা।
সোমালি জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিজস্ব নৌবাহিনী ও ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। অন্যদিকে নিজেদের ‘শক্ত’ অবস্থান জানান দিতে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে জলদস্যুরা। এছাড়া জাহাজের বিভিন্ন পাশে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে তারা। ইইউ জাহাজের উপস্থিতিতে বন্দি ২৩ নাবিকের ওপর কড়াকড়িও আরোপ করছে সশস্ত্র জলদস্যুরা। তবে এখনও পর্যন্ত সব নাবিক সুস্থ আছেন। জিম্মি এক সদস্যের পরিবারের বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম এক মিডিয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করে আনাই কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান লক্ষ্য। এজন্য আমরা জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে জিম্মি জাহাজে সোমালি পুলিশ কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্সসহ যেসব সামরিক অভিযানের কথা আসছে, এগুলো আমরা জানি না। স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমরা কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চাই না। কারণ আমরা নাবিকদের ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না। সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক মাধ্যমে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নাবিকদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চলছে। তারা ভালো আছেন। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। সবমিলিয়ে আমরা নাবিকদের সুস্থভাবে উদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর।
এর আগে গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটি জিম্মি করে সোমালি জলদস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দফা স্থান পরিবর্তন করে জাহাজটিকে সবশেষ সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূলের কাছে নোঙর করে রাখা আছে।
গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জিম্মি করে সোমালি জলদস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দফা স্থান পরিবর্তন করে জাহাজটিকে সবশেষ সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূলের কাছে নোঙর করে রাখা আছে।
৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
তিনি জানান, জলদস্যুরা যোগাযোগ শুরু করেছে। আলোচনার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপুর্ণ উপায়ে নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে আগ্রহী মালিক পক্ষ। জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠানেরনপক্ষ থেকে বলা হয়, নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই তারা শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি পরিহার করতে চায়।
এর আগে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছিল, জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের জোরপূর্বক উদ্ধারে প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী। এছাড়াও অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী। তবে তাদের এমন পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করেছে এমভি আব্দুল্লাহর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। তারা এ সংকটের সমাধান চান সমঝোতার মাধ্যমে।
ভারত মহাসাগর থেকে বাংলাদেশি জাহাজ ও এর ২৩ নাবিককে জিম্মির ৯ দিনের মাথায় মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
জলদস্যুদের পক্ষ থেকে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরুকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। মালিকপক্ষ-বিমাকারী প্রতিষ্ঠান ও জলদস্যুদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দুপক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে বলে আশা করেন তিনি।
নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অভিযানের প্রস্তাবে সরকার ও মালিকপক্ষ রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম। একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে তিনি বলেন, এখানে হতাহতের আশঙ্কা থাকার কারণে আমরা এবং বিশেষ করে মালিকপক্ষ এ বিষয়ে সম্মত হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে অতীতে যেভাবে এটা সমাধান হয়েছে, সেভাবে আমরা সমাধান করব। আমরা সেই পথেই আমরা এগোচ্ছি।
একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :