অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ও স্নেহভাজন মোহাম্মদ হানিফের ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ সোমবার। পুরান ঢাকায় ১৯৪৪ সালের ১ এপ্রিল জন্ম নেন মোহাম্মদ হানিফ। আবদুল আজিজ এবং মুন্নি বেগমের কনিষ্ঠ সন্তান তিনি।
এদিকে মোহাম্মদ হানিফের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, মেয়র হানিফ স্মৃতি সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তার কর্মময় জীবন স্মরণ করে আজিমপুর কবরস্থানে মরহুমের কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া মাহফিল ও ‘অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ’ ইত্যাদিসহ নানাবিধ কর্মসূচি নিয়েছে।
নন্দিত এই নেতার একমাত্র পুত্র সংসদ সদস্য (এমপি), আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের প্রথম নির্বাচিত সফল মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি পিতার জন্মবার্ষিকীতে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকার প্রখ্যাত পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাজেদ সরদারের কন্যা ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে ১৯৬৭ সালে মোহাম্মদ হানিফ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। পুত্র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জাতীয় সংসদে ঢাকা-৬ আসনের সদস্য।
জীবনের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল। ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পান। এ সময় ৬ দফা মুক্তির সনদ প্রণয়ন ও প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সব আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ হানিফ।
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু তার ঢাকা-১২ আসন ছেড়ে দেন এবং মোহাম্মদ হানিফ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে জাতীয় সংসদে হুইপেরও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৪ সালে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তারই নেতৃত্বে ৯৬-এর মার্চে ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে ৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ হানিফ। যা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলা হয়। এ সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানবঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন মোহাম্মদ হানিফ। গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মক আহত হন মোহাম্মদ হানিফ এবং দেহের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য স্প্লিন্টার ঢুকে পড়ে। দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করে ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাতে ৬২ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :