টানা কয়েক দিনের প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা আর প্রকৃতিতে বাতাসের উপস্থিতি না থাকায় পরিস্থিতি দিন দিন হচ্ছে ভয়াবহ। প্রখর রোদের ঘাম ঝরানো তাপমাত্রার কারণে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছেন চরম বিপাকে। সবুজ শ্যামল বাংলার বুকজুড়ে যেন মরুভূমির লু হাওয়া। আর সেই হাওয়ায় ঝলসে যাওয়ার মতো অবস্থা।
চলতি মৌসুমের অতি তীব্র তাপপ্রবাহে সারা দেশের মতো দুর্বিষহ সময় পার করছেন ইটপাথরের নগরে বসবাস করা রাজধানীবাসীও। অতিরিক্ত আর্দ্রতা আর বাতাস কম থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী ২৭, ২৮ এপ্রিলের দিকে তাপমাত্রা আরও বাড়ার।
জ্বলেপুড়ে ছারখার এই অবস্থায় অনেকেরই একমাত্র আশ্রয়স্থল গাছের ছায়া। যেখানেই একটু ছায়া মিলছে সেখানেই দেখা মিলছে পরিশ্রান্ত মানুষের। পথের ধারের আখের রস আর শরবতের দোকানেও উপচেপড়া ভিড়। এক দুই গ্লাসেও গলা ভেজানো দায়।
পলটনে জুনায়েত হোসেন নামে এক রিকশাচালক বলেন, গরমে কয়েক দিন ধরেই অবস্থা খুব খারাপ। এই গরমে গাড়ি চালানো যায় না। কিন্তু না চালিয়েও তো উপায় নেই। জীবিকার প্রয়োজনে তীব্র গরমের মধ্যেও বাধ্য হয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।
গরমের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে ঢাকার গণপরিবহনেও। সাধারণত সবসময় ঢাকার বাসগুলোতে যাত্রীর আধিক্য দেখা যায়। তবে আজ দুপুরের দিকে বেশিরভাগ বাসই প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে। যাত্রীরা বলছেন, গরমে বাসের ভেতরে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছাদের টিন থেকে গরম নেমে আসে। অনেকে বিকল্প উপায়ে বা রোদ চড়া হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছান। দুপুরের সময় একান্ত বাধ্য না হলে কেউ বাসে চড়ছেন না।
আলী ইমাম নামে এক পথচারী বলেন, গরমে অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ২ বা ৩ গ্লাস শরবত খেলেও তৃষ্ণা মিটছে না।
ঢাকা উদ্যানে অবস্থিত জিহান জেনারেল স্টোরের মালিক বলেন, বাইরে প্রচণ্ড রোদ, মানুষ খুব একটা বের হয় না। আগে এ সময়ে যে বিক্রি হতো, সেটি কমে গেছে। তবে, সন্ধ্যার পর বেচাবিক্রি বাড়ে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঢাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আর পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের সব জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
এই গরমের মধ্যে কিছু জায়গার জন্য স্বস্তির খবরও দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামীকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
একুশে সংবাদ/ম.ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :