AB Bank
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

অসহনীয় তাপমাত্রায় স্বস্তি পেতে মধ্যবিত্তরা ভাঙছে সঞ্চয়


Ekushey Sangbad
সালমা আফরোজ
০৮:৫৩ পিএম, ৭ মে, ২০২৪
অসহনীয় তাপমাত্রায় স্বস্তি পেতে মধ্যবিত্তরা ভাঙছে সঞ্চয়

ঈদুল ফিতরের পর থেকেই দেশে চলছিল দাবদাহ। দিনকে দিন তাপমাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। গত দুইদিন বৃষ্টি হওয়াতে গরম কিছুটা কমেছে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলেছেন এক সপ্তাহ থাকতে পারে এই বৃষ্টি। তারপর তো আবার গরম। এই কারণে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা ছুটছে টেবিল ফ্যান আর এসির দোকানে। গরমের কারণে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে। এতে মধ্যবিত্তরা তাদের সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে।

অসহনীয় তাপমাত্রায় স্বস্তি পেতে সচ্ছল মানুষেরা ছুটছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রক (এসি) যন্ত্র কিনতে। গরমের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে অনেকে কিস্তিতেও এসি কিনছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এসি বিক্রি। বেশিরভাগ এসিই যাচ্ছে বাসাবাড়িতে।

বর্তমানে দেশে ওয়ালটন, ইলেক্ট্রোমার্ট, ট্রান্সকম, এসকোয়্যার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই, র‌্যাংগ্স, ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল, মিনিস্টার, ভিশন, এলজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, রোজার ঈদের পর থেকে সারাদেশ এসি বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকায় এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ঢাকার বাইরে জেলা উপজেলা পর্যায়েও এসির বেশ চাহিদা রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ ইউনিট এসি বিক্রি হয়। বছরে এসির বাজার ৬ হাজার কোটি টাকা। এবার বাসাবাড়ির জন্য সাড়ে ৬ লাখ এসি বিক্রি হতে পারে। এদিকে এসির পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে ফ্যানের। বাসাবাড়িতে এক থেকে দুই টন ক্ষমতার এসির চাহিদা বেশি। তবে এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে দেড় টন ক্ষমতার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ইনভার্টার এসি। কম আয়ের মানুষের পছন্দ এয়ারকুলার।

গরমের এ অর্থনীতিতে খরচ বেড়েছে সব শ্রেণীর মানুষের। যার প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের তারল্য থেকে শুরু করে সার্বিক অর্থনীতিতে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, গরমের মধ্যে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে গেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে মূল্যস্ফীতি। এতে করে তাদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। ব্যাংকে সঞ্চয় করে মূলত মধ্যবিত্তরা। তাদের যখন সঞ্চয় কমে যায় তখন জাতীয় সঞ্চয় কমে যায়। ব্যাংক এমনিতে তারল্য সঙ্কটের মধ্যে আছে। এর মধ্যে যদি সঞ্চয় কমে যায় তাহলে তার অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

এসি উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এসি বিক্রি ২০৩০ শতাংশ বেড়েছে। বাসাবাড়ির জন্যই বেশি এসি কেনা হচ্ছে। ঈদের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এসি বিক্রি বাড়ছে। 

বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রে ঘুরলে দেখা যায় এসি বিক্রি বৃদ্ধি কতটা বেড়েছে। যেমন ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান র‌্যাংগ্স ই-মার্টের শেওড়াপাড়ার বিক্রয়কেন্দ্রে গত এক সপ্তাহে ৩০টি এসি বিক্রি হয়েছে। অথচ স্বাভাবিক সময় মাসে তাদের ৩০টির মতো এসি বিক্রি হতো। বিক্রয়কেন্দ্রটির একজন কর্মকর্তা বলেন, এভাবে বিক্রি হতে থাকলে আমাদের কাছে এসির যে মজুত রয়েছে তা কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

প্রাইভেট হাসপাতালের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সম্প্রতি আমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তার রুমে এসি আগে থেকেই ছিল। এখন অতিরিক্ত গরমে আমরা বাড়ির সবাই তার রুমে থাকি। কিন্ত মেয়ে যখন তার স্বামী নিয়ে বেড়াতে আসে তখন আমাদের অসুবিধা হয়। তাই কষ্ট হলেও কিস্তিতে আমার রুমে জন্য দেড় টনের এসি লাগিয়েছে। চার্জার ফ্যান দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় না। এ জন্যই এসি কিনেছি।

ঢাকার মিরপুরবাসী মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ মিনা হোসেন বলেন, তার বোন আমেরিকা থেকে দুই মাসের জন্য বেড়াতে আসায় কিস্তিতে এসি কিনেছেন। কিন্ত তার অর্থনৈতিক অবস্থা বেশি ভাল না হওয়ায় সেই কিস্তির টাকা বোনই অর্ধেক শোধ করেছে। 

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো দোকানেই ক্রেতা উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে দেড় টন ও দুই টনের এসির চাহিদা ও বিক্রি বেশি। ব্র্যান্ড, কার্যক্ষমতা ও কোম্পানিভেদে এসব এসির দাম প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
মালিবাগ থেকে এসি কিনতে আসা বেলাল আহমেদ জানান, ছোটখাটো চাকরি করি তাই বাসায় এসি ব্যবহার করব সেটা গত মাসেও ভাবতে হয়নি। যে ভ্যাপসা গরম শুরু হয়েছে, রাতে ঘুমালে মনে হয় ফ্যানের বাতাস থেকেও আগুন বের হচ্ছে। বাসার সবাই গরম কষ্ট পাচ্ছে। তাই ভাবলাম কিস্তিতে হলেও একটা এসি কিনে ফেলি।

আরেক ক্রেতা ইয়াসমিন আরা বলেন, যে গরম পড়েছে তাতে বাচ্চারা খুব অস্বস্তিতে রয়েছে। বাসায় আব্বা-আম্মাও অসুস্থ। তারা গরমে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাই এসি ছাড়া উপায় দেখছি না। পছন্দ আর দাম মিললে কিনব।

চলতি বছর অনেক বেশি গরম পড়তে পারে, এমন ধারণা আগেই ছিল এসি প্রস্তুতকারকদের। দেশে গত বছর গরমে ব্যাপক চাহিদার কারণে শেষ সময় এসির সংকট তৈরি হয়েছিল। তা বিবেচনা করে এ মৌসুমে এসি উৎপাদন বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। যেমন চলতি মৌসুমের জন্য প্রায় ৩০ শতাংশ এসি উৎপাদন বাড়িয়েছে দেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। ওয়ালটনের এসি পণ্যের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর তাদের প্রায় দুই লাখ ইউনিট এসি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা।

কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ব্র্যান্ডভেদে প্রতিটি এসির দাম ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা বেড়েছে। তবে কেউ কেউ দাম বাড়ায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেড় বছর ধরে ডলার–সংকটের কারণেই মূলত এসির দাম বেশি বেড়েছে। এ সময়ে প্রতিটি এসির দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে।

এলিট হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূর এ আলম বলেন, আগামী চার–পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত এসি বেচাকেনা চলবে। তবে লম্বা সময় ধরে দাবদাহ থাকলে এসির চাহিদা আরও বাড়বে। তখন বাজারে এসির কিছুটা সংকটও দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সঙ্গে আর্দ্রতা বেশি থাকায় সব জায়গায় ভ্যাপসা গরম বিরাজ করছে। তাই সাধ্যের মধ্যে এসি কিনতে ক্রেতারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইলেকট্রনিকসের বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে।

চীনের তৈরি গ্রি ব্র্যান্ডের এসির বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রো মার্টের রিটেইল সেলসের ইনচার্জ মোহাম্মদ মামুন মিয়া বলেন, এসির বাজারে গ্রির চাহিদা সবসময়ই বেশি। তবে দাবদাহের কারণে গত ১০ দিনে এসির বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হওয়ায় ইনভার্টার এসির চাহিদা বেশি। এখন আর ক্রেতারা নন ইনভার্টার কিনতে চান না। একটি গ্রির এক টনের নন ইনভার্টার এসি ৬৬ হাজার ৯৯০ এবং ইনভার্টার ৬৯ হাজার ৯৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এসির পরিবেশক প্রতিষ্ঠান সরকার এন্টারপ্রাইজের শেয়ারহোল্ডার মো. রাজু বলেন, বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এসির চাহিদা বেড়ে গেছে। সাধারণ সময়ে দিনে ৪ থেকে ৫টি বিক্রি হতো। এখন দেখা যাচ্ছে, কখনও এক ঘণ্টার মধ্যেই ৪ থেকে ৫টি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। অনেকে দরদাম দেখে যাচ্ছে, পরবর্তী সময়ে এসে কিনে নেবেন বলেও কথা বলে যাচ্ছেন।

 

একুশে সংবাদ/সা.আ

সর্বোচ্চ পঠিত - জাতীয়

Link copied!