দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তবেু তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়নি। তাই এই মুহূর্তে আসনটি শূন্য ঘোষণার সুযোগ নেই। যে কারণে আরও অপেক্ষা করবে সংসদ সচিবালয়। তবে জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট থেকে ওই আসনের সব তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যু, পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো আসন খালি হলে সংসদ সচিবালয় থেকে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ওই আসনটি শূন্য (মৃত্যুর তারিখ থেকে) ঘোষণা করা হয়। পরে গেজেটের কপি পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে। নির্বাচন কমিশন ওই শূন্য আসনে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য মৃত্যুর ঘটনা ও আনোয়ারুল আজীম আনারের ‘মৃত্যুর’ ঘটনা এক নয়। অতীতে যেসব সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন বা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের মরদেহ পাওয়া গেছে, দাফন বা সৎকার হয়েছে। কিন্তু ভারতে ‘হত্যাকাণ্ডের’ শিকার হওয়া আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর ঘটনা কোনো সোর্স থেকে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি, এমনকি কবে মারা গেছেন সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অবশ্য আনারের হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশের দিনই (২২ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। এমনকি আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল ভারতের সরকার বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ওই সংসদ সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। এ অবস্থায় ওই সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করবে সংসদ সচিবালয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হলে সংসদ থেকে ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, সংসদ সদস্য আনারের ঘটনাটি ব্যতিক্রম। অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সামনে কোনো নজির নেই। কার্যপ্রণালী বিধিতেও এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। এজন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠেয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের আগেই একটি সুরাহা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের প্রসঙ্গ টেনে স্পিকার বলেন, তাদের হত্যার বিষয়টি দৃশ্যমান ছিল। তাদের ডেডবডি পাওয়া গেছে এবং জানাজা হয়েছে। সেই হিসাবে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন সরকারের পক্ষ থেকে না জানালেও সংসদ নিশ্চিত হয়েছিল তারা মারা গেছেন। কারণ সবই চোখের সামনে ঘটেছিল। কাজেই ওই ঘটনার সঙ্গে এটা মেলানোর সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, এখানে সমস্যা হচ্ছে, তার দেহ পাওয়া যায়নি। তাই এখনো আমরা অপেক্ষা করছি। আমাদের কোনো একটা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে হবে। ওনার মৃত্যুসনদ বা কোনো কাগজ আমাদের কাছে আসতে হবে, যেখানে প্রমাণ হবে ওনি মারা গেছেন, সেটা আসতে হবে। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। আনারের আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা ও আলোচনা চলছে। আগামী ৫ জুন সংসদ অধিবেশনের আগে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে, সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানান স্পিকার।
এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসন শূন্য ঘোষণা করা না হলেও জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট থেকে ওই আসনের তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। সংসদের ওয়েবসাইটে আসন, সংসদ সদস্যের পাসপোর্ট সাইজের ছবি, তার নাম, রাজনৈতিক দলের বা স্বতন্ত্র নাম ও নির্বাচনী এলাকা উল্লেখ থাকে। নামের ওপর ক্লিক করলে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানাসহ আরও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে ওই আসনের সংসদ সদস্য সম্পর্কে এই মুহূর্তে কোনো তথ্য নেই বলে জানা গেছে।
একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :