মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী যেতে না পারার বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে
বুধবার (৫ মে) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে কর্মী যান, এটা স্বাভাবিক। সরকার আইন, সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার পরও কেউ কেউ দালাল ধরে যান। কিন্তু এবার মালয়েশিয়া পাঠানোর ক্ষেত্রে কেন এত মানুষ বিড়ম্বনায় পড়ল, সেটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যখনই সব ঠিক করা হয়, লোক পাঠানোর জন্য তখনই দেশের ও মালয়েশিয়ার এক শ্রেণির ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী তড়িঘড়ির চেষ্টা করে। ফলে জটিলতা ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের চাকরি ও কর্ম কিছুই ঠিক থাকে না।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘কিছু মানুষ আছে, দ্রুত তড়িঘড়ি করে যেতে চায়। নিয়ম মানতে চান না। মালয়েশিয়ার ঘটনায় দায়ী যে বা যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে ‘দুর্গম হাওরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং চলতি বর্ষায় হাওর উন্নয়ন ও বাঁধ সংস্কারে কোন কোন কাজ সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে তা জানতে চান হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।
প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ঝুঁকি মোকাবিলার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। সে লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট বিপর্যয়গুলো, যেমন লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড়, আকস্মিক বন্যা এবং উপকূল, হাওর ও চরাঞ্চলের বন্যা বিবেচনায় নিয়ে দুর্গম অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি ‘দুর্যোগ পূর্বকালে বিপর্যয় প্রভাব মূল্যায়ন’ পদ্ধতির প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার।’
‘যার লক্ষ্য হলো, দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট বিপর্যয় সম্পর্কে জ্ঞান এবং তথ্য সংহত করার মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ডিজিটাল রিস্ক ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্ম (ডিআরআইপি) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে দুর্যোগ প্রভাব মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে,’ যোগ করেন সরকারপ্রধান।
এই সংসদ নেতা বলেন, ‘হাওর, জলাভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবহন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমবায় কার্যক্রমকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুমিল্লা অঞ্চলভিত্তিক ফলিত ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল প্রণয়ন করে থাকে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে বার্ড উপকূল, হাওর ও চর এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকল্পে বার্ড বরিশাল, চট্টগ্রাম (পার্বত্য এলাকা ব্যতীত) ও সিলেট বিভাগে আঞ্চলিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবে।’
‘দারিদ্র্য দূরীকরণে পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন মডেল ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে টেকসই পল্লী উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জামালপুর ও রংপুর এ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে,’ বললেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘জলাভূমি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য হাওর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ দেয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উন্নত প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও ব্রডকাস্টিং সেবা সম্প্রসারণের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকা, দুর্গম চরাঞ্চল ও বিভিন্ন দ্বীপসহ দেশব্যাপী নানা ধরনের ডিজিটাল সেবা দেয়া হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয় বরং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নে দর্শন ধারণ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল যেমন হাওর, নদী চর, উপকূলীয় অঞ্চল, দ্বীপ, পার্বত্য অঞ্চলসহ সব দুর্গম এলাকার উন্নয়নে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বেশকিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ছয়টি হটস্পটে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে হাওর এবং আকস্মিক বন্যা কবলিত নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট অন্তর্ভুক্ত।’
‘যা মোকাবিলায় এ পরিকল্পনায় যেসব কৌশল নেয়া হয়েছে তা হলো: বন্যা থেকে কৃষি ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীসমূহকে রক্ষা, সুপেয় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পানিসম্পদ ও নদী ব্যবস্থাপনা, টেকসই হাওর প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত পানি এবং ভূমিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং হাওরগুলোকে আপন বৈশিষ্ট্যে সংরক্ষণ ও সংস্কার,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য: মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, গত শুক্রবার (৩১ মে) পর্যন্ত দেশটিতে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জন বাংলাদেশি কর্মীকে পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ছাড়পত্র দেয় প্রায় ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪২ জনকে। অজ্ঞাত কারণে বাদ দেয়া হয় ৩২ হাজার কর্মীকে।
কর্মীদের মালয়েশিয়া যেতে জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। কিন্তু বেশিরভাগে কর্মীকেই গুনতে হয়েছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। এরপরও ৩১ মে এর ম্যেধ মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে ৩০ হাজার কর্মীর।
এদিকে, যে সব কর্মী নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাদের তথ্য চেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মন্ত্রণালয়ের নিয়োগানুমতি এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) স্মার্ট কার্ড পাওয়ার পরও অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (৩১মে) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ চিহ্নিত করতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মোহাম্মদ মাহবুবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :