বারিধারায় কনস্টেবল মনিরুল হক হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত কনস্টেবল কাওছার আলী মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন তা পুলিশ জানত বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, কাওছার সুস্থ—চিকিৎসকের দেওয়া এমন সনদের কারণেই তাঁকে দায়িত্বে রাখা হয়েছিল।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে হাইওয়ে পুলিশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন আইজিপি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনিও অনুষ্ঠানে পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, ‘কনস্টেবল কাওছারের মানসিক অসুস্থতার বিষয় ডিপার্টমেন্টের জানা থাকলেও চিকিৎসকেরা তাঁকে সুস্থতার সনদ দেওয়ায় ডিউটিতে রাখা হয়েছিল।’
যদিও ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কাওছারের মানসিক অসুস্থতার তথ্য জানত না ডিএমপি। ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে কাওছার বিরক্ত ছিল বলে রিমান্ডে জানিয়েছেন তিনি। তবে তদন্তেই বের হয়ে আসবে এই ঘটনার মূল কারণ।’
ঘটনার পর থেকেই কাওছারের পরিবারের সদস্যরা দাবি করছিলেন তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাঁর মা মাবিয়া খাতুনের দাবি, ‘কাওছার ভালো ছেলে। তাঁর মাথার সমস্যা আছে। চাকরিতে যোগদানের পর তিনি নেশায় আসক্ত হন এবং সেই সূত্রে অসুস্থ হন। কাওছারকে যতবার মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, ততবারই পুলিশকে জানানো হয়েছে; অথবা পুলিশের তত্ত্বাবধানেই তাঁর চিকিৎসা হয়েছে। তিনি যে মানসিক রোগী, তা তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে।’
মা মাবিয়া খাতুনের অভিযোগ, ‘একজন মানুষ মানসিক রোগী, তা জেনেও তার হাতে কেন অস্ত্র-গুলি তুলে দিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ডিউটি দেওয়া হলো।’ তিনি বলেন, ‘তার সহকর্মীরাও তাঁকে পাগল বলে উত্ত্যক্ত করত, যার কোন বিচার বা প্রতিকার কাওছার পায়নি।’
তবে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে স্বীকার করলেও কাউছার মাদকাসক্ত নন বলে দাবি করেন কাওছারের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথি।
এদিকে, কনস্টেবল মনিরুল হককে গুলি করে হত্যার ঘটনা তদন্তে গুলশানের ডিসিকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে হবে আগামী সাত দিনের মধ্যে। গত রোববার আদালতে হাজির করলে পুলিশ সদস্য কাওছার আলীর ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেন অভিযুক্ত কাওছার আলী।
জানা যায়, কাউছার ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। পরে ২০০৬ সালে তিনি বিয়ে করেন। সংসারে দুটি ছেলে সন্তান আছে। চাকরিরত অবস্থায় ২০১০ সালের দিকে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এরপর থেকে তিনি মানসিক রোগে ভুগছেন।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :