একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে তাই রাজধানী ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ। গত বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও আজ শনিবার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। এবার টিকিট সংকট না থাকলেও প্রায় প্রতিটি রুটেই গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
শনিবার (১৫ জুন) সরেজমিনে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও জনপথের মোড়ে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের ভিড়। প্রায় প্রতিটি কাউন্টারেই টিকিট নিয়ে চলছে দরদাম। দরকষাকষির মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে টিকিট।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদ এলেই ভাড়া বেড়ে যায়। দু-একটি পরিবহন ছাড়া কোথাও টিকিটের সংকট নেই। তবুও কিছু পরিবহন মূল ভাড়ার চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে টিকিট বিক্রি করছে। বেশিরভাগ পরিবহন দ্বিগুণের বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে। একসঙ্গে তিন-চারজন গেলে দামাদামি করে কিছু টাকা কম নিচ্ছে।
বরিশাল রুটে চলাচল করে মিজান পরিবহন। এ রুটের পটুয়াখালীতে অন্য মৌসুমে ভাড়া ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা। তবে ঈদ আসায় গত বৃহস্পতিবার থেকে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় টিকিট কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
এ রুটের যাত্রী আল-আমিন বলেন, দুই ভাই মিলে বাড়ি যাবো। দরদাম করে টিকিট কিনতে হচ্ছে। যে-যেভাবে দরদাম করতে পারে। কেউ ৫০-১০০ টাকা বেশি, কেউ আবার তা কমে দিয়ে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছে। ১৮৫০ টাকা দিয়ে দুটি টিকিট নিতে হয়েছে। একই অবস্থা গ্রিন সেন্ট মার্টিন পরিবহনে বরিশালে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নিচ্ছে ৯০০ টাকা করে।
ফরিদপুরগামী সাউদিয়া পরিবহনের ঈদ মৌসুমে ভাড়া এখন ৮০০ টাকা। অন্য সময়ে এ পরিবহনে ভাড়া ৫০০ টাকা। জাহিদ হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, এ গাড়ি সাতক্ষীরা পর্যন্ত যায়। ফরিদপুর পর্যন্ত যেতেও একই ভাড়া নিচ্ছে।
লক্ষীপুরগামী যাত্রী রবিউল বলেন, ইকোনো বাসে ঈদ মৌসুম ছাড়া ভাড়া ৫০০ টাকা। এখন একদাম ৭৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, গার্মেন্টসে চাকরি করি। ঈদে বাড়ি আসা-যাওয়াতে দুই হাজার টাকা শেষ।
ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে সায়েদাবাদে ইকোনো কাউন্টারের ম্যানেজার পিন্টু বলেন, ঈদ উপলক্ষে মালিকের নির্দেশনায় ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঈদের তিনদিন পর আগের ভাড়া নেওয়া হবে।
১০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে নোয়াখালীর চাটখিলগামী হিমালয় ও আল বারাকা পরিবহনে। অন্য সময় ৫০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার থেকে এ রুটে ভাড়া ৬০০ টাকা করা হয়েছে।
নড়াইলগামী যাত্রী আব্দুস সালাম জানান, যাত্রাবাড়ী-নড়াইল রুটে স্বাভাবিক সময়ে ৪০০-৪৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও এখন ৭০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। দাঁড়িয়ে গেলেও জনপ্রতি দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। যাত্রাবাড়ী টু যশোর রুটে ৫০০-৫৫০ টাকা ভাড়া হলেও এখন জনপ্রতি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা। এমনকি দাঁড়িয়ে গেলেও দিতে হচ্ছে ৭০০ টাকা।
ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কয়েকটি বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদে ২০০-১০০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি, এটা স্বাভাবিক। এখন ভাড়া কম রাখার সুযোগ নেই।
তাদের দাবি, এখন রাজধানী থেকে যে বাসগুলো যাচ্ছে সেগুলো আবার খালি ফিরে আসছে। তাই ক্ষতি পোষাতে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে দ্বিগুণ বা তার বেশি নেওয়ার অভিযোগ নিয়ে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে গ্রিন সেন্টমার্টিন পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ‘কথা বলার সময় নেই’ বলে এ প্রতিবেদককে জবাব দেন।
এক বাস কাউন্টারের সুপারভাইজার রাশেদ বলেন, বিভিন্ন রুটে যে পরিবহনগুলো বিখ্যাত, তাদের টিকিটের দাম কম।তবে সেখানে টিকিট সংকট ও অনলাইনে বিক্রি হয়। যেগুলো দূরপাল্লার লোকাল বাস, যে যার ইচ্ছামতো ভাড়া নেয়।
একুশে সংবাদ/ঢ.প.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :