এ বছরের ২ জানুয়ারি ও ৮ ফেব্রুয়ারি দুই দফা অগ্নিকাণ্ড হয় ওই এলাকায়। এর পর থেকে ওই এলাকায় বড় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশঙ্কা করছিল ফায়ার সার্ভিস। তবে ব্যবসায়ীর কখনোই সে সতর্কবাণী কানে তোলেননি। উল্টো ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত কাজে বাধা এসেছে বিভিন্ন সময়। ওইসব ঘটনার পাঁচ মাসের মাথায় ২৭ জুন দিনগত রাতে অগ্নিকাণ্ডে তিনজনের মৃত্যু হলো।
এর আগে ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় সমবায় মার্কেটে আগুন লেগে একজন নিহত হন। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি রিয়াজুদ্দিন বাজারের নুপুর মার্কেটে, ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাজারের হোটেল সফিনায়, ২০২০ সালে ৩০ আগস্ট চৌধুরী প্লাজায় ও ২০১৯ সালে ১৯ অক্টোবর জহুর হকার্স মার্কেটে আগুন লাগে।
সবশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাত দেড়টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার রিয়াজউদ্দিন বাজারে মোহাম্মদিয়া প্লাজায় আগুন লাগে। মোহাম্মদিয়া প্লাজার ব্রাদার্স টেলিকম নামে একটি দোকান থেকে এ আগুনের সূত্রপাত। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের রেজওয়ান কমপ্লেক্সেও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ অগ্নিকাণ্ডে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন- মো. রেদোয়ান (৪৫) ও মো. শাহেদ (১৮)। দুজনই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা। নিহত অন্যজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাত ১টা ৩৫ মিনিটে খবর পেয়ে আগ্রাবাদ, নন্দনকানন, চন্দনপুরা ও লামারবাজার ফায়ার স্টেশনের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। মার্কেট দুটি পাশাপাশি। ঢোকার রাস্তা সেভাবে নেই, একেবারেই অপ্রশস্ত। এজন্য আমাদের কাজ করতে খুব সমস্যা হয়েছে।’
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবেই বিভিন্ন মার্কেট ও ভবন মালিকরা এভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন। তারা নিজেরা অসচেতন থেকে অনিয়মগুলো করছেন।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘চট্টগ্রামের অন্তত ৪৫টি মার্কেট ও ১০টি বাজার আগুনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। বড় বাজারগুলোতে আবার রয়েছে একাধিক মার্কেট। এসব মার্কেট ও বাজারের বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। বিশেষ করে রিয়াজুদ্দিন বাজার ও আশপাশের মার্কেটগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। কারণ, এখানে একটি মার্কেটের সঙ্গে আরেকটি মার্কেট, মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। এসব বাজারে তিনশ থেকে চারশ মার্কেটই এক ছাদের নিচে।’
‘এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা অধিকাংশ মার্কেট ও বাজারের গলি সরু। পানিও পাওয়া যায় না। ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এসব এলাকায় যন্ত্রপাতি নিয়ে দ্রুত পৌঁছানোও কঠিন। আমরা ব্যবসায়ীদের প্রায় সময়ই সচেতন করি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সচেতন হন না। কেউ হাজার টাকা দিয়ে একটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও কেনেন না।’- যোগ করেন আবদুল মালেক।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হিসাবে, চট্টগ্রাম নগরীতে ৭ হাজারের মতো বহুতল ভবন রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভবন আবাসিক এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভবনগুলোই সবচেয়ে বেশি আগুনের ঝুঁকিতে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, ‘ফায়ার সেফটির কোনো ব্যবস্থা নেই অনেক ভবনে। এছাড়া উচ্চমাত্রার যেসব বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে সেগুলো খোলা থাকাসহ নানান অনিয়মের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর ৭০ শতাংশ মার্কেট, বাজার ও বিপণিবিতান উচ্চ মাত্রার অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব মার্কেট ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় কোনো মার্কেটে আগুন লাগলে সেখানে যন্ত্রপাতি নিয়ে দ্রুত পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :