‘রাজাকারের বাচ্চা’ একটা গালি’র ইতিহাস
‘রাজাকার’ বাংলা ভাষার কোনো শব্দ নয়। এটা একটা ফার্সি শব্দ। যার অর্থ ‘স্বেচ্ছাসেবী’, ‘সাহায্যকারী’। ব্যাপক অর্থে সরকারকে সহায়তাদানকারী। বাংলাদেশে রাজাকার শব্দটি একটি গালি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যেমন-তুই একটা রাজাকার, তুই রাজাকারের বাচ্চা। এখন দেশের সাথে, মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বুঝাতেও অনেকে ‘রাজাকার’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। অনেক মানুষ আবার একটু এগিয়ে -তুই ‘নব্য রাজাকার’ হিসেবেও শব্দটি ব্যবহার করছে।
‘রাজাকার’ বা গ্রাম বাংলার কথ্যভাষায় ‘রেজাকার’ হলো ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত একটি আধাসামরিক বাহিনী। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী বাঙালি এবং উর্দুভাষী অবাঙালি অভিবাসীদের নিয়ে গঠিত হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে স্বাধীনতার জন্যে লড়াইরত মুক্তিবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়।
খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থি কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়।
মে মাসে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান মো. ইউসুফকে রাজাকার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করা হয়। পরবর্তীকালে দেশের অন্যান্য অংশেও রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলা হয়।
প্রথম পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী ছিল এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন। ১৯৭১ সালের ১ জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অধ্যাদেশ জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন। এর নেতৃত্ব ছিল পাকিস্তানপন্থি স্থানীয় নেতাদের হাতে। পরে ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত অধ্যাদেশে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনী সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে রাজাকার বাহিনীর স্বাভাবিক বিলুপ্তি ঘটে।
‘রাজাকার’ নিয়ে আরেকটি ধারণা রয়েছে- ১৯৪০-এর দশকে ভারতের হায়দ্রাবাদের নিজাম ওসমান আলী খানের শাসনামলে একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন কাসেম রিজভী। যে বাহিনীর নাম দেয়া হয়েছিল রাজাকার। হায়দ্রাবাদের সেই সশস্ত্র বাহিনীর অনুকরণেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানের সামরিক সরকার।
একুশে সংবাদ/এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :