AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শেখ হাসিনার নির্দেশে সব করেছি: স্বীকার আনিসুল হকের


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১:২১ পিএম, ১৮ আগস্ট, ২০২৪
শেখ হাসিনার নির্দেশে সব করেছি: স্বীকার আনিসুল হকের

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। দায় স্বীকার করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসান।

এ বিষয়ে জাতীয় পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট নিউমার্কেট এলাকার পাপশ বিক্রেতা শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় এই তিন আসামি রিমান্ডে থাকলেও তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিসংতা সৃষ্টির নেপথ্যে কার কী ভূমিকা ছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শুরুতে তারা সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সাবেক সেতুমন্ত্রীর ওপর দায় চাপালেও এখন দায় চাপাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

তারা বলছেন, ‘আমরা কেবল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছি।’ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে তারা যেসব পরিকল্পনা করেছেন সেগুলো বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে হুকুম দিয়েছেন বলে এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাদের দায় স্বীকার করলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা।

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ চালানো, বিশেষ উদ্দেশ্যে আড়িপাতার যন্ত্র ক্রয়, ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে আয়নাঘর কনসেপ্ট তৈরি এবং বহু মানুষকে গুম-খুন করার বিষয়ে তাদের হাত রয়েছে বলে স্বীকার করেছে। সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

যেসব ঘটনায় মামলা হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-শেয়ার কেলেঙ্কারি, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ-নিধন, আড়িপাতার যন্ত্র পেপাসাস সফটওয়্যার ক্রয়, আয়নাঘর কনসেপ্ট এবং অসংখ্য গুম-খুনসহ নানা আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রিমান্ডে থাকা আসামি সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তারা তিনজনই এখন নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হেফাজতে রিমান্ডে আছেন।

anisul haque

এ দিকে যে মামলায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে সেই মামলার এজাহার সংশোধন করা হচ্ছে। মামলার বাদী শনিবার (১৭ আগস্ট) সংশোধনী এজাহার থানায় জমা দিয়েছেন। পরে সেটি আদালতে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ডিএমপি নিউমার্কেট থানায় দায়ের হওয়া হকার (পাপোশ বিক্রেতা) শাহজাহান আলী হত্যা মামলায় গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) গ্রেপ্তার করা হয় সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে। বুধবার (১৪ আগস্ট) তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আদালত থেকে সরাসরি তাদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার (১৬ আগস্ট) জিয়াউল আহসানকে একই মামলায় আদালতে হাজির করে তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনজনই এখন ডিবি হেফাজতে পুলিশের রিমান্ডে আছেন।

সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং জিয়াউল আহসানকে দুটি টিমের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একটি টিমে আছেন নিউমার্কেট থানার ওসির নেতৃত্বে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা। তারা মূলত থানা পুলিশের সদস্য। অপর একটি টিমে আছেন ডিএমপি সদর দপ্তর এবং ডিবির কর্মকর্তারা। এই টিমটি করা হয়েছে মূলত উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। জুনিয়র টিম কেবল মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তারা মামলার এজাহারে বর্ণিত অভিযোগের বাইরে কোনো বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন না। আর সিনিয়র টিমটি জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কেবল মামলার বিষয়বস্তুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে ডিবির বেশিরভাগ পদস্থ কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হওয়া এবং নতুন আদেশপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা এখনো যোগদান না করায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ সম্ভব হয়নি। প্রভাবশালী আসামি হওয়ায় কেউ কেউ তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয় পাচ্ছেন।

salman F

জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামিরা কী ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, আনিসুল হক বেশির ভাগ সময় হাসছেন। বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের যে গাইডলাইন দিতেন আমি সেই গাইডলাইন ফলো করেছি মাত্র। হত্যা মামলায় কেন আমাকে রিমান্ডে এনেছেন? যারা সরাসরি কিলিংয়ে অংশ নিয়েছিল তাদের ধরেন।’

জিয়াউল হক বলেছেন, ‘আমি তো কোনো ইউনিটের ইনচার্জ ছিলাম না। আমি সরকারে টপ অর্ডারের নির্দেশে কাজ করেছি।’ তার কাছে তদন্তসংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি তো এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার)-এর মহাপরিচালক ছিলেন। আড়ি পেতে মানুষের প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন। আপনার নির্দেশেই বিরোধী মতের অনেককে আয়নাঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন অনেকে।’ তখন বলেন, ‘আমি তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেছি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। যে আয়নাঘরের কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমাকেও আট দিন রাখা হয়েছে। এরপর আমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।’

জানা যায়, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শত শত নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হন। বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ডের মিশন বাস্তবায়ন করতে সারা দেশের র‌্যাবের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত কতিপয় কর্মকর্তাকে ব্যবহার করতেন জিয়াউল আহসান। ছাত্র আন্দোলনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কয়েকজন মন্ত্রীর ফোনালাপ রেকর্ডের সারাংশ গণভবন থেকে উদ্ধার হয়। তাতে আন্দোলন দমনে ইন্টারনেট বন্ধসহ নানা কৌশলের তথ্য উঠে আসে।

jiaul

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জিয়াউল আহসান অনেকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড করতেন। বিশেষ করে বিএনপির নেতাদের কল রেকর্ড করে সেগুলো শুনতেন। কোটা সংস্কারের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৮ জুলাই থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করা হয়। পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ডাটা সেন্টারগুলো বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। কয়েকটি ডাটা সেন্টারে হুমকি দিয়ে বন্ধ করেন জিয়াউল আহসান।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, রিমান্ডে থাকা তিন আসামিকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আরও অনেক মামলা হবে। তারা কয়েকদিন রিমান্ডে থাকবেন। তাই রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না।

যে মামলায় সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক এবং জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে মামলার বাদী আয়শা বেগম বলেন, যখন মামলাটি হয় তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। পুলিশ এজাহার লেখার সময় তার ছেলে হত্যার পেছনে ইচ্ছাকৃতভাবে অজ্ঞাতনামা কোটাবিরোধী জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করে। অথচ তার ছেলে মারা গেছে পুলিশের গুলিতে। এজাহার লেখার পর তাকে পড়ে শোনায়নি। ছেলে হারানোর শোকে তিনি কাতর থাকায় সেই সুযোগে পুলিশ এজাহারে স্বাক্ষর নেয়। পরে এজাহারটি পড়ার পর ত্রুটি চোখে পড়ে বলে জানান তিনি।

বিষয়টি থানার ওসিকে জানানো হলে তিনি এজাহার সংশোধনের প্রস্তাব দেন। সে অনুযায়ী শনিবার থানায় গিয়ে সংশোধনী এজাহার জমা দিয়েছি। সংশোধনী এজাহারে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কথাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন পুলিশের দায়িত্ব দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা।

নিউমার্কেট থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা কেবল মামলার অভিযোগের বিষয়েই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার বাদী যে সংশোধনী এজাহার থানায় জমা দিয়েছেন তা ইতোমধ্যে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/দ.ই/এনএস

Link copied!