পেকুয়া ও কুতুবদিয়ায় মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে পূজার প্রস্তুতি, কারিগরদের রং-তুলির আঁচড় দেওয়ার কাজ শেষ, ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা
কক্সবাজারের পেকুয়ায় ও কুতুবদিয়া উপজেলায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার গত বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এখন মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে পূজার প্রস্তুতি। প্রায় সব মণ্ডপে প্রতিমার অবকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। কিছু কিছু মণ্ডপে শেষ হয়েছে রং-তুলির আঁচড় দেওয়ার কাজ। আগামী মঙ্গলবার দেবীর বোধন। পরদিন বুধবার দুর্গা দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা হবে।
৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকালে উপজেলার বিশ্বাস পাড়া, শীলপাড়া, বারবাকিয়া হরি মন্দির এবং ৭ অক্টোবর (সোমবার) সকালে বড়ঘোপ বাজার কুতুবদিয়া কেন্দ্রীয় কালি মন্দিরে গিয়ে দেখা যায় প্রতিমা তৈরী শেষ হয়েছে। চলছে মণ্ডপ তৈরি, আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জার কাজের দৃশ্য।
পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী,উপজেলার ৩টি ইউপিতে মোট ৯টি মণ্ডপে পূজার প্রতিমা সজ্জিত করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ৯টি মণ্ডপের মধ্যে ৬টিতে আয়োজন হয় প্রতিমা পূজা বাকি ৩টিতে হবে ঘট পূজা। ৬টি প্রতিমা পূজা ও ৩টি ঘট পূজার মধ্যে শিলখালী ইউপিতে ২টি প্রতিমা পূজা, বারবাকিয়া ইউপিতে ২টি প্রতিমা পূজা ১টি ঘট পূজা, পেকুয়া সদর ইউপিতে ২টি প্রতিমা পূজা ২টি ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হবে। মণ্ডপগুলোর মধ্যে শিলখালী শিলপাড়া সার্বজনীন হঁরি মন্দিরে প্রতিমা পূজা। শিলখালী শিলপাড়া বিষ্ণু মন্দিরে প্রতিমা পূজা।
বারবাকিয়া ইউনিয়নে শ্রী শ্রী লোকনাথ বাবার মন্দিরে প্রতিমা পূজা, বারবাকিয়া ইউনিয়নে উত্তর নাথ পাড়া হরি মন্দিরে প্রতিমা পূজা। বারবাকিয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে ঘট পূজা। পেকুয়া সদর কেন্দ্রীয় সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা পূজা। পেকুয়া সুশীল পাড়া সার্বজনীন মন্দিরে প্রতিমা পূজা। ডাক্তার রনধীর বিশ্বাস এর বাড়ি ঘট পূজা। রূপক বিশ্বাস এর বাড়ি ঘট পূজা।
এদিকে কুতুবদিয়া উপজেলায় প্রতিবছর উপজেলায় মোট ৪৫ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হয় তার মধ্যে ঘট ৩১টি এবং ১৪টি প্রতিমা। এবার প্রতিমা পূজা ১২টি ও ঘট ৩২ টি। হচ্ছে না দুই মন্দিরে প্রতিমা পূজা এরমধ্যে শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা মিমাংসা না হওয়ায় পূজা উদযাপন বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে, পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকায় হচ্ছে না দক্ষিণ ধুরুং নাথ পাড়া বিমল নাথের দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা পূজা।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রতিমা সজ্জিত করার কাজ শেষ করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শেষ মুহূর্তে পূজা উদযাপনে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। আগামী ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৩ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গাপূজা।
পেকুয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুমন বিশ্বাস বলেন, উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে আমাদের পূজা উদযাপন করা হবে। উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কুতুবদিয়া বড়ঘোপ কেন্দ্রীয় কালি মন্দিরে সভাপতি শ্রী জগদীশ চন্দ্র শীল বলেন, বাঁশখালীর রুবেল শিল্পী রবিবার থেকে প্রতিমা রং করা শুরু করেছিলেন। সোমবার রং করা, বস্ত্র পরিধানসহ প্রতিমা তৈরির যাবতীয় কাজ শেষ করে চলে গেছেন বলে জানান তিনি।
কুতুবদিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ভোলা নাথ জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে উপজেলার পূজা মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি কাজ। যা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এদিকে, নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এপর্যন্ত কুতুবদিয়ায় বিশৃঙ্খলা হয়নি। আশা করি এখনো হবে না।এছাড়া, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা আওতায় থাকবে বলে জানান তিনি।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাদাত হোসেন জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং পূজা উদযাপন পরিষদের সংশ্লিষ্টদের সাথে প্রশাসনিকভাবে কয়েকদফা বৈঠক করা হয়েছে। এরমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ থেকে শুরু হবে যৌথ টহল।পুলিশ,আনসার, ব্যাটেলিয়ান, গ্রাম পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস টিম,স্বেচ্ছাসেবক টিম, মেডিকেল টিম এবং নৌবাহিনী মাঠে কাজ করবে। এছাড়া, পূজামণ্ডপে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
এদিকে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সিরাজুল মোস্তফা জানান সেনাবাহিনী, পুলিশ,আনসার, গ্রাম পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পূজামণ্ডপে কোন ভাবে অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে লক্ষ্য নিয়ে পুলিশের টহল টিম থাকবে। পূজামণ্ডপ ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন চৌধুরী বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোন ভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাতে না পারে সেই জন্য পূজামণ্ডপে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল টিম থাকবে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :