ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ খাত। সাড়ে ১৫ বছরে কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই কোনো কাজে আসেনি। সরকারি হিসাবে উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হলেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি। এমনকি দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত, তারও সঠিক কোনো হিসাব নেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে। সবার জন্য সরবরাহ নিশ্চিত না করে শুধু সংযোগ দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়নের কৃতিত্ব জাহির করা হয়েছে।
আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেটের লুটপাটে বিধ্বস্ত বিদ্যুৎ খাত। বিগত কিছু দিন যাবত আমরা দেখছি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যকার সৃষ্ট সংকট জনগনকে নতুন করে ভোগাচ্ছে। এই সংকট সমাধানে আরইবি ও পিবিএসকে নতুন করে রিফর্ম করতে হবে বলে দাবি করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি - এবি পার্টি।
২১ অক্টোবর ২০২৪ ইং সোমবার বিদ্যুৎ সেক্টরের লুটপাট, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সৃষ্ট সংকট ও সমাধানে করনীয় বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন এবি পার্টির নেতারা।
সম্মেলনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। আরইবি ও পিবিএসএর সংকট নিয়ে কথা বলেন এবি পার্টির সহকারী সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক লে. কর্ণেল (অবঃ) হেলাল উদ্দিন, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন , মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার ফারুক ও গাজী নাসির সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ তার বক্তব্যে বলেন, বিগত সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন পলাতক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। নসরুল হামিদ বিপুকে তিনি একনাগাড়ে এই মন্ত্রণালয়ে রেখেছেন শেখ পরিবারের লুটপাট অব্যাহত রাখতে। সেই অব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতাই এখনো চলছে। আমরা দেখলাম ফ্যাসীবাদের পতনের পর নতুন এক সংকট হাজির হলো পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে। খবর নিয়ে আমরা জানতে পারলাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই তাদের কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ ব্ল্যাক আউটের মতো কিছু কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এমতাবস্থায় আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো পল্লী বিদ্যুতের আন্দোলনকারীদের মধ্যে কারা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং কারা ন্যায় সংগত দাবি করছে এগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সংকট সমাধানে সমস্যা চিহ্নিত না করে একতরফা ভাবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঢালাও গ্রেফতার প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা তৈরি করবে এবং সংকট ঘনীভূত হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিতরণের সাথে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জড়িত কিন্তু মালামাল ক্রয়, লাইন নির্মাণ, ক্রয় সংক্রান্ত সকল টেন্ডার, প্রকল্প সংক্রান্ত সকল কাজ এসব কিছুই করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। গ্রাহক সেবার কোন অংশেই আরইবি জড়িত না থাকলেও আরইবির সরবরাহকৃত মালামাল ও লাইনের উপরই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে নির্ভর করতে হয়। এমতাবস্থায় গ্রাহক ভোগান্তির সকল দায় এসে পরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপর। আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম বিবেচনায় আমরা দাবি করছি একই কর্মকান্ড চালাতে দুইটি প্রতিষ্ঠান কতটা যৌক্তিক তা বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা মনেকরি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে একত্রে নতুন করে রিফর্ম করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি ও সাবোটাজকে আমাদের পৃথক করতে হবে। আমরা মনে করি বিদ্যুৎ খাতকে বিশৃঙ্খল করতে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কিছু অংশ ও কিছু আমলা ইন্ধন যোগাচ্ছে। আমরা সরকারকে বলবো পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি সমুহ বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একত্রীকরণ করতে হবে এবং পল্লী বিদ্যুতে অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকরী স্থায়ীকরণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব সফিউল বাসার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, মহানগর উত্তরের যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রব জামিল, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, আমেনা বেগম, পল্টন থানা আহবায়ক আব্দুল কাদের মুন্সি ও সদস্য সচিব আব্দুল ওয়াদুদ মোল্লা রনি সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :