সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরও প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশি কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে পারছেন না। তাদের অভিযোগ, নির্মাণ ও মৎস্য খাতে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ কোরিয়া অন্য দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে, অথচ বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি তেমন মনোযোগ নেই। সঠিক প্রচারণার অভাবে নিয়োগ কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি আসছে না, আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে দালাল চক্র।
সৌদি আরবে কাজ শেষে দেশে ফিরে আসেন মুসা জামির। দক্ষিণ কোরিয়ায় ভালো বেতনের আশায় তিনি কোরিয়ান ভাষা শেখা শুরু করেন এবং দক্ষতা পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বছরের পর বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুযোগটি এখনও অধরাই রয়ে গেছে।
মুসা জামির বলেন, আমি খুব খারাপ অবস্থায় আছি। বর্তমানে ১২ হাজার টাকা স্যালারির চাকরি করছে। এ বেতনে চলা যায় না। ধার-দেনা শোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
কুমিল্লার অনার্স পড়ুয়া তুহিন আলদিন দেড় বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার মৎস্য খাতে কাজের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। তবে কখন সেখানে যাওয়ার সুযোগ মিলবে, সেই অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না।
তুহিন বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ভাই হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন। যারা এই সেক্টরে আছেন, তাদের কেউ কেউ এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ভবিষ্যতে কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”
জুবায়েদ হোসেনের গল্পও প্রায় একই রকম। নিয়োগকর্তা না পাওয়ার কারণে তার স্বপ্ন এখন অনিশ্চয়তার মুখে। তিনি বলেন, “যদি প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা না নেন, তাহলে আমাদের সব আশা এখানেই শেষ হয়ে যাবে।”
প্রতি বছর এমপ্লয়মেন্ট পার্মিট সিস্টেমের (ইপিএস) মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন খাতে কর্মী পাঠায় সরকারি রিক্রুটিং সংস্থা বোয়েসেল। তবে নতুন চালু হওয়া নির্মাণ ও মৎস্য খাতে বাংলাদেশের প্রায় ৩ হাজার কর্মী প্রস্তুত থাকলেও, দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়োগকর্তারা সে সম্পর্কে অবগত নন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সরকারের অবহেলাকেই দায়ী করছেন।
প্রশ্ন হলো, সব যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করা সত্ত্বেও কেনো এই জটিলতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) সহ-ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম কিরণ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া এই সেক্টরগুলো জানে না। আমরা তাৎক্ষনিকভাবে যোগাযোগ করেছি। দক্ষিণ কোরিয়ার যখন যে সেক্টরে লোক নিবে প্রত্যেক কোম্পানি জানবে। ওই দেশের সিস্টেমটাই এমন। এই সিস্টেমে কোরিয়ার সরকার বা বোয়েসেল সরাসরি কাউকে নির্দেশনা দিতে পারে না।
এই অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলছেন, অপেক্ষমাণ এই কর্মীদের পাঠাতে মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা জরুরি। মন্ত্রণালয় যদি উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে বর্তমানে যারা অপেক্ষমাণ আছে তাদেরকে গুরুত্ব দেয়া। তারা এখন কিভাবে যোগদান করতে পারে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে আলোচনা করতে পারে।
গত বছর কাজের খোঁজে দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছেন ২ হাজার ৭৭৯ জন বাংলাদেশি।
একুশে সংবাদ/চ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :