AB Bank
  • ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পোশাক-পেশা-চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন, নারীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৯:১০ পিএম, ৬ মার্চ, ২০২৫
পোশাক-পেশা-চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন, নারীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা। অনেক নারী দাবি করেছেন, এর ফলে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।

নারীরা বলছেন, তারা এমনসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন যা তাদের কাছে নতুন। তারা তাদের পোশাক, পেশা, চলাফেরা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ছেন বলে জানান।

‘অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি‍‍`
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত এক নারী গত তিন বছর ধরে মিরপুরে সন্ধ্যায় একটি চা ও স্ন্যাকসের দোকান চালান। আগে সমস্যা না হলেও এখন মেয়েরা কেন চায়ের দোকান চালাবে, এমন কথা উঠছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান সুমাইয়া আক্তার (ছদ্ম নাম) নামের ওই নারী।

তিনি বলেন, “দোকান চলতে দিলেও বলা হচ্ছে ছেলেরা চা খেতে আসতে পারবে না। দোকানে আড্ডা দিতে পারবে না। এখন কথা বলছেন স্থানীয় কিছু লোক। তারা কোন দিন আবার সালিশ বসান কে জানে!”

ওই নারী ডয়চে ভেলেকে আরও বলেন, “সারাদিন অফিস করার পর বাড়তি আয়ের জন্য বাসার কাছেই আমি দোকানটি দিয়েছি। এখানে নানা ধরনের চা ও স্ন্যাকস বিক্রি করি৷ দোকানটি বেশ জমেও উঠছে। কিন্তু আমি ভয়ে আছি কোন দিন না আবার আমার দোকানটি বন্ধ করে দেয়।”

এমন কেন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন তো একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতি। সবাই মনে করছে তাদের মতোই চলতে হবে। তারা যা বলবেন তাই হবে। যে যেমন চিন্তা করেন সেইভাবেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। বিএনপি মনে করে তারা ক্ষমতায়, জামায়াত মনে করে তারা ক্ষমতায়। ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। কার কাছে প্রতিকার চাইব জানি না। পুলিশকে বললে কোনো কাজ হয় না। এক অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি।”

ঢাবি শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিলা ইয়াসমীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আগে কখনো এমন হয়নি। এখন রাত ৮টার দিকে কলাভবনের সামনে গেলে ছেলেরা প্রশ্ন করে রাতের বেলা এখানে কী করেন? আমি গত কয়েকদিনে কয়েকবার এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে তারা বলে সবাই যেভাবে বলছে সেভাবে চলো। আসলে তারাও এসবের বিরুদ্ধে যেতে চায় না।”

তিনি আরও বলেন, “আবার টি শার্ট, জিন্স পরলে নানা ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। আগে ছিল যে, এরকম ঘটলে আমরা জানতাম প্রতিকার পাওয়া যাবে। এখন তাও পাওয়া যায় না। এর ফলে আমি মানসিকভাবে নাজুক হয়ে পড়েছি।”

তানজিলা বলেন, “একটি নতুন পরিস্থিতির কারণেই হয়তো এরকম হচ্ছে৷ আমরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকার আরেক গৃহিণী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এখন রাস্তায় চলতে ভয় পাই। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণে মনে হচ্ছে রিকশায় চললে কেউ এসে অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার ব্যাগটি নিয়ে যাবে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক নারী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “ধরলাম আপনারা বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন করেছেন, তো ভাই আপনাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে নারীর নিরাপত্তা কোথায়? এখন একদল বলবেন, পর্দা করে চললে মেয়েদের সাথে খারাপ কিছু হবে না। পর্দা করে চলার পরেও অনেক মেয়ের সঙ্গেও খারাপ ঘটনা ঘটেছে এমন উদাহরণ বাংলাদেশে অনেক রয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী পর্যন্ত বাদ পড়েনি। বড়দের কথা বাদই দিলাম, ছোট ফুলের মত শিশুরা পর্যন্ত এইসব অমানুষদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। হাজারো ফুলের মতো শিশুর জীবন এদের জন্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং যাচ্ছে। এখন কি এই ফুলের মতো শিশুদের বলবেন যে তোমরা পর্দা করে চল না বলেই তোমাদের সঙ্গে এমন হয়? দিতে পারবেন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর?”

‘একটা ধর্মান্ধ গ্রুপ ডেভেলপ করেছে‍‍`
নারী অধিকার কর্মী জিনাত আরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, “যেকোনো পরিবর্তনে, দুর্যোগে, যুদ্ধে যে মানুষ প্রান্তিক তাদেরই হেনস্তা হতে হয়। বাংলাদেশে নারীরা প্রান্তিক, তাই তারা এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “একটা রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনে নারীদের অনেক ভূমিকা থাকার পরও তারা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এর কারণ আমরা আগে থেকেই দেখেছি একটা ধর্মান্ধ গ্রুপ ডেভেলপ করেছে এবং তারা মানুষের আবেগ নিয়ে সফলভাবে কাজ করতে পেরেছে। বিশেষ করে নারীবিদ্বেষী ধারণা তারা ধর্মের মোড়কে ফোকাস করতে পেরেছে। সেটা আরও তীব্র হচ্ছে।”

সম্প্রতি ঢাকার লালমাটিয়ায় একটি চায়ের দোকানে দুই তরুণীর ধূমপান করায় কথা কাটাকাটির পর মব হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। পরে পুলিশ ওই দুই তরুণীকে থানার হেফাজতে নিয়ে যায়। তারপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “পাবলিক প্লেসে ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অপরাধ। কেউ যেন ওপেন প্লেসে ধূমপান না করেন।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই কথার প্রতিবাদে নারীরা রাস্তায় নেমেছেন। তাদের কথা, দুই তরুণীকে যারা হেনস্তা করলো তাদের আটক করা হলো না। কিন্তু দুই তরুণীকে থানায় নেয়া হলো।

আর ওই প্রতিবাদে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের কয়েকজনকে নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক ট্রল হচ্ছে। একজনের ছবি দিয়ে তাকে রীতিমতো হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

‘রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙে গেছে‍‍`
মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই বক্তব্য নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য সহায়ক। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে যখন এই ধরনের স্কেপিস্ট বক্তব্য দেওয়া হয় তখন পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “শুধু নারী নয় এখন সমাজের সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ভেঙে গেছে। একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।”

‘নারীরা নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে‍‍`
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এখন যে নারীর জন্য নিরাত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে এটা একটা নতুন পরিস্থিতি। তারা প্যানিকড। তাদের চলাফেরা, পোশাক সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নারীরা নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এটা সববয়সি নারীর জন্য। একটা অনিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পত্রিকা থেকে নারী নির্যাতনের যে তথ্য পাই তার বাইরে এখন প্রচুর ঘটনা ঘটছে। আবার ধরনও পরিবর্তন হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন নারীরা। নারীরা যেহেতু প্রান্তিক, তাই তারা শিকার হচ্ছেন। কারো ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। মনে হচ্ছে একটা নতুন দেশ। যে যেভাবে পারছে তার ইচ্ছা পূরণ করছে।”

মালেকা বানু বলেন, “নারীবিরোধী শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা নারীদের ওপর নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাইছে। তারা চলাফেরায়ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায়। ফলে নারী নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। কিন্তু এটা দেখার কেউ নেই।”

‘সরকার তেমন কিছু করছে না‍‍`
সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিই ভালো না। নারী যেহেতু ভালনারেবল তাই তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ছে। সরকারও তেমন কিছু করছে না।”

পুলিশের বক্তব্য
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নারীর নিরাপত্তাহীনতার কোনো কারণ ঘটেনি। পুলিশ নারী-পুরুষ সবার নিরাপত্তার জন্যই কাজ করছে। তারপরও তারা অনিরাপদ বোধ করলে পুলিশকে জানালে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”

 

একুশে সংবাদ/ঢ.ট/এনএস

Link copied!