AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আনু মুহাম্মদ: মবজাস্টিস বলে কোনো জাস্টিস নাই, এটা তো ভায়োলেন্স


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭:৩৬ পিএম, ১৫ মার্চ, ২০২৫
আনু মুহাম্মদ: মবজাস্টিস বলে কোনো জাস্টিস নাই, এটা তো ভায়োলেন্স

বাংলাদেশে বিভিন্ন স্তরে চলমান অস্থিরতা, উগ্রতা নিয়ে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এবং চিন্তক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

একুশে সংবাদের পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলো—

ডয়চে ভেলে: ৫ আগস্ট পরবর্তী গণতন্ত্রে উত্তরণের যে আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে, গত ছয়-সাত মাসে সেই আকাঙক্ষার বাস্তবায়ন কতটা দেখতে পাচ্ছেন?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: প্রত্যাশার সঙ্গে যে সব কিছু মিলছে তা তো না, অনেক ধরনের অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে, সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আবার চেষ্টাও আছে, প্রতিবন্ধকতাও আছে। সবকিছু মিলিয়ে চলছে।

ডয়চে ভেলে: আন্দোলন সফল হওয়ার পর,গণঅভ্যুত্থান হওযার পর এখন নানা বিভক্তি দেখা দিচ্ছে। বিভিন্ন গ্রুপ, উপ-গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। এর কারণ কী?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কারণ শেখ হাসিনা নিজে। এখানে নানা রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ অংশ নিয়েছে। ছাত্ররা একটা আন্দোলন করছিল। মানুষের ক্ষোভ ছিল। গণহত্যা হলো। তখন সবাই এক হয়ে মাঠে নামলো। এটা কোনো রাজনৈকি ঐক্য ছিল না। একটাই ঐক্য ছিল- শেখ হাসিনা সরকারের পতন বা উচ্ছেদ। কারণ, বছরের পর বছর অগণতান্ত্রিক আচরণ করা হয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি করে অর্থপাচার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের জন্য যারা মাঠে নেমেছেন, তাদের মধ্যে গণতন্ত্রে রূপান্তরকামীরা ছিলেন, একটা অংশ ছিল, যারা গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির আরও বিকাশ চায়। ইসলামপন্থিরা ছিল, ফলে শেখ হাসিনার পতনের পরই ঐক্যটা ঐখানেই শেষ। রাজনৈতিক মতাদর্শের  ভিন্নতার কারণেই ঐক্য থাকেনি। সেটাই এখন প্রকাশিত হচ্ছে।

ডয়চে ভেলে: এই সুযোগে উগ্রবাদ কি মাথাচাড়া দিচ্ছে? কেউ নারীর পোশাক নিয়ে মোরাল পুলিশিং করছে, হিযবুত তাহরীর “মার্চ ফর খেলাফত” করার চেষ্টা করলো...

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: এই গোষ্ঠীগুলো তো আর হঠাৎ করে আকাশ থেকে পড়ে নাই। গত ১০-১৫ বছরে তাদের বৃদ্ধি হয়েছে বেশি। যদি আমরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখি তাহলে দেখবো তাদের তৎপরতা। আওয়ামী লীগের আমলে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হয়। তারপরও তখন তারা পোস্টার লিফলেট ছেড়েছে। এখনো তারা পোস্টার লিফলেট ছেড়ে সমাবেশ করার চেষ্টা করেছে। আগেও প্রশ্ন ছিল, এখনো আছে যে, এদের শক্তির উৎস কোথায়, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রশাসনে তাদের কারা আছে। আরও দেখছি তৌহিদি জনতা। এরা আসলে বৈষম্যবাদী। লিঙ্গ বৈষম্য তাদের একটা মতাদর্শ, ধর্মীয় বৈষম্য তাদের একটা মতাদর্শ, জাতিগত বৈষম্য তাদের একটা মতাদর্শ। আসলে তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শই হলো বৈষম্যের। বর্তমান সময়ে তারা তাদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। তাদের ইসলামপন্থি ধারার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ধারা এটা করতে চাইছে। তারা মাজারে হামলা করছে। তারা অন্য ধর্মের লোকদের নিরাপত্তাহীন করছে। নারী হচ্ছে তাদের আক্রমণের একটা বিশেষ জায়গা। তারা নারীর ওপর কর্তৃত্ববাদ চায় বা নারীর যেকোনো ধরনের সক্রিয়তার বিরোধী। এটা তারা পারছে সরকারের দুর্বলতার কারণে। স্বৈরশাসনের পতনের পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে, গণতান্ত্রিক চিন্তা, মতাদর্শ, সহিষ্ণুতা -এসবের বিরুদ্ধে  তৎপরতা বা কাজকে দমন করতে হয়। স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে হয়। আর সেখানে সরকারের যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। সেই কারণেই এই উগ্রবাদিতা আমরা দেখতে পাচ্ছি।

ডয়চে ভেলে: এটা কি সরকারের কাঠামোগত দুর্বলতা, নাকি এদের (উগ্রবাদী) প্রতি সরকারের দুর্বলতা আছে?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: এই ধরনের অনির্বাচিত সরকারের তো দুর্বলতা থাকে। সে কতদূর করতে পারে? সরকারের ভিতরে যারা আছেন, তাদের রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে তো এগুলো মেলে না। সুতরাং কাঠামোগত দুর্বলতা আছে। আবার হতে পারে এগুলো যারা করছে, তাদের প্রতি ভীতিও থাকতে পারে। অথবা তাদের সমর্থনের ভিত্তি তৈরি করার অক্ষমতা থেকেও এটা হতে পারে। কিন্তু যারা হামলা, হুমকি, মত প্রকাশে বাধা দেয়, তারা সবাই হলো অগণতান্ত্রিক শক্তি। আতঙ্ক তৈরি করা, ভয় তৈরি করা- এটা অগণতান্ত্রিক শক্তির কাজ। গণতন্ত্রের জন্য এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের কাজ। সরকারের সেই দায়িত্ব পালনে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

ডয়চে ভেলে: এখন যদি বলি মব জাস্টিস, নারীর প্রতি সহিংসতা, আবার ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন- সরকার কি তাদের প্রতি কোনোভাবে দুর্বল? বা সরকারকে কি তারা নিয়ন্ত্রণ করছে?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের যে আকাঙক্ষা তৈরি হয়েছে, যে ঐকমত্য হয়েছে বা দেয়ালের গ্রাফিতিতে আমরা যা দেখেছি, সরকারের মধ্যে কারো কারো কথায় অথবা সরকারের ওপর প্রভাব রাখে এমন গ্রুপ বা গোষ্ঠীর কথায় তার বৈপরীত্য দেখা যায়। আবার স্ববিরোধিতাও আছে। এটা সরকারের দুর্বলতা। আর “মবজাস্টিস” বলে তো জাস্টিস নাই। এটা তো ভায়োলেন্স। এখানে জনতা বলতে কিছু নাই। আসলে এটা যারা করে তারা খুবই পরিকল্পিতভাবে করে। তারা একটি গোষ্ঠী। তারা পরিকল্পিতভাবে এগুলো প্রতিবারই করেছে। সরকার তাদের  চাইলেই চিহ্নিত করতে পারে, ব্যবস্থা নিতে পারে। এখন সরকার বলছে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সরকারের সক্রিয়তা আশা করছি।

ডয়চে ভেলে: সরকার মুখে বলছে। সরকার প্রতিবাদ করছে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যারা মাঠে নামছে, তারাও মামলা ও চাপের মুখে পড়ছে। সরকার কি শুধু প্রতিবাদ করবে?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: কারা সহিংসতা তৈরি করে, উত্তেজনা তৈরি করে, ব্যক্তিগত আক্রমণ পরিচালনা করে, উসকানি দেয়- সরকারের পক্ষে তা তো জানা সম্ভব। সরকার জানে, সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আছে। সরকার তো জানতে পারে কারা সহিংসতা করছে, সহিংসতার আহ্বান জানাচ্ছে। সরকার জানার পরও তো  ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকার যদি এগুলোর ব্যাপারে সক্রিয় না হয়, দায়-দায়িত্ব তো সরকারের।

ডয়চে ভেলে: নির্বাচন একটা আকাঙক্ষা। ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে কোনো নতুন সংকট তৈরি হবে? সংস্কারের বিষয় আছে। কিংস পার্টির কথা হচ্ছে। বিচার, গণপরিষদ নির্বাচন, সংবিধান পরিবর্তনের দাবি আছে...

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: যেটাই হোক না কেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে চান না, অস্থিরতা চান না, তারা চাইবেন একটা ন্যূনতম সংস্কার, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার তা করে দ্রুত গণতান্ত্রিক নির্বাচন করে ফেলা। কারণ, এটা  না হলে এখন যে পরিস্থিতি দেশে তৈরি হয়েছে, তাতে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে। বাংলাদেশের জন্য আরও সমস্যা তৈরি হবে।

ডয়চে ভেলে: পুলিশের আচরণে আবারও মারমুখী ভাব দেখছি। তারা শক্তি প্রয়োগ করে ন্যায্য আন্দোলনও দমন করতে চাইছে। এর কারণ কী?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: পুলিশ তো আর স্বাধীনভাবে কাজ করে না। সেটা বিএনপির আমলে হোক, আওয়ামী লীগের আমলে হোক আর এখন হোক। তারা সরকারের  ইচ্ছা এবং নির্দেশেই কাজ করে। অনেক মানুষ অনেক ন্যায্য দাবি নিয়ে আসছেন।  শিক্ষকরা আসছেন, শ্রমিকরা আসছেন, শিক্ষার্থীরা আসছেন। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। আমরা দেখেছি, এই যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষকদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে, শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়েছে। নারী ও শিশুর ওপরও পুলিশের হামলা হয়েছে। কিন্তু যারা সংঘবদ্ধ হামলা করে , সহিংসতা করে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা করে, জোর জবরদস্তি করে তাদের ব্যাপারে পুলিশ নমনীয়তা দেখায়। কিন্তু এর উল্টো হওয়ার কথা ছিল। যারা ন্যায্য দাবি নিয়ে আসবে, তাদের প্রতি সরকার সহানূভূতি দেখাবে, তাদের কথা শুনবে, সমাধানের চেষ্টা করবে। আর যারা সহিংসতা করবে, হিংসা ছড়াবে, জোরজবরদস্তি করবে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এখন তো সরকারের উল্টো যাত্রাই দেখতে পাচ্ছি। এটা গণতান্ত্রিক যাত্রার পথে বড় বাধা।

ডয়চে ভেলে: তাহলে এই যে বৈষম্যহীনতার কথা আমরা বলছি, সেখানে রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠান, যেমন বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ- তারা কি এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে, নাকি সরকারের প্রভাবে সরকারের কথামতো কাজ করছে?

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ: প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো তো দাঁড়ায়নি। শেখ হাসিনার সময় প্রতিষ্ঠানগুলো যে অবস্থায় গিয়েছিল, প্রতিষ্ঠান বলতে কিছু ছিল না, উপরের আদেশে চলতো, সেই অবস্থা থেকে তো এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল, জোর জবরদস্তি করে পদ দখল, কাউকে পদে বসানো, কাউকে নামানো- এগুলো তো চলছে। এগুলোর অবসানে সরকারের সক্রিয়তা আশা করছি। তবে শুধু সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। দেশের মানুষকে সক্রিয় হতে হবে। জনগণের সক্রিয়তা না থাকলে বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের যে আকাঙ্খা, তা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। সেই কারণে জনগণের সক্রিয়তাই শেষ ভরসা।

 

একুশে সংবাদ/ঢ.ট/এনএস

Link copied!