ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চারজন কর্মীকে এমআরটি পুলিশের এক সদস্য শারীরিক ও মৌখিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন মেট্রোরেল কর্মীরা। ফলে আজ (১৭ মার্চ) সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে।
সোমবার (১৭ মার্চ) মধ্যরাতে মেট্রোরেলের একাধিক কর্মী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-এর সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের’ ব্যানারে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয় এবং ৬ দফা দাবি জানানো হয়।
কর্মীদের ৬ দফা দাবি
১. ঘটনার মূল হোতা পুলিশ সদস্য এসআই মাসুদকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের (কনস্টেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. মেট্রোরেল, কর্মী ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গঠন করতে হবে।
৩. এমআরটি পুলিশ বাতিল করতে হবে।
৪. স্টেশনে কর্মরত সব কর্মীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ও অনুমতি ছাড়া কেউ যেন স্টেশনের পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. আহত কর্মীর চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলা হয়, "আমাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মেট্রোরেলের সব স্টাফ কর্মবিরতি পালন করবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি, যেন স্টেশন ও কর্মপরিবেশ নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল থাকে।"
মেট্রোরেল কর্মীরা জানান, "আজ (১৭ মার্চ) সকাল থেকে আমরা ট্রেন চালাবো না। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হলে তবেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে। ঘটনাটি সম্পর্কে হেড অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত আছেন এবং এ বিষয়ে তারা ইতোমধ্যে সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন।"
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, "গতকাল (১৬ মার্চ) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে দুজন মহিলা কোনো প্রকার পরিচয়পত্র ছাড়াই সিভিল পোশাকে বিনা টিকিটে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন। স্টেশনে পৌঁছে তারা সুইং গেট ব্যবহার করে পেইড জোন থেকে বের হতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী (সিআরএ) নিয়ম অনুযায়ী তাদের পরিচয় জানতে চান। এতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে তর্কে লিপ্ত হন এবং এমআরটি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে চলে যান।"
পরবর্তীতে দুইজন এপিবিএন সদস্যও একইভাবে সুইং গেট ব্যবহার করে সেটি না লাগিয়ে চলে যান। বিষয়টি জানতে চাইলে তারা আগের ঘটনার জের ধরে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে সিআরএ-এর সঙ্গে তর্ক শুরু করেন।
একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকা সিআরএ-এর কাঁধে রাইফেল দিয়ে আঘাত করেন এবং আরেকজন টিএমও-এর শার্টের কলার ধরে তাকে জোরপূর্বক এমআরটি পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং বন্দুক তাক করে গুলি করার হুমকি দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সময় উপস্থিত স্টেশন কর্মী ও যাত্রীরা ওই পুলিশ সদস্যদের হাত থেকে টিএমও-কে রক্ষা করেন। আহত কর্মীকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, "এ ধরনের ঘটনা মেট্রোরেলের কর্মপরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে মেট্রোরেল পরিচালনা সম্ভব নয়।"
একুশে সংবাদ// ঢ.প//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :