১৯৭১ সালে বিভীষিকাময় দিনগুলো বাঙালিকে তার বন্ধু এবং শত্রু দুটোই চিনিয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের হায়েনাদের অমানবিক অত্যাচার আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন এবং অন্নহীন করেছিল বাঙালিদের। নরপিশাচের মতো হত্যা খেলায় মেতে উঠেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সেদিন সেই আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন, ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভারত। এক কোটির অধিক শরণার্থীকে সেদিন খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছিল ভারত। মুক্তিযোদ্ধাদের সেদিন ট্রেনিং ও অস্ত্র সরবরাহ করেছিল বন্ধুদেশ ভারত। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধে সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতা ও সকল বাধাবিপত্তি অগ্রাহ্য করে এক হয়ে বাঙালির পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। যার কারণে মাত্র নয় মাসে জয় পেয়েছিল বাঙালিরা, গড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। দুই দেশের মানুষ যখন তাদের ইতিহাস-ভূগোল-সংস্কৃতির এক অপূর্ব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সম্পর্ককে এক বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছে দিতে চলেছিল, ঠিক তখনই একদল কুলাঙ্গার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং এর মাধ্যমে ক্ষমতার দখল নেয় ৭১-এর পরাজিত শক্তি। ক্ষমতায় এসেই তারা শুরু করে ভারত বিরোধিতা এবং জাগিয়ে দেয় সাম্প্রদায়িক উসকানি। যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম এবং বিনষ্ট হয় একাত্তরের মিলিত রক্তস্রোতে পাওয়া বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক শাসন এবং সামরিক সমর্থনপুষ্ট সরকারের স্টিমরোলারে ধ্বংস হয় বাঙালি জাতিসত্তার সকল মূল্যবোধ, ঐতিহ্য এবং অধিকার।
দীর্ঘ ২১ বছর অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ক্ষমতায় আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের সম্পর্ক পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে বাড়িয়ে দেন বন্ধুত্বের হাত। যার অন্যতম ফল হিসেবে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি হয়। সে সময় বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও সাধিত হয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ভারতের সহায়তা ছাড়া অসম্ভব ছিল। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নতুন নতুন যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই সময় দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু তা আর বেশি দিন সম্ভব হয় না। আবারও শুরু হয় ষড়যন্ত্র। ফলে দুই দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হতে শুরু করে। এই সম্পর্ক শুধু দুটি দেশ বা জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নয়, বরং একই দর্শন, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ত্যাগ থেকে জন্ম নেওয়া দুটি আত্মার মধ্যকার সম্পর্ক। এই সম্পর্ক আমাদের মুক্তি এবং স্বাধীনতাসংগ্রামের কঠিন দিনগুলো থেকে উদ্ভূত। এই সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস, সমঝোতা এবং শ্রদ্ধার ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি সম্পর্ক। এই সম্পর্ক এমন এক সম্পর্ক, যা দুই দেশের বীর শহীদদের মিশ্রিত রক্তধারার ওপর নির্মিত। এই সম্পর্ক একটি চিরস্থায়ী সম্পর্ক, যেমনভাবে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব চিরকাল অটুট থাকবে। বিশ্বের কোনো শক্তিই এটিকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
মহাত্মা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তৈরি ‘বাপু-বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল প্রদর্শনী’র ও উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘মহাত্মা এবং বঙ্গবন্ধু আমাদের যুবসমাজের অনুপ্রেরণা।’ বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভারত সরকারের এই সম্মান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে অনেকদূর এগিয়ে দিবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
আজকের বাংলাদেশ পরিবর্তিত বাংলাদেশ। আর এই সবকিছুই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় ও যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে। আজকের বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশ।ভারতের মোদি সরকার ও বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর উভয় দেশে সু-সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে উভয় দেশে নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সীমানা নির্ধারণ, সংযোগ, সহযোগিতা, অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবেশ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমুদ্র অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, কর, প্রতিরক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মতো অসংখ্য দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা রয়েছে। ওই সব দলিল এবং প্রক্রিয়া দুই দেশের সহযোগিতাকে আরো সুনির্দিষ্ট এবং ফলপ্রসূ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ ৫০ বছর সম্পর্কের পরীক্ষায় বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়িয়েছে। আজ ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘গোল্ডেন এজ’ বা ‘সোনালি অধ্যায়’ বলে আখ্যায়িত করছে দুই দেশই। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের গভীরতা এবং দৃঢ় বন্ধনকেই প্রকাশ করে। এটা সত্য যে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু সর্বদাই অপর বন্ধুর পাশে থাকে এবং তারা তাদের সব আনন্দ ও দুঃখ ভাগ করে নেয়।
এখানে উল্লেখ না করলেই নয় যে- বাংলাদেশ সব সময়ই ভারতকে এক অকৃত্রিম বন্ধু মনে করে এবং তার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও ভারতের সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের জনগণও ১৯৭১ সালের সেই ভারতকেই সব সময় দেখতে চায়, যে তার হাজারো সমস্যাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ও তার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমরা আগেও এর অনেক প্রমাণ পেয়েছি এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে আশা করি যে দুই নেতা দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলো, যেমন- তিস্তার পানিবণ্টন বা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সমর্থন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিক এবং ন্যায়সংগত আলোচনার মাধমে দুই দেশের জনগণের জন্য একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী ভবিষ্যৎ রচনা করবেন। এই দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের নেতাদের ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার ভিত্তি নিশ্চিত করবে দুই দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা। একটি বড় দেশ হিসেবে ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে, তার পরীক্ষিত বন্ধু বাংলাদেশের কথা শুনতে হবে সহযোগিতার খোলা মন নিয়ে। দুটি বন্ধু দেশের মধ্যে কোনো সমস্যাই অমীমাংসিত থাকা কাম্য হতে পারে না।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অগ্রগামিতার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদাহরণ॥
বাংলাদেশের পথ ব্যবহার করে আসাম থেকে ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহন॥ বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সড়ক পথে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম থেকে ত্রিপুরায় ২০১৬ সনের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতীয় তেল করপোরেশন জ্বালানি পরিবহন শুরু করে। গতানুগতিক ভারতীয় পাহাড়ি পথে পেট্রোল ও ডিজেল পরিবহনে সমস্যার কারণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আগরতলার এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে আইএএনএস জানিয়েছে। এজন্য ওই বছরেরই ১৮ অগাস্ট ঢাকায় বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সঙ্গে ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটিডের (আইওসিএল) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত (এমওইউ) সই হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় জ্বালানি তেলবাহী ট্রাক-লরি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রিপুরায় যাতায়াত করবে। তবে এক্ষেত্রে ভারতকে সড়কের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাবদ নির্ধারিত ফি দিতে হবে।
আগরতলার ওই কর্মকর্তা বলেন, “আইওসিএলের কর্মকর্তা ও ট্রাকওয়ালাদের পাসপোর্ট মঙ্গলবারের মধ্যে হাতে পেলে আসাম থেকে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় পেট্রোলিয়াম পণ্য পরিবহন ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে।”
আইওসিএলের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাটিকে বলেন, ভারতীয় ট্যাংকারগুলো উত্তর আসামের বঙ্গাইগাঁও থেকে যাত্রা করে মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত-সিলেটের তামাবিল-মৌলভীবাজারের চাতলাপুর হয়ে প্রায় চার ঘণ্টায় ১৩৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশপুরে ঢুকবে। ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল সরবরাহের পর খালি যানবাহনগুলো বাংলাদেশের চাতলাপুর চেকপোস্ট হয়ে একই পথে ভারতে ফিরে যাবে।
বাংলাদেশ হয়ে নতুন এই পথে জ্বালানি পরিবহনে খরচ ও সময় দুটোই বাঁচবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এসব পণ্য ৪০০ কিলোমিটারের বেশি পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ত্রিপুরায় নিতে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। তাছাড়া মেঘালয় ও দক্ষিণ আসাম হয়ে জাতীয় মহাসড়কের অবস্থাও খুব খারাপ।”
২০১৬ সনে ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ভূমিধসের কারণে আসাম থেকে ত্রিপুরাগামী সড়কপথ (এনএইচ-৪৪) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। ফলে ত্রিপুরা রাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দেয়।
তখন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই অবস্থা নিরসনে মানবিক কারণে আসাম থেকে বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল ও এলপিজি পরিবহনের জন্য ভারত সরকারের অনুরোধে বাংলাদেশ এই সহযোগিতায় রাজি হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ত্রিপুরার জনগণের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধন এবং সর্বোপরি মানবিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে।
এর আগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ত্রিপুরায় খাদ্য শস্য ও ভারি যন্ত্রপাতি বহনে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয় সরকার। আসাম ও মেঘালয়ের গতানুগতিক বন্ধুর পথ এড়িয়ে গত সপ্তহে কলকাতা থেকে বাংলাদেশ হয়ে দুই হাজার ৩৫০ টন চালের নতুন একটি চালান ত্রিপুরায় পাঠিয়েছে ভারতের খাদ্য করপোরেশন (এফসিআই)। এর আগে ত্রিপুরায় ৭২৬ মেগাওয়াট ‘পালটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম পরিবহনে ভারতের অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন লিমিটেডকে (ওএনজিসি) বাংলাদেশের পথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সরু একটি পাহাড়ি ভূমি রয়েছে চড়াই-উৎরাইয়ের ওই পথে যানবাহন বিশেষ মালবোঝাই ট্রাক চলাচল খুবই কঠিন। সড়ক পথে গুয়াহাটি হয়ে আসাম থেকে কলকাতার দূরত্ব এক হাজার ৬৫০ মাইল, দিল্লির দূরত্ব দুই হাজার ৬৩৭ মাইল। কিন্তু বাংলাদেশ হয়ে আগরতলা ও কলকাতার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৬২০ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের থেকে ত্রিপুরায় নদী পথে পরীক্ষামূলক যাতায়াত: বাংলাদেশের দাউদকান্দি থেকে ত্রিপুরার সোনামুড়া পর্যন্ত নদী পথে পরীক্ষামূলক যাতায়াত শুরু হয়েছে ২০২০ সনের সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ। ওইদিন দাউদকান্দি থেকে ৫০ মেট্রিক টন সিমেন্ট বাহী এম ভি প্রিমিয়ার জাহাজ যাত্রা শুরু করেছে। গোমতী নদী পথে ৯৩ কিলোমিটার লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এই এম ভি প্রিমিয়ার জাহাজ পরদিন ত্রিপুরার সোনামুড়ায় পৌঁছে। এর মাধ্যমে এই প্রথম বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার নদীপথে যোগাযোগ শুরু হল। বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর পূর্ব ভারতের দেশগুলির সংযোগ কর্মসূচির আওতায় গৃহীত নতুন উদ্যোগগুলির মধ্যে এটি অন্যতম একটি উদ্যোগ। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।
দুই দেশের সীমান্তে বর্ডার হাট॥ ত্রিপুরার ধলাই জেলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে ২০২২ সনের ৩ ফেব্রুয়ারি বর্ডার হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, সংসদ সদস্য আব্দুল সাহিদ, ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, ত্রিপুরার শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান টিংকু রায়, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। প্রথমে অতিথিদের উপস্থিতিতে সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে প্রস্তাবিত বর্ডার হাটে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর স্থানীয় স্কুল মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেদিনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি বলেন, এই বর্ডার হাটগুলি শুধু বেচাকেনার জন্য নয়, বর্ডার হাট আত্মার মেলবন্ধন ঘটায়। মৈত্রীর সম্পর্কের জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে ব্যাবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক প্রথমত হৃদয়ের এরপর সংস্কৃতির এবং পরবর্তীতে এটি বাণিজ্যিক সম্পর্কে উন্নিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিপুরাবাসীকে খুব ভালোবাসেন, তাই যখনই যা কিছু চাওয়া হয় তখন তা দিয়েছেন। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিপুরাবাসীকে পছন্দ করেন। এভাবেই ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে ‘সীমান্ত হাট’ চালু করা হয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গি এবং লক্ষ্য সামনে রেখে, বাংলাদেশ ও ভারতকে একই উৎসাহ ও অঙ্গীকার নিয়ে অগ্রসর হতে হবে, তাদের সম্পর্কের ১০০ বছর পূর্ণ করার অনেক আগেই যেন তারা উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যেতে পারে- দুই দেশের জনগণ আন্তরিকভাবেই সেই প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক!
প্রবীর চৌধুরী রিপন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাংলাদেশ।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :