AB Bank
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ডেঙ্গু, জলবায়ু পরিবর্তন ও সম্ভাব্য প্রতিকার


Ekushey Sangbad
নাভিদ সালেহ
১২:৪৪ পিএম, ২৭ আগস্ট, ২০২৩
ডেঙ্গু, জলবায়ু পরিবর্তন ও সম্ভাব্য প্রতিকার

বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রায় মহামারির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ২০০০ সালে প্রথম দেখা দেওয়া ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ২০১৯ ও ২০২২ সালে ভয়াল রূপ ধারণ করেছিল। চলতি বছরে এসে এ রোগের উপসর্গ যেমন বদলেছে, তেমনি বেড়েছে রোগ ছড়ানোর তীব্রতা। ঢাকা, চট্টগ্রাম নগরীসহ অন্যান্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই রোগ ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গু দ্রুত শনাক্ত করা এবং এর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য দেশের অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র পূর্ব-প্রস্তুত নয়। এখন বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব নাকি আরও বাড়বে।

 

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিসসহ অন্যান মশার ঘনত্ব বাড়ার আশঙ্কাকে মার্কিন ধনকুবের ও সমাজসেবক বিল গেটসও গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছেন সম্প্রতি। তিনি বলছেন, উষ্ণায়ন ঠেকানোর সংগ্রামে আমরা যেন জনস্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা না করি।

 

এ ছাড়া ২০২০ সালে নেচার কমিউনেকশন পত্রিকায় প্রকাশিত এক অভিসন্দর্ভে কয়েকজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীও একটি ফেনোলজি মডেল ব্যবহার করে আলোকপাত করে বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিষুবরেখাসংলগ্ন অঞ্চলে এডিস মশা ছড়ানোর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়বে। তারা এও বলছেন, আগামী কয়েক দশকে ডেঙ্গু পরিবাহী এই মশা ইউরোপ, চীন ও উত্তর আমেরিকাতেও ছড়িয়ে যাবে। এই মডেল অনুসারে এডিস মশা ছড়ানোর ‘ইনভেশন ফ্রন্ট’ বা সীমারেখা বছরে ২ থেকে ৬ কিলোমিটার হারে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক কারণ হিসেবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা এবং এর ফলে এডিস মশার জীবনচক্র সম্পাদনের হার বৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে। উষ্ণায়নের সঙ্গে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়বে– এটা এখন স্বতঃসিদ্ধ। তাই এর প্রতিকারের ওপর জোর দেওয়া এখনই জরুরি।

 

প্রশ্ন হচ্ছে, ডেঙ্গুর প্রতিকারে আমরা কী করতে পারি? জাতীয় পর্যায়ে মশক নিধনের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় মশক নিধনের জন্য ওষুধ ছড়ানো, জলাবদ্ধ এলাকায় মশার ডিম নষ্ট করার প্রচেষ্টা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্যের ওপর মনোযোগ– এ সবই চলছে। আইসিডিডিআর,বি টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিচ্ছে– প্রতি সপ্তাহে সাধারণ মানুষ নিজ নিজ এলাকায় পাঁচটি মশকনিরোধী পদক্ষেপ নিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পানি সংরক্ষণের পাত্র খালি ও পরিষ্কার করা, ফুলদানি ও গাছের টব থেকে পানি সরানো, নালা পরিষ্কার, অব্যবহৃত যে কোনো বস্তু (যেমন পরিত্যক্ত টায়ার), যা পানি ধারণ করতে পারে তা সরানো এবং যে কোনো পাত্র– যেখানে বৃষ্টির পানি জমতে পারে, তা উল্টে রাখা। এসব পদক্ষেপের পরও জনসাধারণ ‘আউটব্রেক পিরিয়ড’ বা প্রাদুর্ভাব চলাকালীন ডেঙ্গুর আক্রমণে হাঁপিয়ে উঠছে।

 

এই ভয়াল রোগ, যার প্রকোপ আগামী বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্রতর হবে, তার কি কোনো উপযুক্ত প্রতিকার নেই? আধুনিক জীববিজ্ঞানের কল্যাণে গত ৩০ বছরে একটি অভিনব প্রতিকারের সম্ভাবনা সামনে এসেছে। এ বিষয়ে জনসাধারণের অবগত হওয়া প্রয়োজন।

 

যখনই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে তখন আমরা মশক নিধনে মনোযোগ দিই। তবে সব মশা তো নিধন সম্ভব নয়। তার ওপর আবার এডিস মশার জীবনচক্র পূর্ণ হতে সময় লাগে মাত্র এক সপ্তাহের মতো। অর্থাৎ যে কোনো এলাকায় মশক নিধন করতে হবে প্রতি সপ্তাহে। যেহেতু মশার চূড়ান্ত বিনাশ অসম্ভব, তাই ডেঙ্গুর ভাইরাস বাড়ার মাত্রাকে যদি শ্লথ করা যায়, তবে হয়তো এ রোগের প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমানো যেতে পারে।

 

ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রক্রিয়াতে সক্রিয় স্ত্রী এডিস মশা। কারণ স্ত্রী মশাই শুধু মানবদেহে হুল ফোটায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে স্ত্রী এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা তখন ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে। এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য ভাইরাসের লোড বাড়া প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় সংক্রমিত মশকের দেহে। তাই কোনোভাবে যদি (সংক্রমিত মশকের দেহে) ভাইরাস বৃদ্ধির হার কমানো যায়, তবে এ রোগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এই প্রচেষ্টায় ১৯৯২ সালে প্রথম ওয়ালবাকিয়া নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মাধ্যমে ডেঙ্গুর ভাইরাসের বৃদ্ধির হার শ্লথ করার বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি সামনে আসে। প্রশ্ন হলো, একটি ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে? ওয়ালবাকিয়া নামের ব্যাকটেরিয়া অধিকাংশ কীটের ভেতর পাওয়া যায়। শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ কীট এই ব্যাকটেরিয়া বহন করে থাকে। এডিস মশা প্রাকৃতিক নিয়মে এই ব্যাকটেরিয়া ধারণ করে না। এটিও জেনে রাখা ভালো, ওয়ালবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে সংক্রমিত হয় না। কৌশলটি হচ্ছে, এই ওয়ালবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া যদি পুরুষ এডিস মশায় সংক্রমণ করা যায়, তবে পুরুষ মশা স্ত্রী এডিস মশার সঙ্গে প্রজননকালে এই ব্যাকটেরিয়া মশকের ডিমে স্থানান্তর করবে। এভাবে জন্ম নেওয়া এডিস মশায় ওয়ালবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত থাকবে। নতুন এডিস মশার প্রজন্মে এই ওয়ালবাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার প্রবৃদ্ধি ডেঙ্গুর ভাইরাসের বাড়ার সঙ্গেপ্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। ডেঙ্গুর ভাইরাস লোড তাই দ্রুত বাড়তে পারবে না এবং ডেঙ্গুর সংক্রমণও কমে আসবে।

 

এই কৌশল ব্যবহার করছে ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রাম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ১২টি দেশ বিকল্প ধারাটি অধিগ্রহণ করেছে এবং এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বাংলাদেশেও ওয়ালবাকিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে লেখালেখি শুরু হয়েছে। আইসিডিডিআর,বির অণুজীব বিজ্ঞানীরা তো রয়েছেনই। অর্থাৎ আমাদের দেশেও এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। ২০২২ সালে গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ওয়ালবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া স্ট্র্যাটেজি ব্যবহারের উল্লেখ করা হয়েছিল।

 

এই প্রযুক্তি প্রয়োগে খরচ কেমন হতে পারে? ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী দেড় কোটি জনসংখ্যার জাকার্তায় এই প্রযুক্তির প্রয়োগ করতে খরচ হবে ১ হাজার কোটি টাকা। ঢাকার জনসংখ্যা জাকার্তার কাছাকাছি আর চট্টগ্রাম শহরের লোকসংখ্যা ঢাকার অর্ধেক। বাংলাদেশ সরকার যদি ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার জোগান দিতে পারে, তবে আগামী বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পেতে পারে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া, ডেঙ্গুর অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির অনুমান ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের বর্তমান পদক্ষেপগুলোর খরচের বিচারে এই অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় যুক্তিযুক্ত কিনা, তা যাচাই প্রয়োজন। সর্বোপরি ডেঙ্গুকে ঘিরে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, এ রোগে যে প্রাণনাশ হচ্ছে, তার প্রতিকার যদি করা যেতে পারে, তবে এই অর্থ ব্যয় যুক্তিযুক্ত বৈকি! এমন বিকল্প ধারার প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখন না নিলে উষ্ণায়ন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগের বিস্তৃতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।  

 

একুশে সংবাদ/র.ই.প্র/জাহা

Link copied!