AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নবগঠিত সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা


Ekushey Sangbad
মনজু আরা বেগম
০৬:৩০ পিএম, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪
নবগঠিত সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা

৭ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন থেমে থাকেনি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম অবশ্যই করতে পারে। কিন্তু নিরপরাধ মানুষের জানমালের ক্ষতি করে পুড়িয়ে মেরে জনদুর্ভোগ তৈরি করে দেশের সম্পদ বিনষ্ট করে আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো রাজনৈতিক দলেরই উচিত নয় দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করা, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করা। নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে দলগুলোর অনেকেই নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তাদের দলগত আদর্শ, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারনার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করে। নির্বাচনমুখী দলগুলো ইশতেহারে জনগণের কল্যাণের কথা তুলে ধরে যত চমক সৃষ্টি করতে পারে, নির্বাচনে জয়লাভের পর বাস্তবিক অর্থে সেই সব প্রতিশ্রুতির আদৌ তেমনভাবে কোনো গুরুত্ব প্রদান করে না বা সেই সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে লক্ষ রাখে না।

স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। সদ্য স্বাধীন দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র সময়ের পরিক্রমায় আজ একটা শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক একটি সমাজকাঠামো গঠন করা, যার মধ্য দিয়ে দেশকে গড়ে তোলা যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষকে কেন্দ্র করেই তিনি সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পট পরিবর্তন হয়ে যায়। বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন সময়ে দেশ পরিচালনা করতে থাকে। দেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে গতি আসে মূলত ২০১০ সাল থেকে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। ভোট ও ভাতের অধিকার দারিদ্র্যবিমোচনের হাতিয়ার’ স্লোগান নিয়ে দলটি এগিয়ে আসে। বিভিন্ন ধরনের সংকটের আবর্তে নিমজ্জিত অবস্থা থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। এতে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল।

এ সময় আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে অগ্রাধিকারভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তিসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করে, যার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয় ২০১৯ সালের মধ্যেই। এই সময়ে সামাজিক বিভিন্ন খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়। মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের গড় আয়ুও বাড়ে। নারী ও শিশু মৃত্যহার হ্রাস পায়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়। ২০০৮ সালের ইশতেহারে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল, তা হলো প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উত্স প্রতি বছর জনসম্মুখে প্রকাশ করা। বিষয়টি দেশের সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট ও উদ্বুদ্ধ করেছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তারা তাদের সেই অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে আসে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহার থেকে তা বাদ দেওয়া হয়। এই ইশতেহারে বলা হয় সমাজজীবনের সব ক্ষেত্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে, জনগণের জীবনযাত্রার ক্রমাগত মানোন্নয়ন, আয়-রোজগার বৃদ্ধি, খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

একইভাবে ২০১৮ সালেও তারা আবারও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করে। এই ইশতেহারে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক নির্মূল, স্থানীয় সরকারে জনগণের ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা ইত্যাদি মৌলিক বিষয় স্থান পেলেও উন্নয়নের পথে এবং জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টির অন্যতম বড় বাধা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা দেশবাসীর অজানা নয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কিংবা ইশতেহারে উল্লেখিত সাংসদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব ও আয়ের উত্স প্রতি বছর জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে টিআইবি ইন্টারন্যাশনালের ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের সম্পদের পরিমাণ ১৩৩ শতাংশ থেকে ১০৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির হিসাব জনগণকে দেখতে হতো না। পত্রিকান্তরে জানা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত প্রার্থীদের সম্পদের হলফনামায় ১৮ জন প্রার্থীর ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের পরিমাণ দেশবাসীকে বিস্মিত করেছে। যারা জনসেবার নামে জনগণের কল্যাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তারাই সম্পদের পাহাড় গড়ে জনদুর্ভোগ তৈরি করে বৈষম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা সৃষ্টি করছে। সংসদে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সারারণ মানুষের জীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ তৈরি করেছে।

এবারের ২০২৪-এর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চারটি ভিত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এবারের স্লোগান ছিল ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন হবে দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।’ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করে ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে যে দুটি বিষয় সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার মত তা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি। কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবক-যুবতিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো দুর্নীতি, অর্থ পাচার রোধ, ঋণখেলাপির বিষয়টি ইশতেহারে থাকলেও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ১১টি বিষয়ের মধ্যে নেই। এ ছাড়াও দেশে ২ কোটি প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, তাও অগ্রধিকারের তালিকায় নেই। দেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি প্রবীণ জনগোষ্ঠী রয়েছেন। যারা এক সময় এই দেশ, এই সমাজ এবং পরিবারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অবদান রেখেছেন, তারা প্রবীণ বয়সে কী অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করছেন, সে বিষয়টি নিয়ে তেমনভাবে কেউ ভাবছেন না। এটা ঠিক, বর্তমান সরকার প্রবীণ বা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাতার ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু এই ভাতার আওতায় মধ্যবিত্ত বা অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। দেশে বহু প্রবীণ রয়েছেন, যারা তাদের মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখনো দেশের বা সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে পারেন। কিন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, তাদের কর্মসংস্থানের কোথাও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সরকার এই অভিজ্ঞ প্রবীণদের কাজে লাগাতে পারলে একদিকে দেশ, সমাজ ও পরিবার যেমন উপকৃত হতো, অন্যদিকে তাদের কর্মহীন অবসর সময়গুলো সুস্থতার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছন্দে কাটত। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অবসরপ্রাপ্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মেনটর হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

আমাদের দেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা রাখার জন্য বর্তমান সরকারপ্রধানকে এগিয়ে আসার জন্য প্রবীণ জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আহবান জানাচ্ছি। এ ছাড়া ২০১৩ সালে অনুমোদিত প্রবীণ নীতিমালা ও পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ও নীতিসমূহ যথাযথ বাস্তবায়নের অনুরোধ করছি। এর পাশাপাশি দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথে অন্যতম বাধা হয়ে কাজ করছে এবং অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলেছে, তার বিরুদ্ধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। দেশের সার্বিক উন্নয়নে এর কোনো বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নেওয়ার পরও দুর্নীতি না কমে বরং আরও বহুগুণে বেড়েছে।

পত্রিকান্তরে জানা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত এই ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে লোপাট হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এটি একটি ভয়াবহ চিত্র। এসব কারণে দেশে একটা বৈষম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা আমাদের স্বাধীনতা ও সংবিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। কাজেই এ বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নব্য গঠিত সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।


একুশে সংবাদ/ই.ফ.প্র/জাহা

Link copied!