শুক্রবার ৩ মে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস২০২৪। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুযায়ী- ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের দাবিতে প্রতিবছর এই দিনে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।আর বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে : মুদ্রণ, সম্প্রচার ও অনলাইন। তবে এর বাইরেও কিছু প্রচারমাধ্যম রয়েছে, যেগুলো বাস্তবে কতটা গণমাধ্যম, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশ্বে গত ৫২ বছরে গণমাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। একে পরিবর্তন না বলে বিবর্তন বলাই শ্রেয়। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশে গত ৫২ বছরে গণমাধ্যমের বিবর্তন নিয়ে আলাচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়-এ ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটেছে, ৫২ বছর আগে তা ছিল অকল্পনীয়। এ পরিবর্তনটা ৫২ বছরে বিশ্বে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটেছে, অনেকটা তার সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। তবে শুধু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন বললে সবটা বলা হয় না; গণমাধ্যমের গুণগত, মানগত ও চরিত্রগত পরিবর্তনও কম উল্লেখযোগ্য নয়। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন গণমাধ্যম বলতে মূলত ছিল হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদপত্র। আর ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। এ দুটি প্রতিষ্ঠান যতটা না ছিল গণমাধ্যম, তার চেয়ে বেশি ছিল বিনোদনমাধ্যম। সে সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে আজ দেখা যায় দেশে রয়েছে অসংখ্য সংবাদপত্র, কিছু সাপ্তাহিক-পাক্ষিক-মাসিক পত্রিকা, সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন ও বেতার ছাড়াও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেসরকারি টেলিভিশন ও এফএম রেডিও। আরও আছে অনলাইনভিত্তিক অসংখ্য নিউজ পোর্টাল এবং বেশকিছু আইপি টেলিভিশন, যেগুলোর বেশিরভাগই অনুমোদনহীন (সম্প্রতি সরকার বেশ কয়েকটি অনুমোদনহীন আইপি টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে)। এ ছাড়া বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমও এক ধরনের গণমাধ্যমের ভূমিকা পালন করছে, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
সব মিলে ৫২ বছরে দেশে গণমাধ্যমের বিবর্তন বিস্ময়কর। স্বাধীনতার সময় দেশে সংবাদপত্র বলতে ছিল মূলত দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার ও মর্নিং নিউজ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহর থেকে বের হতো কয়েকটি পত্রিকা। এ দেশে গণমাধ্যমের মূল কর্মকাণ্ড আগেও ছিল ঢাকাকেন্দ্রিক, এখনো তা-ই।
আর গণমাধ্যম এখন নাগরিক জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গী’ প্রাচীনকাল থেকেই মানব সভ্যতাকে বিকশিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যোগাযোগ বা তথ্য সরবরাহ। কালক্রমে এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। যাকে বলা হয় মিডিয়া বা গণমাধ্যম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নেহায়েত তথ্য সরবরাহ বা সংবাদ সম্প্রচার ছাড়াও আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে সংবাদ মাধ্যমগুলো। গণমাধ্যম এখন নাগরিক জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গী। স্যোশাল মিডিয়া আসার পর থেকে গণমাধ্যমের ধারণা আরো বিস্তৃত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেরও নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করছে মূলধারার মিডিয়ার পেজগুলো। এবং এসব মিডিয়া কার্যক্রম বেশ জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। বর্তমান মিডিয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি যা সামগ্রিক অর্থে পুরো বিশ্বকেই ছোট করে দিয়েছে। শত শত ভাষায় যেকোনো তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে। মানবসভ্যতার এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গণমাধ্যমকে তাই আরো বেশি শক্তিশালী এবং সার্বজনীন করা প্রয়োজন। দেশে দেশে রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক কিংবা ব্যবসায়িক অপব্যবহার থেকে বের হয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো সমাজ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করুক, বিশ্বব্যবস্থা চালনায় অবদান রাখুক।আবার ইদানীং সবখানে শুধু ভাইরালের ছড়াছড়ি। দেখে মনে হয় ভাইরাল না হলে, ফেইসবুকে লাইক না পেলে, ইউটিউবে ভিউজ না পেলে কোনো ঘটনাই ঘটনা নয়, কোনো খবরই খবর না। যেকোনো পেশার মানুষ, গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম কেউই বাদ যাচ্ছেন না এই মানসিকতা থেকে। সবারই ইচ্ছা ভাইরাল করা বা ভাইরাল হওয়া। কিন্তু এই ভাইরাল করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেললেই বাধে যত বিপত্তি। সস্তা জনপ্রিয়তা, লাখ লাখ ভিউজ পাওয়ার জন্য যখন নিম্নমানের, অসত্য, অর্ধসত্য, রুচিহীন, দৃষ্টিকটু ও আপত্তিকর কনটেন্ট তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন সেটা ভয়াবহ ফলাফল বয়ে আনে ব্যক্তির জীবনে ও সমাজে। এর চেয়েও বাজে কাজ হচ্ছে গুজব ছড়িয়ে কোনো ব্যক্তির ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান নষ্ট করা, তাকে হেনস্তা করা।
বাজারে এসেছে ট্রল। শিল্পী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক কেউ বাদ যাচ্ছেন না ট্রলের হাত থেকে। বিশেষ করে নায়ক-নায়িকারা বেশি শিকার হচ্ছেন ট্রলের। শুধু কি তা-ই, নারীকে যৌন হয়রানি, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধকে আঘাত করা, রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থির করা ও অনিশ্চিত পরিবেশ তৈরি করার মতো জঘন্য অপরাধও ঘটিয়ে থাকে এই ট্রল করতে গিয়ে। বিষয়টি আনন্দ বা নিছক মজা না হয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গণমাধ্যম তথ্যভান্ডার, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ও সেইসঙ্গে বিনোদনের উৎস। গণমাধ্যম `এজেন্ডা সেটিং` করে। মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে সমকালীন ও আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ, কোনটি নয়। কীভাবে ভাবতে হবে, মতামত দিতে হবে, প্রতিবাদ জানাতে হবে, তা-ও দেখিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, জনমত তুলে ধরাও গণমাধ্যমের কাজ।
কাজেই এখানে যা প্রকাশিত বা প্রচারিত হবে, তা অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। শুধু ভাইরাল হওয়ার জন্য বা ভিউ বাড়াবার জন্য সাংবাদিকরা যা খুশি লিখতে পারেন না, প্রকাশ করতে পারেন না। মানুষের সম্মান নষ্ট করা, সমাজ ও রাষ্ট্রকে কলুষিত ও বিভ্রান্ত করাটা এক ধরনের অপরাধ। অথচ যেহেতু এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জয়জয়কার, তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে অন্যরূপে ফিরে এসেছে `ইয়েলো জার্নালিজম বা হলুদ সাংবাদিকতা`।
গণমাধ্যমগুলোর বড় একটা অংশ মনে করছে পাঠক টুইস্ট, ট্রল, বুলিং, নায়ক-নায়িকার জীবন-যাপন নিয়ে রসাত্মক সংবাদ, খোলামেলা ছবি পছন্দ করেন। কোন নায়ক কতবার বিয়ে করছেন, কয়টা বাচ্চার বাবা হচ্ছেন, কোন নায়িকার ঘরে কে প্রবেশ করছে, কার উচ্চারণ কতটা কদর্য, কার বাচ্চা কার গর্ভে, কোন খেলোয়াড় কতবার পরকীয়া করল, এইসব সংবাদ যখন প্রথম শ্রেণির পত্রপত্রিকা ছাপাতে শুরু করে এবং চ্যানেলগুলোর কেউ কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে অনুষ্ঠান করে তখন বাধ্য হয়ে বলতেই হয়, ভিন্ন চেহারায় হলুদ সাংবাদিকতা ফিরে এসেছে। এসবের উদ্দেশ্য শুধু ভিউজ বাড়ানো।আর ইতিহাস নতুনভাবে ফিরে এসেছে। মানসম্মত কনটেন্ট নাকি প্রচারণার কৌশল কোনটা বেশি জরুরি? সংবাদপত্রগুলোই শুধু নয়, ইলেকট্রনিক মিডিয়াও তাদের কন্টেন্ট, আয়োজন, নিউজের ধরন, ফিচার ও অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভিউজ বাড়ানোর জন্য এমন অনেক ধরনের ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে, যা ঠিক রুচিশীল সংবাদের তালিকায় পড়ে না। মাঝেমধ্যে মিথ্যা ও সেনসেশনাল খবর আপলোড করতেও পিছপা হচ্ছেনা।
কার আগে কে সংবাদটি তুলে ধরবে, এজন্য সত্যতা যাচাইয়ের আগেই তাড়াহুড়ো করে অনলাইনে নিউজ আপলোড করছে, যাতে ভিউজ বাড়ে। এই নতুন কিছু দিতে গিয়েই খানিকটা রংচং, তথ্য বিকৃতি, রগরগে ভাষা ও ছবির ব্যবহার, অর্ধসত্য সংবাদ প্রচার করতে হয় বলে বাধে বিপত্তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু বিনোদন ও তথ্য দিলেই হয় না, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংও করতে হয়। আর তখনই প্রশ্ন ওঠে রুচিকর সংবাদ না অরুচিকর কিছু দিয়ে ভিউজ বাড়ানোর।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিন্দুকদের আমরা এখন `হেটার` বা নিন্দুক হিসেবে চিহ্নিত করি। তাদের কাজকে দেখি `ট্রল` হিসেবে। বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কমেন্টবক্স ভরে ফেলে। এগুলোকেও কি আমরা ভিউজ হিসেবে ধরে নেব? এর ফলে দেশের মূল ধারার গণমাধ্যমও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আর পড়েছে বলেই অনলাইনের ওপর জোর দিচ্ছে। মুদ্রিত পত্রিকার সার্কুলেশন ব্যাপক হারে কমেছে, বেড়েছে অনলাইন পত্রিকার পাঠক। যেহেতু অনলাইন মিডিয়াকে ইউটিউবের অসমর্থিত নিউজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে, তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক দিকটিও দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউজের কি উচিত সামাজিক মাধ্যমের মতো করে কনটেন্ট আপলোড করা?
প্রযুক্তির অপব্যবহার করে অনেক খবর ও ছবিকে এডিট করে যেকোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে যেমন বিপদে ফেলা যায়, তেমনি সমাজেও হাঙ্গামা সৃষ্টি করা যায়। এসব বানানো বা অর্ধসত্য জিনিস লাখ লাখ ভিউয়ার দেখে, কমেন্ট এবং শেয়ার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এইসব কনটেন্ট কি মূলধারার গণমাধ্যম গ্রহণ করে প্রতিযোগিতায় নামবে নাকি নামা উচিত? নাকি এগুলোকে যেন প্রতিহত করা যায়, সেই চেষ্টা করবে? তাই
আসুন আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই’ একবিংশ শতাব্দীতে তথ্য শুধু অধিকার নয়, এটি একটি সম্পদও বটে। তথ্যের অবাধ প্রবাহে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অপরিসীম। তথ্য পরিবেশন, জ্ঞান বৃদ্ধি, সামাজিক চেতনা বিকাশ, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি,পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা, মানসিক বিকাশ, নান্দনিক রুচি বিকাশ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকাশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। গণমাধ্যম সত্যের ধারক ও বাহক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করে থাকেন।গণমাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রের ভালো মন্দ তুলে ধরে যেমন সমালোচনা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করে, ঠিক তেমন ইতিহাস, ঐতিহ্যও বিশ্বব্যাপী প্রকাশ ও প্রচার করে থাকেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের উচিত ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করা। বেশি পরিমাণ লাইক শেয়ারের জন্য গুজব না রটানো। গণমাধ্যমকর্মীদের উচিত হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করা। জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে: ‘প্রত্যেকের মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে; এই অধিকারে হস্তক্ষেপ ছাড়াই মতামত রাখা এবং কোনো গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য ও ধারণাগুলো অনুসন্ধান করা, গ্রহণ এবং গ্রহণের স্বাধীনতার সীমানা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।’ এছাড়াও সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদের ২(ক)তে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা।গণমাধ্যমকে রাষ্টের ৪র্থ স্তম্ভ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
> চ্যালেঞ্জ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে তথ্যপ্রবাহের জগতে চটুলতা, রুচিহীনতা বা সস্তা কাজ একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে। প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজ হলো চটুলতা পরিহার করে সত্য প্রতিষ্ঠা করা। মানুষ যতই সামাজিক মাধ্যমে গা ভাসিয়ে দিতে চেষ্টা করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত তারা সত্যের সন্ধান করবেই। গণমাধ্যম সেই সঠিক তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্যপ্রবাহ এবং সঠিক তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। এখানে আসে সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতার বিষয়টি। সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা হচ্ছে সমাজের প্রতি এবং জীবনের প্রতি।
গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা, সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা এবং সাংবাদিকতার সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। দেশে পত্র-পত্রিকার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকের সংখ্যাও বাড়ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে এই সাংবাদিকরা পেশাগত মান এবং সমাজের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন।
> সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব
গণমাধ্যম ও সমাজের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটেছে সমাজকে আশ্রয় করে। গণমাধ্যম সর্বপ্রথম মানুষের তথ্যের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেছে। এটা মানুষের কৌতূহল নিবৃত্ত করেছে এবং করে যাচ্ছে। সমাজ ও সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমেরও বিকাশ ঘটেছে। চরিত্র এবং চেহারাগত পরিবর্তন এসেছে গণমাধ্যম জগতে ব্যাপকভাবে। একেক যুগে মানুষ একেক ধরনের মূল্যবোধ লালন করেছে এবং গণমাধ্যম সমাজকল্যাণের উদ্দেশে সেসব মূল্যবোধের প্রসার ঘটিয়েছে।
সমাজের প্রতি গণমাধ্যমের যে দায় এবং যে দায়িত্ববোধ, সেটা সত্যিকারার্থে প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছে। সমাজ এবং সামাজিক ব্যবস্থাকে সঠিক পথে এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সব সময় অসামান্য অবদান রেখেছে। বিচ্যুতিও আছে। থাকাই স্বাভাবিক। তবে সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ভূমিকা সব সময় প্রশংসনীয়।
পরিশেষে বলতে চাই,মুক্ত গণমাধ্যমের স্বার্থেই গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি থাকায় এই পেশার উৎকর্ষ এবং বিরাজমান অনেক সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। গণমাধ্যম কর্মীদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বেরও বাইরে থাকতে হবে।তাই স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রের প্রতীক। কিন্তু বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের মালিকানা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের কালো টাকায় গড়ে উঠার কারণে ট্র্যাডিশনাল মিডিয়া গণতন্ত্র চর্চায় কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন! তাই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আসুন আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই। বিশ্ব গণমাধ্যম দিবসে এই প্রত্যাশা রইল।
লেখক, সাংবাদিক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :