AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
বেতন কাঠামো

চলমান শিক্ষক আন্দোলনের দাবিগুলোর আশু সুরাহা চাই


Ekushey Sangbad
অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. লুৎফর রহমান
০১:৩০ পিএম, ৪ জুলাই, ২০২৪
চলমান শিক্ষক আন্দোলনের দাবিগুলোর আশু সুরাহা চাই

২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যে দিন বদলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তাতে অগ্রাধিকারের ১০.১ ধারায় বলা ছিল– ‘শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর বেতন কাঠামো ও স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন এবং স্বতন্ত্র কর্মকমিশন গঠন করা হবে।’ কেন দিন বদলের সনদ বাস্তবায়ন করা গেল না– শিক্ষাকে রক্ষার স্বার্থে তা খুঁজে বের করার সময় এসেছে।

আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। তার জন্য স্মার্ট নাগরিক আবশ্যক। কিন্তু স্মার্ট শিক্ষক না হলে স্মার্ট গ্র্যাজুয়েট তৈরি সম্ভব নয় এবং তা না হলে স্মার্ট নাগরিক কীভাবে তৈরি হবে? শিক্ষায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং শিক্ষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে স্মার্ট শিক্ষক বানাতে হবে। তবেই স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম স্তম্ভ স্মার্ট নাগরিক তৈরি সম্ভব। অথচ এই শিক্ষকদের মর্যাদা এবং আর্থিক সুরক্ষার ওপরেই বারবার আঘাত আসছে।

২০১৫ সালে বেতন স্কেল আন্দোলনের সময় প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদমর্যাদা তিন ধাপ নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সমস্যার কিছুটা সমাধান হলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কাঙ্ক্ষিত সুপারগ্রেড থেকে বঞ্চিতই থেকে যান (যদিও সুপারগ্রেড প্রদানের বিষয় চূড়ান্ত হয়েছিল বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়)। ঠিক একই সময়ে ঘোষিত নতুন পে স্কেলে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য তিনটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদান বন্ধ করা হলেও পরে শুধু সরকারি চাকিরিজীবীদের জন্য সেটি চালু করা হয়। অনেক দেনদরবার করার পর ২০২২ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই ইনক্রিমেন্ট চালু হয়।

উল্লেখ্য, সরকারি কলেজের শিক্ষকদের পিএইচডি ইনক্রিমেন্ট প্রথমে ২০২২ সাল থেকে চালু হলেও পরে সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে কার্যকর করা হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা-তদবির এবং মন্ত্রীদের বারবার আশ্বাসের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেলায় এ সুবিধা শুরুর সাল ২০১৫-এর পরিবর্তে ২০২২ রাখা হয়। এখন আবার ২০২৪ সালে এসে সরকারি কর্মচারীদের বাদ রেখে ১ জুলাই থেকে বর্তমানে প্রচলিত পেনশন ব্যবস্থার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন যোগদানকৃত শিক্ষকদের ‘প্রত্যয়’ নামে একটি অভিনব পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হলো, যা শিক্ষকদের চরম হতাশায় ফেলে দিয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষা খাতে বিনিয়োগকে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ হিসেবে অখ্যায়িত করেছিলেন। দেশের প্রথম বাজেটে শিক্ষা খাতে তিনি সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখেছিলেন। তিনি সব সময় শিক্ষকদের সাহচর্য পছন্দ এবং সম্মান করতেন। শিক্ষকরা কোনো জায়গায় ব্যথিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি ছুটে যেতেন তাদের কাছে এবং তা সমাধানের চেষ্টা করতেন।

শিক্ষকের জীবনে প্রাপ্তি বলতে দুটি– সম্মান আর সম্মানী। সম্মান তাদেরকে পরিতৃপ্ত করে; সম্মানী দিয়ে তারা কোনোভাবে জীবন যাপন করেন। অথচ সময়ের পরিক্রমায় দুটির কোনোটি যথেষ্ট তো নেইই, বরং অনেক ক্ষেত্রে অভাব আর আত্মবেদনাই তাদের সম্বল। বঙ্গবন্ধু নিশ্চয় এমন কিছুর স্বপ্ন দেখেননি। শিক্ষকরা বেতন ছাড়া আর তেমন কিছুই পান না, যেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনের বাইরে সুযোগ-সুবিধার তালিকা অনেক দীর্ঘ (সুদমুক্ত গাড়ির ঋণ, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার, কুক অ্যালাউন্স ১৬ হাজার, সিকিউরিটি অ্যালাউন্স ১৬ হাজার টাকা ইত্যাদি)।  

আজকে কোন অপরাধে বর্তমানে যে পেনশন ব্যবস্থা আছে, সেখান থেকে শিক্ষকদের বের করে একটি অরক্ষিত আর্থিক ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। শিক্ষকদের অপরাধ কি এটাই– তারা শিক্ষার্থীদের আপন সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবেসে, শ্রম ও মেধা দিয়ে সীমিত সম্পদের মধ্যেও যথাসাধ্য চেষ্টা করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার উপযোগী জনসম্পদ গড়ছেন! শিক্ষকদের আর্থসামাজিক মূল্যায়ন না করে যদি বারবার শুধু অবদমনের চেষ্টা করা হয়; উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় প্রণোদনা দেওয়া না হয়, তাহলে চক-ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে যাওয়া আর ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার এক দল কর্মী পাওয়া যাবে শুধু; শিক্ষক নয়।

সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজারের মতো শিক্ষক কর্মরত। মাত্র ১৫ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে আর্থিক সুরক্ষা, যথাযথ সম্মান, যথাযথ মর্যাদা ও সুবিধা দিলে কি দেশের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের দাবি– স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়ন, প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেড প্রদান এবং শিক্ষকদের জন্য ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিম বাতিল করা। প্রত্যয় পেনশন স্কিম কার্যকর হলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন না বলে শিক্ষকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। এমনিতেই মেধাবীরা দেশের বাইরে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করে আর ফিরতে চাইছেন না। এর মধ্যে যদি এই পেনশন ব্যবস্থা চালু হয় তাহলে ক্রমান্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাশূন্য হয়ে যাবে এবং দেশ এক অন্ধকার অমানিশায় নিমজ্জিত হবে। এই সংকট থেকে সমাধান একমাত্র জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাই করতে পারেন। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে তিনিই পারেন শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক দাবিদাওয়া পূরণ করে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে।


একুশে সংবাদ/স.ল.প্র/জা.হা
 

Link copied!