অলিম্পিকের নতুন আসর বসেছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। অলিম্পিককে বলা হয় ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। দুঃখজনক হলেও সত্যি, অলিম্পিকে পদক জেতা দূরের কথা; জয়ের সম্ভাবনাও আমরা তৈরি করতে পারিনি। অলিম্পিকের পদক না জেতা যে কতক দেশ আছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। বাংলাদেশের হয়ে গতবার বিভিন্ন ইভেন্টে ছয়জন অংশগ্রহণ করেছিলেন। যাদের মধ্যে আর্চারিতে রোমান সানাকে নিয়ে কিছুটা পদক জয়ের সম্ভাবনা দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু এবার সেই আশায় গুড়ে বালি।
অলিম্পিকের এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেবেন পাঁচজন ক্রীড়াবিদ। এর মধ্যে আর্চার সাগর ইসলাম গেমসে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বাকিরা পেয়েছেন আইওসির ওয়াইল্ডকার্ড। এদের মধ্যে সাগর ইসলাম, আর্চারি (রিকার্ভ একক), ইমরানুর রহমান, অ্যাথলেটিক (১০০ মিটার), রবিউল ইসলাম, শুটিং (১০ মিটার এয়ার রাইফেল), সামিউল ইসলাম রাফি, সাঁতার (১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল), সোনিয়া খাতুন, সাঁতার (৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল) ইভেন্টে অংশ নেবেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বরাবরের মতো এবারও পদক জয়ের চেয়ে নিজ নিজ ইভেন্টে ভালো করাই যেন অ্যাথলেটদের মূল লক্ষ্য।
অলিম্পিক পদক জিততে সব থেকে বেশি প্রয়োজন সেই স্বপ্নটা দেখা। পাশাপাশি দরকার অ্যাথলেটদের আর্থিক ও মানসিক সমর্থন। আমাদের দেশে ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। তবে অন্য গেমগুলোতে খুব বেশি স্পন্সর পাওয়া যায় না। অলিম্পিকে অংশ নেওয়া দেশের অনেক অ্যাথলেটের কথায় স্পষ্ট, পদক জেতার জন্য যে রকম অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা দরকার, তা আমাদের দেশে নেই। এ ছাড়া সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি এগিয়ে আসে তবে অন্তত কিছু ইভেন্টে পদক জেতার ব্যাপারে স্বপ্ন তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে আর্চারি কিংবা শুটিংয়ের মতো ইভেন্টে বাংলাদেশের পদক জেতা সম্ভব। অন্যান্য ইভেন্টে এ মুহূর্তে পদক জয়ের সম্ভাবনা তুলনামূলক অনেক ক্ষীণ। তাই নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আগাতে পারলে, পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি পর্যাপ্ত সহযোগিতা থাকলে এবং নিবিড় প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে পারলে অবশ্যই পদক জেতার মতো বিশ্বমানের আর্চার কিংবা শুটার তৈরি করা সম্ভব।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সামনে এলেই কেবল ফেডারেশনগুলোর তৎপরতা বেড়ে যায়। আর তা শুরুর কয়েক মাস আগে থেকে শুরু হয় প্রস্তুতি। সে ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল আশা করা কঠিন। বিশেষ করে অলিম্পিকের মতো আসরের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতির বিকল্প নেই। আর্থিক সমস্যার কারণে বিদেশি কোচের অধীনে প্রশিক্ষণেরও সুযোগ হয় না অনেক সময়। অনেক ক্রীড়া সংগঠক ফেডারেশন ও ক্রীড়া পরিষদের সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করেন। অলিম্পিকের পদক জয়কে বাস্তবে রূপ দিতে এখন থেকেই নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আগাতে হবে। ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে ক্রীড়া পরিষদের সমন্বয়হীনতা কমিয়ে আনতে হবে। সম্ভাবনাময় ইভেন্টগুলোর আর্থিক সহায়তা বাড়াতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসতে পারে, বিদেশি হাই প্রোফাইল কোচদের অধীনে নিরবচ্ছিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুব জরুরি। মাত্র ৬৩ হাজার জনসংখ্যার দেশ বারমুডা যদি টোকিও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতে নিজের দেশবাসীকে গর্বিত করতে পারে, তবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? হয়তো ভৌগোলিক কারণে এ অঞ্চলের মানুষ অ্যাথলেটিকসে তেমন সুবিধা করতে পারে না। তাই বলে কি কোনো ইভেন্টেই আমাদের পদক আসার মতো সম্ভাবনা নেই? আছে এবং সে স্বপ্ন দেখতে হবে।
একুশে সংবাদ/স.ল.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :