AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দুর্নীতি: সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক নীরব ঘাতক


Ekushey Sangbad
হক মোঃ ইমদাদুল
১২:২৬ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
দুর্নীতি: সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এক নীরব ঘাতক

বাংলাদেশ আজ এক সম্ভাবনাময় দেশ, যেখানে ১৭ কোটি মানুষের কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে উন্নয়নের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশের অগ্রযাত্রা প্রশংসনীয়। তবে, এই অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি।

দুর্নীতি এখন কেবল ব্যক্তিগত লাভের সীমাবদ্ধতায় নেই; এটি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে দুর্নীতির ভয়াবহতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রশাসন থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিচার বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোও এর কুফল থেকে মুক্ত নয়।

শিক্ষা খাতে দুর্নীতির ফলে মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। মেধাহীনরা অর্থ ও ক্ষমতার জোরে উচ্চপদে আসীন হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি রোগীদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে, যেখানে প্রয়োজনীয় ঔষুধ, উন্নত চিকিৎসা ও হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিচার বিভাগে ঘুষ ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি অনাস্থা তৈরি করছে।

এই দুর্নীতির করাল গ্রাস দেশের অর্থনৈতিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে, বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে। যদি এই সমস্যা সমাধান করা না যায়, তবে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কাজেই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা একান্ত জরুরি।

যে কোনো শারীরিক ব্যাধির চিকিৎসা রয়েছে, কিন্তু দুর্নীতির কোনো চিকিৎসা বা ঔষুধ নেই। এটি এমন এক ভয়ংকর ব্যাধি, যা সমাজকে ভেতর থেকে নিঃশেষ করে ফেলে, অনেকটা ক্যানসারের মতো। একবার সংক্রমিত হলে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না। এটি বাংলাদেশের জাতিকে নিঃশেষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একে প্রতিহত করতে প্রয়োজন সততা, সম্মিলিত প্রতিরোধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান। দেশ, জাতি বা সমাজ কারো একার নয়। সুতরাং, একে দূষিত বা দুর্বল করার অধিকার কারো নেই।
 

দুর্নীতির বহুমাত্রিক প্রভাব

দুর্নীতির প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে দৃশ্যমান। এটি শুধু ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়।
 

১. অর্থনৈতিক ক্ষতি ও প্রবৃদ্ধির অন্তরায়

দুর্নীতির ফলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ঘটে, বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয় এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। সরকারি প্রকল্প ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে দুর্নীতি থাকায় বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার হয় না। ফলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।

বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান দুর্নীতির কবলে পড়ে যথাযথভাবে ব্যয়িত না হওয়ায় জনগণের প্রত্যাশিত উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয় না। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের কারণে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হারান, যা ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বড় ধরনের হুমকি।

২. সামাজিক বৈষম্য ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্দশা

দুর্নীতির কারণে সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যাহত হয়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা শুধু ক্ষমতাবান ও ধনী শ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, যেখানে সাধারণ ও দরিদ্র জনগণ মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত থাকে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও দুর্নীতির প্রভাব সুস্পষ্ট। সরকারি বিদ্যালয় ও হাসপাতালে পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। স্বাস্থ্যখাতে ওষুধ, চিকিৎসা উপকরণ ও সেবার গুণগত মান নষ্ট হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে ঘুষ, ফি নিয়ে অনিয়ম ও প্রশ্নফাঁসের মতো সমস্যা শিক্ষার মান কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে সমাজে একটি অদক্ষ ও অনৈতিক প্রজন্ম গড়ে উঠছে, যারা ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্ব দিতে পারবে না।

 

৩. প্রশাসনিক দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা

প্রশাসনিক খাতে দুর্নীতির ফলে সরকারি কাজের গতি মন্থর হয়ে যায়। সরকারি দপ্তরগুলোতে ঘুষ ও স্বজনপ্রীতি সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয়।

পাসপোর্ট, জমির কাগজপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিকত্ব সনদসহ নানা সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেও যদি ঘুষ না দেওয়া হয়, তবে তাদের কাজ আটকে রাখা হয় বা অযথা জটিলতা সৃষ্টি করা হয়। ফলে জনগণের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা কমে যায় এবং অনেকে বিকল্প অবৈধ পথ খোঁজার চেষ্টা করে।

 

লেখক: হক মোঃ ইমদাদুল, জাপান

Link copied!