আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ আজ এক সংকটপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে। একদিকে শহরের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে বেড়ে চলেছে আবর্জনার পরিমাণ। এটি আমাদের পরিবেশ, স্বাস্থ্য, এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বিশাল হুমকি হয়ে উঠেছে। তবে, এই চ্যালেঞ্জকে যদি আমরা সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারি, তা হলে এটি আমাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ হয়ে উঠবে।
অবস্থা: বাংলাদেশের আবর্জনা ব্যবস্থাপনার সংকট
বাংলাদেশের শহর, গ্রাম, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-সবই এখন এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। সড়ক, বাজার, বাসাবাড়ি-এখানে স্তুপীকৃত আবর্জনা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে এক অভ্যস্ত দৃশ্য হয়ে উঠেছে। কেবলমাত্র ঢাকা শহরেই প্রতিদিন প্রায় ৫,০০০ টন আবর্জনা উৎপন্ন হয়, যা সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠছে—এই আবর্জনার দায়িত্ব কার? রাষ্ট্রের? জনগণের? নাকি আমাদের সবার?
জাপান থেকে শেখার সময় এসেছে: আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় জাপানের সাফল্য
জাপান আজ পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন দেশগুলোর একটি এবং এর পেছনে একটি দৃঢ় এবং সুশৃঙ্খল আবর্জনা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি রয়েছে। বিশ্বে জাপান তার কঠোর এবং কার্যকরী আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আদর্শ সৃষ্টি করেছে, যা অন্যান্য দেশগুলোকে অনুসরণ করতে প্রেরণা দেয়। তবে, এটি শুধুমাত্র কঠোর বিধি-নিষেধের ফল নয়, বরং একটি সুনির্দিষ্ট, পরিকল্পিত এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থার ফলস্বরূপ। জাপানে প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন আবর্জনা উৎপন্ন হয় এবং এর মধ্যে ৮০% পুনর্ব্যবহৃত হয়, যা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুনর্ব্যবহার হার।
কিভাবে জাপান প্রতিদিন আবর্জনা সংগ্রহ করে?
জাপানে আবর্জনা সংগ্রহ একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে করা হয়। প্রতিটি শহর, পৌরসভা এবং গ্রামের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম এবং সময় নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত, জাপানিরা সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে তাদের আবর্জনা সঠিকভাবে শ্রেণীবদ্ধ করে বাইরে রাখে। এ প্রক্রিয়ায় ৪টি প্রধান শ্রেণী থাকে:
১. প্লাস্টিক বর্জ্য
২. কাচের বোতল এবং ধাতু
৩. কাগজ এবং কাঠ
৪ খাদ্য বর্জ্য
এছাড়া, কাঁচামাল, বৈদ্যুতনিক দ্রব্য এবং বিপজ্জনক বর্জ্যও আলাদা করে সংগ্রহ করা হয়। এসব বর্জ্য নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয়। যেহেতু কিছু বর্জ্য হতে পারে যা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করতে হয়, সেহেতু
নাগরিকদের এসব বিষয়ে সচেতন করতে নিয়মিতভাবে নোটিশ প্রদান করা হয় এবং উপস্থিতির তালিকা (রোল কল) এর মাধ্যমে তাদের তথ্য জানানো হয়।
আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় কতো মানুষ কাজ করে?
জাপানে আবর্জনা সংগ্রহ এবং নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন প্রায় ৫০,০০০ জনেরও বেশি লোক কাজ করছে। এর মধ্যে অনেকেই স্থানীয় সরকারী কর্মচারী, এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও আছেন যারা এই কাজে নিয়োজিত। বেশিরভাগ কর্মীই আবর্জনা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করেন, তবে বিশেষজ্ঞরা বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার এবং প্রক্রিয়াকরণেও কাজ করেন।
অতিরিক্তভাবে, জাপানে এই উদ্যোগের জন্য বিশাল কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। প্রতিটি শহর ও এলাকার জন্য আলাদা কর্মী এবং বিভিন্ন পরিসেবা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবর্জনা সংগ্রহের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজের কারণে প্রতি বছর লক্ষাধিক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
আবর্জনা সংগ্রহের সময়সূচী এবং খরচ
জাপানে প্রতিটি এলাকায় আবর্জনা সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়, এবং সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ চলে। কিছু শহরে, বিশেষ করে বৃহত্তর শহরগুলোতে, আবর্জনা সংগ্রহের সময়সূচী খুবই কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় এবং নাগরিকরা সময়মতো আবর্জনা ফেলে না দিলে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।
এই আবর্জনা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। শুধু আবর্জনা সংগ্রহ এবং পরিবহন খরচের জন্য জাপান প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। তবে, এটি একটি বড় অর্থনৈতিক লাভও বয়ে আনে। পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে জাপান বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে। এছাড়া, প্রতিদিনের আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় এই খরচের একটি বড় অংশ স্থানীয় সরকারের বাজেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
জাপান থেকে শেখার উপায়
জাপানের সাফল্য শুধুমাত্র তাদের কঠোর বিধি-নিষেধের জন্য নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণ এবং সচেতনতার জন্য। তাদের একটি বিশাল জনগণ প্রতিদিন নিয়মিতভাবে আবর্জনা সংগ্রহের কাজে অংশগ্রহণ করে, যা তাদের সমাজের জন্য একটি বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে, যদি আমরা জাপানের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বিশেষ করে নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, শ্রেণীবদ্ধ আবর্জনা সংগ্রহ, এবং সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে এই পদ্ধতিকে বাস্তবায়িত করতে পারি, তবে তা আমাদের পরিবেশের উন্নতি এবং জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২২ মিলিয়ন টন আবর্জনা উৎপন্ন হয়, যার অধিকাংশই সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার বা নিষ্পত্তি হয় না। ঢাকা শহরেই প্রতিদিন ৫,০০০ টন আবর্জনা উৎপন্ন হয়, যা অনেক সময় রাস্তার পাশেই পড়ে থাকে বা সঠিকভাবে ফেলা হয় না। এসব আবর্জনা জমে পড়ে পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কলেরা, ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া, আবর্জনা নিয়ে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশে আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় জরুরি পদক্ষেপ
বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, যদি কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়, এবং সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়, তবে এটি সম্ভব। জনগণকে আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় বাধ্য করতে এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো
১. আবর্জনা ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন
বাংলাদেশে একটি জাতীয় "আবর্জনা ব্যবস্থাপনা আইন" (Waste Management Act) প্রণয়ন করা উচিত, যার মাধ্যমে জনগণকে আবর্জনা শ্রেণীবদ্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে বাধ্য করা হবে। এই আইনে জনগণের জন্য জরিমানা বা শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে, যদি কেউ আবর্জনা ফেলার নিয়ম না মানে। এতে জনগণ তাদের দায়িত্ব পালনে বাধ্য হবে এবং সঠিকভাবে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।
২. শ্রেণীবদ্ধ আবর্জনা সংগ্রহের বাধ্যবাধকতা
এটি একটি বিশেষ পদক্ষেপ যা জনগণকে আবর্জনা শ্রেণীবদ্ধ করে ফেলতে বাধ্য করবে। "শ্রেণীবদ্ধ আবর্জনা সংগ্রহ আইন" (Segregated Waste Collection Act) প্রণয়ন করে, সরকার আবর্জনা সংগ্রহের নিয়ম চালু করতে পারে। প্রতিটি পরিবারকে আবর্জনা পৃথক করার জন্য নির্দিষ্ট সিস্টেমে বাধ্য করা হবে এবং স্থানীয় সরকার এই প্রক্রিয়া কার্যকরী করবে।
৩. সরকারি সহায়তা এবং কর্মসূচি
সরকারকে একটি জাতীয় "আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ফান্ড" (Waste Management Fund) স্থাপন করতে হবে, যাতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পর্যাপ্ত তহবিল পাওয়া যায়। একই সঙ্গে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, বাজার এবং বিভিন্ন অঞ্চলে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন নিয়মিত কর্মসূচি চালু করবে। জনগণকে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালার মাধ্যমে এই বিষয়ে সচেতন করা হবে।
৪. প্রযুক্তি ব্যবহার এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আবর্জনা সংগ্রহ এবং নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সহজ এবং কার্যকর করা সম্ভব। "টেকসই প্রযুক্তি আইন" (Sustainable Technology Act) এর মাধ্যমে, সরকার আধুনিক রিসাইক্লিং মেশিন, রোবটিক প্রযুক্তি, স্মার্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম ইত্যাদি ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণকে বাধ্য করা যাবে সঠিকভাবে আবর্জনা নিষ্পত্তি করতে।
৫. অফিস, বাজার, এবং পাবলিক স্থানে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ
এটি একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ, যেখানে সরকার এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। "পাবলিক প্লেস আবর্জনা আইন" (Public Place Waste Act) প্রণয়ন করে, সব অফিস, বাজার, শপিং মল এবং পাবলিক স্পেসে আবর্জনা সংগ্রহের একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থা চালু করতে হবে। জনগণকে প্রতিটি স্থানে আবর্জনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানানো হবে এবং সবাইকে সচেতন করা হবে।
৬. অভিযান এবং শাস্তির বিধান
অধিকাংশ মানুষকে সচেতন করার জন্য সরকারকে কঠোর শাস্তির বিধান রাখতে হবে। "অবৈধ আবর্জনা ফেলা আইন" (Illegal Waste Disposal Act) প্রণয়ন করে, যারা সঠিকভাবে আবর্জনা না ফেলবে বা নিয়ম ভঙ্গ করবে, তাদের জন্য জরিমানা ও শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। জনগণ যদি জানে যে, আবর্জনা ফেলা বা শ্রেণীবদ্ধ না করার জন্য জরিমানা বা শাস্তি হতে পারে, তবে তারা নিয়ম মানবে।
৭. সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে আরও বেশি সচেতন করা যাবে। বিশেষ করে টেলিভিশন, রেডিও, সামাজিক মাধ্যম এবং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে তথ্য এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। "মিডিয়া সচেতনতা আইন" (Media Awareness Act) প্রণয়ন করে, গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে আরও প্রচার চালাতে উৎসাহিত করা হবে।
৮. সচেতনতা এবং সামাজিক আন্দোলন
আবর্জনা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ, এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে সমাবেশ, কর্মশালা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
৯. আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা গ্রহণ
বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে। বিশেষ করে, "আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আইন" (International Collaboration Act) প্রণয়ন করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং প্রযুক্তি গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
১০. স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক উদ্যোগের উৎসাহ
একটি "নাগরিক উদ্যোগ আইন" (Citizen Initiative Act) প্রণয়ন করা হতে পারে, যা নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ এবং সহযোগিতা প্রদান করবে। এটি স্থানীয় জনগণকে আরও বেশি সক্রিয়ভাবে আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
উপসংহার: জাপান এবং বাংলাদেশের তুলনায় আমাদের দায়িত্ব
আমরা যখন জাপানের সফল আবর্জনা ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির দিকে তাকাই, তখন একে শুধু একটি দেশের সফলতা হিসেবে দেখা উচিত নয়। এটি আমাদের জন্য একটি প্রেরণা, একটি দিকনির্দেশনা, যা আমাদের দেশের পরিবেশ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাপান প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন আবর্জনা উৎপন্ন করে, যার ৮০% পুনর্ব্যবহার করা হয় এবং সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয় বাকি ২০%। এর জন্য তারা একটি সুশৃঙ্খল এবং পরিপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা দেশটির প্রতিটি নাগরিকের জীবনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সফল হয়েছে। তাদের কঠোর নিয়ম ও সময়সূচী অনুসরণ করে, তারা তাদের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন এবং জনস্বাস্থ্যকে নিরাপদ রেখেছে।
তুলনামূলকভাবে, বাংলাদেশে আজও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা শহরের মতো বড় শহরগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৫,০০০ টন আবর্জনা উৎপন্ন হয়, তবে সেগুলোর পুনর্ব্যবহার এবং নিষ্পত্তি অনেকটাই সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমাদের শহর, গ্রাম, হাটবাজার—সবখানে আবর্জনার স্তুপ জমে যাচ্ছে। জনগণের সচেতনতার অভাব, সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং অব্যবস্থাপনা আমাদের এই বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তবে, এই পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব। জাপানের মতো আমাদেরও একটি সুশৃঙ্খল এবং কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমাদের সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। প্রথমেই আবর্জনা শ্রেণীবদ্ধ সংগ্রহ শুরু করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে, তাদের শেখাতে হবে কিভাবে আবর্জনা কমানো এবং পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব। সরকারের পাশাপাশি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলোর জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।
আজকের বাংলাদেশ আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ স্থান হতে পারে, যদি আমরা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এটি শুধুমাত্র একটি পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি আমাদের জাতীয় উন্নতির একটি অংশ। জাপান থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের দেশের পরিবেশ এবং জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য একত্রিতভাবে কাজ করতে হবে।
এটি আমাদের জাতীয় দায়িত্ব, যা শুধুমাত্র সরকারের নয়, আমাদের সবার—প্রতিটি নাগরিকের—উদ্যোগের ফল। আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশকে একটি পরিচ্ছন্ন, সুস্থ, এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলি। এখনই সময় এসেছে, আমাদের প্রতিদিনের দায়িত্ব পালন করার, যাতে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ রেখে যেতে পারি।
লেখক, সংগ্রাহক ও গবেষকঃ হক মোঃ ইমদাদুল, জাপান
আপনার মতামত লিখুন :