AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং


Ekushey Sangbad
এসএম শামীম
০২:৪১ পিএম, ৫ মার্চ, ২০২৫
আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিশোরগ্যাংয়ের তৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবল আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কিশোরগ্যাংয়ের ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ সমাজের জন্য একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সমাজে স্থিতিশীলতা ও শান্তি নষ্ট করছে।

কিশোরগ্যাংয়ের তৎপরতা ও বর্তমান পরিস্থিতি

কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা সাধারণত ছোটখাটো অপরাধ থেকে শুরু করে বড় ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি উত্তরা এবং মুহাম্মদপুরের মতো এলাকায় কিশোরগ্যাংয়ের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরায় প্রকাশ্যে এক দম্পতিকে কোপানোর ঘটনা সবার কাছে শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধীরা প্রকাশ্যেই হামলা চালায়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একদিকে যেখানে সাধারণ মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে চায়, সেখানে অপরাধীরা দিনের পর দিন তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কিশোরগ্যাংয়ের এই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে সমাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ক্রমশ বিঘ্নিত হচ্ছে।

এছাড়া, মুহাম্মদপুর এলাকায়ও কিশোরগ্যাংয়ের অপরাধমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিশোররা এখানে চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা এবং সহিংসতা চালাচ্ছে। এটি শুধু এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে না, বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ যখন এসব অপরাধের শিকার হয়, তখন তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা এবং জনমনে বিভ্রান্তি

কিশোরগ্যাংয়ের এই কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধী কিশোরদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতেও অপরাধীরা নির্দ্বিধায় তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। এর ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।

উত্তরা এবং মোহাম্মদপুরের মতো এলাকাগুলোতে কিশোরগ্যাংয়ের অপরাধের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, মানুষের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আস্থা কমে যায়। এক্ষেত্রে, জনগণ যদি মনে করে যে পুলিশ অপরাধীদের প্রতিরোধে অক্ষম, তখন তারা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে পারে। যেমনটি উত্তরা হামলার ঘটনায় দেখা গেছে, এলাকার বাসিন্দারা অপরাধী কিশোরদের ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিল। এটি অবশ্যই এক ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, কারণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ।

কিশোরগ্যাংয়ের উত্থানের কারণ

কিশোরগ্যাংয়ের এই উত্থানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, পারিবারিক অবহেলা অন্যতম একটি বড় কারণ। অনেক কিশোর পরিবারের সঠিক দিকনির্দেশনা না পাওয়ার ফলে অপরাধী গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, সঠিক বিনোদনমূলক ও সৃজনশীল কার্যক্রমের অভাব কিশোরদের অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। তৃতীয়ত, সামাজিক অস্থিরতা এবং নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে কিশোররা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে। তারা সমাজে ক্ষমতা, অর্থ এবং সম্মান পাওয়ার জন্য ভুল পথ বেছে নিচ্ছে।
তাছাড়া, কিশোরদের মধ্যে অপরাধের প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। অনেক কিশোর এসব মিডিয়ায় অপরাধী গ্যাং সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং তাদের অনুসরণ করছে। এই বিষয়গুলো কিশোরদের মনে অপরাধী মনোভাব গড়ে তোলে এবং তারা অপরাধকে একটি স্টাইল বা ‘‘কুল’’ হিসেবে মনে করতে শুরু করে।

প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ

কিশোরগ্যাংয়ের কার্যকলাপ বন্ধ করতে প্রয়োজন একাধিক কার্যকর পদক্ষেপ। প্রথমত, কিশোরদের জন্য বিকল্প কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করা জরুরি। সরকারের উচিত কিশোরদের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য সৃজনশীল কার্যক্রমের আয়োজন করা, যাতে তারা অপরাধের দিকে না ঝুঁকে। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো শক্তিশালী এবং কার্যকরী হতে হবে। পুলিশকে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অপরাধী গ্যাংগুলোর কার্যকলাপের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, পরিবার এবং সমাজের দায়িত্বও বেড়ে গেছে। বাবা-মা এবং অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি আরও নজরদারি এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, যাতে তারা অপরাধের পথে না চলে। কিশোরদের সঠিক মানসিক সহায়তা প্রদান এবং কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

পরিশেষে বলা যায়, কিশোরগ্যাংয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সমাজের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি উত্তরা এবং মুহাম্মদপুরের মতো এলাকায় ঘটেছে কিছু উদ্বেগজনক ঘটনা, যা কিশোরগ্যাংয়ের অস্থিতিশীল কার্যকলাপের প্রমাণ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পাশাপাশি, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। কিশোরদের জন্য বিকল্প সুযোগ তৈরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। কেবল তখনই আমরা একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো।

লেখক: সাংবাদিক
 

একুশে সংবাদ/এনএস

Link copied!