রাজধানীর ছাড়িয়ে এবার বিভাগীয় শহরেও কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি হচ্ছে রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি এবং টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ।
শনিবার ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় সদরে সমাবেশ করবে বিএনপি। সম্প্রতি সময়ে রাজধানীর মতো পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সব বিভাগীয় শহরেই মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শোডাউনের জবাবে পাল্টা শোডাউন করবে সরকারি দলটি। এতে একদিকে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতিক মাঠ,অপরদিকে অনিবার্য সংঘাতের পথে ধাবিত হচ্ছে দেশ। এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার মিত্ররা শনিবার ১০ বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। তাদের এই কর্মসূচি চলাকালে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অবস্থান নিয়ে সরকারি দলের নেতাকর্মী সর্তক অবস্থায় থেকে পাহারা দিবেন। তবে মুধুমাত্র রাজধানীতে অবস্থানের পাশাপাশি শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
সমাবেশে নজর রাখবে আ’লীগ: আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা বলছেন, বিএনপি ও তার মিত্রদের আগের কর্মসূচি ঘিরে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস ঠেকাতে মাঠে অবস্থান ছিল তাঁদের। গত ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ, ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল, ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান এবং পরে চার দিনের পদযাত্রাসহ সব কর্মসূচি ঘিরে সর্বাত্মক পাহারায় ছিলেন তাঁরা। কাল শনিবারও একই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ থাকবে। বিশেষ করে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের দিকে সতর্ক নজর রাখা হবে।
উত্তরে পাহারা বসানোর পরিকল্পনা: বিএনপিসহ মিত্রদের কর্মসূচি আগামীকাল দুপুর ২টায় শুরু করার পূর্ব ঘোষণা থাকলেও সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর সর্বত্র অবস্থান নেবেন। দিনভর এই অবস্থানকালে রাজধানীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে থেকে মিছিল-সমাবেশও করবেন তাঁরা। ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশেও সম্ভাব্য নৈরাজ্য ঠেকাতে নেতাকর্মীকে এমন সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর কোথাও সহিংসতা-নাশকতার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়া মাত্রই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকার সমর্থকরাও প্রতিহত করার চেষ্টা করবেন। এই অবস্থানের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তরের অধীন ২৬ থানা, ৫৪ ওয়ার্ড এবং একটি ইউনিয়নের সবগুলোতেই নেতাকর্মীকে নিয়ে পাহারা বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজ নিজ থানা ও ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অবস্থান নেবেন দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দক্ষিনে ৭৫টি ওয়ার্ডে থাকবে আ’লীগ: অপরদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আওতায় ৭৫টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীর সতর্ক পাহারা বসানো হবে। আর ২৪ থানার মূল পয়েন্ট কিংবা মোড়ে থানা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি তদারকি করবেন। কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রয়োজনীয় দিকনিদের্শনা দেবেন। ওয়ার্ড ও থানাওয়ারি অবস্থান তদারকি করতে যথারীতি মহানগর দক্ষিণের ৭৫ নেতাকে ৭৫টি এলাকা ভাগ করে দেওয়া হবে।
কামরাঙ্গীরচরে বড় সমাবেশ: ‘বিএনপি জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মাঠে সবচেয়ে বড় শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহম্মেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর। এছাড়াও সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা বক্তব্য দেবেন। এই কর্মসূচি সফল করতে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বর্ধিত সভা করে সব প্রস্তুতি গুছিয়ে রেখেছে।
প্রবেশপথে সর্তক অবস্থান নেবে তৃণমূল নেতারা: রাজধানীতে আগামীকাল শনিবার বিএনপির ১০ সাংগঠনিক বিভাগীয় মহাসমাবেশকে সামনে রেখে রাজধানীর প্রবেশপথে সর্তক অবস্থান নেবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা। কথা হয় মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পদপ্রত্যাশী শান্তুনুর খান শান্ত‘র সঙ্গে।
তিনি বলেন, বিএনপি কোনো সহিংসতা করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করব। তবে আমরা কখনোই মাঠ ছাড়ব না। আমরা শুধু মহানগর আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মোতাবেক সকাল থেকেই মাঠে সর্তক অবস্থায় থাকবো। তবে বিএনপি ১০ ডিসেম্বর কোনো অরাজকতা করলে আমাদের নেতাকর্মীরা জবাব দেবেন। কথা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৬৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মো: সোহেল খানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনায় শনিবার ভোর থেকে বিএনপির যেকোনো সহিংসতা মোকাবিলায় আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। এদিন কোনোপাড়া বাস্ট্যান্ডসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণস্থানে আমরা অবস্থান নেবো।
ডেমরা-সাইনবোর্ড ও স্টাফকোয়াটারে বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশ প্রতিরোধ করবে ৬৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মাহমুদুল হাসান পলিন। তিনি বলেন, আমার এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সবধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। কেউ মাঠে নামলে তাৎক্ষনিক ধরি দিয়ে বেধে রাখা হবে।
এ বিষয়ে ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু বলেন, বিএনপি সমাবেশের নামে নৈরাজ্য করবে,জনগনের জানমালে ক্ষয়ক্ষতি করবে আমরা সরকারি দলের কর্মী হয়ে বসে বসে দেখবো। এটা হতে পারে না। আমরাও কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেব। বিএনপি-জামায়াত উচ্ছৃঙ্খল হলে আমরা কঠোর জবাব দেব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে আছি এবং থাকবো। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত রাজপথে কোনো ধরনের সহিংসতা করলে রাজনৈতিকভাবে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেছেন, বিএনপির আন্দোরনের নামে কোথায়ও বিশৃঙ্খলা করলে চুল পরিমান ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, কেউ নৈরাজ্য করলে ইদুরের গর্ত থেকে ধরে আনবো। মুক্তিযোদ্ধের অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু ট্রেনিং এখনো ভুলে যায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি বিএনপিকে বলছি,আপনারা অশান্তি কইরেন না, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেন কেউ কিছু বলবে না।
এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এর সাথে। তিনি জানান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত সমাবেশের কর্মসূচি দেয়নি। তবে আগের মতোই শনিবার সকাল থেকে রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে না। কোথাও কোনো সহিংসতা ও নৈরাজ্যের আভাস পাওয়া মাত্রই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বিএনপির ১০ বিভাগীয় সমাবেশে অশান্তি সৃষ্টি করলে দাঁদভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় রাজপথে আছি এবং থাকবো আমরা।
একুশে সংবাদ.কম/শ.ই/বি.এস
আপনার মতামত লিখুন :