বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আদালতের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক নেতা খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
শনিবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করি বিচার ব্যবস্থার কাছে, যখন আমরা কোর্টে যাই। আজ এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক নেতা খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। নিম্ন আদালত শাস্তি দিলেন, আবার উচ্চ আদালত সেই শাস্তি বাড়িয়ে দিলেন। কোথায় যাব, কার কাছে যাব? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মেয়েটা খাদিজাতুল কোবরা, সে ইউটিউবে একটা উপস্থাপন করেছে, যার জন্য তাকে ১০ মাস ধরে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আটকে রেখেছে। কার কাছে যাব? আমাদের কষ্ট হয়, যখন আমাদের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়৷’
তিনি বলেন, আমাকে সেদিন একজন বললেন, আমাদের উন্নয়নটা কেমন জানেন, ‘আমরা টাই পরে আছি কিন্তু পায়ের নিচে জুতা নাই’। এটা হলো উন্নয়ন বিভ্রম। আজ আমাদের উন্নয়নের সেই অবস্থা।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতি আজ একটা চরম ক্রান্তিলগ্নে। এই ক্রান্তিলগ্ন কীসের? এটা জাতি হিসেবে নিজের অস্তিত্বের। জাতি হিসেবে আমি আমার কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো কিনা। জাতি হিসেবে আমার গণতন্ত্রের জন্য কতগুলো ইনস্টিটিউশন দাঁড় করাতে পারব কি না। আজ আপনারা জানেন, কীভাবে প্রত্যেকটা পেশাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। কীভাবে রাষ্ট্রের সমস্ত সম্ভাবনা ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যেকোনো পরিবর্তন কখনোই সম্পূর্ণ হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীরা সামনে না আসেন। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ডা. জোহার কথা। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে তিনি যে ভূমিকা রাখেন। ৯০ এর দশকে ডা. মিলনের হত্যার পরই মানুষ দেশে নেমে এসেছে। আমি যে কথাটি বলতে চাই, আপনাদের ভূমিকা গোটা জাতি দেখতে চাই।
ফখরুল আরও বলেন, সাংবাদিক ভাইরা অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের ক্ষমতা নেই। আমরা ১২ তারিখে যে সমাবেশ করলাম। অদৃশ্য জায়গা থেকে বলা হলো, এটার ট্রিটমেন্ট এমনভাবে করা হয়, যাতে আমাদের আর আওয়ামী লীগেরটা একই মনে হয়। তারা বলে, আমি সব সুষ্ঠু নির্বাচন করব। আমি সব সুবিধা দেব। দেখেন না বিদেশিদের সঙ্গে কতো মিটিং করে। মানুষকে কীভাবে বোকা বানানো যায়, সেটাই তারা করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সব সিনিয়র নেতাদের শর্ত দিয়ে দিয়েছে। শত-শত গায়েবি মামলা দিয়েছে৷ ইকবাল মাহমুদ টুকু, আমানউল্লাহ আমানকে শর্ত দিয়েছে। আমাদের চেয়ারপার্সন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে শর্ত দিয়েছে। হাবিবকে যাবৎজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। কিছুদিন আগে ইশ্বরদীতে মিন্টুসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তারা নাকি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করেছে। চিন্তা করতে পারেন? একটা গণতান্ত্রিক দেশে একটি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আপস? এর অধীনে নির্বাচন? আমাদের সামনে কোনো পথ নেই। আমাদের অবশ্যই এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি এই নীতিতে থাকতে হবে। এটা কোনো দলের ডাক নয়, এটা জাতির দাবি।
সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) মহাসচিব ডা. ফরহাদ আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। পরে, সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত নীরব পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
একুশে সংবাদ/জ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :