দেশজুড়ে বাড়ছেই ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রকোপ। রাজধানীসহ জেলা-উপজেলায় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তরা। হিমসীম খাচ্ছে সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। দ্বাদশ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধীদের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মসূচি মোকাবিলার পাশাপাশি এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতামূলক শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেশজুড়ে অলআউট প্রচারণায় নেমেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলটির সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ডেঙ্গু মোকাবিলায় মাঠে কাজ করছেন। শুধু দলীয় নেতাকর্মীরাই নয়, ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন রাজধানীসহ দেশের এমপি-মন্ত্রীরাও। এককথায় বলতে গেলে ডেঙ্গু ইস্যু শেষ না হওয়া পর্যন্ত অলআউট অ্যাকশনে থাকবে আওয়ামী লীগ।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বলছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৩৮৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৫ হাজার ১১ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৩৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজার ৮৩২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৯ হাজার ২০০ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ২২ হাজার ৬৩২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪২ হাজার ১৯৫ জন। ঢাকায় ২৩ হাজার ৯৯৩ এবং ঢাকার বাইরে ১৮ হাজার ২০২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটির ১৯৬ জন এবং সারা দেশে (ঢাকা সিটি ব্যতীত) ৫৫ জন মারা যান।
জানা গেছে, ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এর প্রকোপ রোধে চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করতে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে কতিপয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সভাপতির নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ, বাংলাদেশ মৎস্যজীবী লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর পাশাপাশি দলীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ ও সকল জনপ্রতিনিধিগণ, ওলামা-মাশায়েখসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-
১. সবাইকে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
২. বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট, অফিস-আদালত, শিক্ষপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টারসহ সকল চিকিৎসা কেন্দ্র, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন প্রভৃতি জায়গার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৩. চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মশামুক্ত রাখতে হবে।
৪. নিজে সচেতন থাকার পাশাপাশি শহর, গ্রামগঞ্জ, পাড়া-মহল্লা ও হাট-বাজারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।
এরআগে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা, নিজ নিজ এলাকা পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখা, জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনে ডাকে সাড়া দিয়ে ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও রক্তদান’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে ৭৫০ ‘যুব ব্রিগেড’ গঠন করেছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। যুব ব্রিগেট গঠন করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনায় প্রতিটি এলাকাভিত্তিক ‘যুব ব্রিগেড’ গঠন করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানের পাশাপাশি রক্তদান, প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাঈনুল হোসেন খান নিখিল প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০টি করে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেভাবে কাজ করছি। ইতোমধ্যে লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার ছাপিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যেই কমিটি গঠন করে যুবলীগ চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেবো। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। এডিস মশার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশেই কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা। এতে ছাত্রলীগের সকল ইউনিটির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করবেন। দেশে এডিস মশার আতঙ্ক শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মাঠে থাকবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মাঠে থাকবে এমপিরা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর পরই ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি-প্রকোপ রোধে মাঠে নেমেছে সরকার দলীয় এমপিরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডেঙ্গু ইস্যুতে মানুষের কাছে যেতে চাই এবং সহযোগীতার হাত বাড়াতে চাই এমপিরা।
তারা বলছেন, কারো একারপক্ষে কোনো কাজই সফলতা আসে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাই মিলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতামূলক কাজ করলে শীঘ্রই সফলতা আসবে। ঢাকা-৫ আসনে এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ির প্রতিটি অলিগলিতে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও প্রচারনা চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, ডেঙ্গু মোকাবিলায় নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে কাজ করছেন।
দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও ডেঙ্গুর ভয়াবহতাকে অনুধাবন করে ডেঙ্গু মোকাবেলায় নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন নারায়নগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ আল কায়সার। তিনি প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার বিকালেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহযোগীতার পাশাপাশি সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছেন। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দীয়া) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল কাহার আকন্দ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও যুবকদের সঙ্গে নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে চিকিৎসা খাতে সরকারের সফলতা তুলে ধরে লিফলেট বিতরন করছেন এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনামূলক দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।
শরীয়তপুর-১ আসনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। তিনি বলেন, সারা দেশেই ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আমাদের শরীয়তপুরও এই রোগ থেকে মুক্ত নয়। আমাদের নেত্রী একটা কথাই বলেন, আমরা জনগণের শাসক নই, সেবক। আমিও জনগণের সেবক হিসেবে থাকতে চাই। যেহেতু মানুষের জন্য রাজনীতি করি তাই ডেঙ্গু নিয়ে যখন সারা দেশের মানুষ বিপাকে আছে তখন পালং-জাজিরায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত সব মানুষের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুধু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নয়, ডেঙ্গু নিয়ে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে তুলতে প্রচারণামূলক কর্মসূচির কথা তুলে ধরেছেন অপু।
কেবল মাশরাফি কিংবা ইকবাল হোসেন অপু নন, আব্দুল্লাহ আল কায়সারই নয়, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী এডভোকে রানু আকতার ডেঙ্গু মোকাবেলায় এগিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, শুধু খেলার মাঠ ও ভবনসমূহে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলেই চলবে না, মাঠ কিংবা ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যে সব ফুলের টব রাখা হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীরবিক্রম) বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে যে যাই বলুক। ডেঙ্গুকে সহজভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ডেঙ্গু মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী প্রস্তুত আছে। এই ইস্যু শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাঠে কাজ করছেন। ডেঙ্গুকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি। এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল নেতাকর্মী মাঠে থাকবে।
একুশে সংবাদ/শ.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :