পোশাক শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইন্ধন দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ অভিযোগ তোলেন।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার ৬০০ করা হয়েছে; আমি মনে করি এই বিষয়ে তাদের আপত্তি থাকলে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বসে একটা সমাধানে আসার অবস্থান রয়েছে। সেটি না করে তারা এগুলো করলে নিজেদের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি দেশেরও ক্ষতি হয়। অবশ্যই গার্মেন্টসকর্মীদের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে।
আগুন, ভাংচুর কিংবা রাস্তা অবরোধ করে এই সমস্যার সমাধান হবে না বলেও জানিয়েছেন আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে, বিক্ষোভের যেসব ভিডিও ফুটেজ পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে—এরা সবাই বিএনপির কর্মী। কুষ্টিয়ার এক বিএনপির নেতা কোণাবাড়িতে এসে গার্মেন্টসকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করছিলেন। এভাবে যারা ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন কিংবা ধরতে পেরেছি, তারা সবাই বিএনপির কর্মী বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশের সেরা হাসপাতাল থেকে তিনি চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন এবং বিদেশ থেকেও বিশেষজ্ঞরা এসে তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কাজেই চিকিৎসার ঘাটতি হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। কয়েকদিন পর আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল হবে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে অবরোধের নামে গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আত্ঙ্ক রয়েছে।
নির্বাচন পর্যন্ত কী এভাবে চলতে থাকবে, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমিতো সেটা বলিনি। আমি বলেছি, তাদের চরিত্রই এমন। তারা সবসময়ই সন্ত্রাস ডেকে ষড়যন্ত্র করে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এসব কর্মসূচি দিচ্ছে। “আমি কয়েকটি উদহারণও দিয়েছি। সময়মতো নির্বাচনের ডাক দেবে নির্বাচন কমিশন, সবাই সেখানে অংশ নেবেন—এমনটিই জনগণের প্রত্যাশা। আমরা এখনো বলি, তারা নির্বাচনে আসবেন, নির্বাচন ছাড়া সরকার পাল্টানোর আর কোনো সুযোগ নেই। কাজেই নির্বাচনে তাদের আসতে হবে, যদি সরকার পরিবর্তন করতে চায়।”
যারা জ্বালাও-পোড়াও করছেন, তাদের খুঁজে খুঁজে বের করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ দেশের জনগণও যথেষ্ট সজাগ হয়েছে। জনগণও তাদের ধরিয়ে দিচ্ছে। আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি, যারা পেট্রোলের বোতল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন, তাদের জনগণ ধরিয়ে দিচ্ছেন। জনগণ যখন ঘুরে দাঁড়াবেন, তখন এগুলো অটোমেটিক্যালি (এমনি এমনি) বন্ধ হয়ে যাবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগারে, এ অবস্থা থাকলে তারা নির্বাচনে আসবেন কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচনে আসবেন কি-আসবেন না, এটা তাদের এখতিয়ার। আমাদের কথা হচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে লঙ্কাকাণ্ডের আগে আমরা বিএনপির কোনো নেতাকর্মীদের ধরিনি। সেখানে যখন নৃশংসতা ও বর্বরতা চলছে, তখন তারা মঞ্চে বসে ছিলেন। তারা তো দুঃখ প্রকাশ করতে পারতেন জাতির উদ্দেশ্যে যে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু কর্মী এসব করেছে। এটা আমাদের কাম্য ছিল না।
“কিন্তু দুঃখ প্রকাশের পরিবর্তে তারা অব্যাহত হরতারের ডাক দিয়েছেন। একজন বাসের হেল্পার শুয়ে ছিলেন, বাস পাহারা দিচ্ছিলেন, তাকেসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাসটি। এতে কী প্রমাণ হয়? বিএনপির বড়ো বড়ো নেতারা কী দায় এড়াতে পারবেন? তারা বলতে পারতেন—তোমরা বাসে আগুন দিও না, তোমরা এই মানুষ হত্যা করো না। বিএনপি নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা এসব থেকে বিরত থাকবে বলেই আশা করছি,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সম্প্রতি ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনে নামেন পোশাকশ্রমিকরা। এসময় কিছু কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগও হয়।
পরে সরকার আট হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে।কিন্তু এই বৃদ্ধির ঘোষণাও প্রত্যাখ্যান করেছেন শ্রমিকরা।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :