দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর। এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
গতকাল বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দেশের সাত স্থানে নির্বাচনী হামলা-সংঘর্ষে ২৯ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে জামালপুরে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় নৌকার ১০ কর্মী, লালমনিরহাটে নৌকার সমর্থকদের হামলায় লাঙলের ১৪ কর্মী এবং ঝিনাইদহে নৌকা ও ঈগলের কর্মীদের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর (কেটলি) নির্বাচনী ক্যাম্প এবং গাজীপুর, ফরিদপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে নৌকার প্রার্থীদের ক্যাম্পে আগুন ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার রাতে ও গতকাল বুধবার পৃথক সময়ে ঘটনাগুলো ঘটে।
সারাদেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, লালমনিরহাটে নৌকার সমর্থকদের হামলায় লাঙল প্রতীকের ১৪ কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট শহরের আলোরূপা মোড়ে জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মতিয়ার রহমানের একটি মতবিনিময়সভাকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহিদ হাসান অভিযোগ করেন, ভোটগ্রহণের সময় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন মাদরাসার এমন শিক্ষকদের নিয়ে নৌকার প্রার্থী মতবিনিময় সভা করছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে গেলে তাকে হেনস্তা করা হয়। তিনি সেখান থেকে দলীয় কার্যালয়ে ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ পর নৌকার সমর্থকরা এসে কার্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লাঙল সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোফাজ্জাল হোসেন বলেন, ‘জাতীয় পার্টির অফিসের আশপাশের দোকানদারদের সঙ্গে দোকানদারদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এ ঘটনার সঙ্গে নৌকার কোনো সমর্থক জড়িত নয়। ’
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জামালপুর সদরের শাহবাজপুরে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের দুটি প্রচারকেন্দ্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় নৌকার ১০ কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বিনা উসকানিতে আমাদের নৌকার প্রার্থীর প্রচারকেন্দ্রে হামলা চালায়। এতে ১০-১২ জন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।’
অভিযোগ অস্বীকার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘শাহবাজপুরে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সেখানে মারামারি হয়েছে বলে শুনেছি। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো কর্মী-সমর্থক জড়িত ছিল না। ’
এদিকে গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী টুসি এমপির নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগুনে তিনটি চেয়ার, টেবিল, ব্যানার ও পোস্টার পুড়ে গেছে। গত মঙ্গলবার রাতে পূর্ব বেড়াবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় রুমানা আলী টুসি বাউনী গ্রামের জাকির হোসেন সোহেল, শরিফুল ইসলাম (নাহিদ), জামান সরকার, আলমগীর, আজিজুল, কিবরিয়া প্রধানসহ ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসার ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং থানায় অভিযোগ করেছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের (কেটলি) নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে ত্রিপল, পোস্টার ও ব্যানার পুড়ে গেছে। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) ভোরে ইপিজেড থানার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল মাবুদ সওদাগরের বাড়ির পাশের নির্বাচনী ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর একটি ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার রাতে ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সাইনবোর্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঝিনাইদহ-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীর সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর (ঈগল) সমর্থকদের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সুরাট বাজারে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় সুরাট ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাতেই দুই পক্ষ থানায় মামলা করেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে নৌকার নির্বাচনী প্রচার অফিস লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল ভোরে দুর্বৃত্তরা কাশিয়াবাড়ী দোহাপাড়া গ্রামে এই ভাঙচুর করে।
এছাড়া সারাদেশে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু আসনে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেলেও, সেসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর মেলেনি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :