বরিশালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভার মাঠে দুপক্ষের সংঘর্ষে কৃষকলীগ নেতা মো. সিরাজ সিকদার (৬০) নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার সমাবেশ চলাকালে দুপুর আড়াইটার দিকে মাঠের পেছন দিকে বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ এবং রিটানিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে মনোনয়ন বাতিল হওয়া ড. শাম্মী আহম্মেদের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ ও প্রার্থী পঙ্কজ নাথ তখন মঞ্চে ছিলেন। এই দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে বিরোধ চলছে।
সংঘর্ষে নিহত সিরাজ আহমেদ হিজলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মহব্বত আলীর ছেলে। তিনি ওয়ার্ড কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। সিরাজকে দুপক্ষই তাদের লোক বলে দাবি করছে। আহত ২১ জনকে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৩ বছরের একটি শিশুও রয়েছে। চিকিৎসাধীন সবাই পঙ্কজ নাথের সমর্থক বলে জানিয়েছেন আহতরা। হাসপাতালে গিয়ে সিরাজের মৃতদেহ রাখা ঘরের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শাম্মীর অনুসারীরা।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম রাত ৮টার দিকে বলেন, ‘মৃতের শরীরে জখমের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া তার মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করা যাবে না।’ এসময় বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী এবং জেলা প্রশাসক ও রিটানিং কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুপক্ষের ধাওয়ার মধ্যে পড়ে গিয়ে সিরাজ নিহত হয়েছেন।
পঙ্কজ নাথের সমর্থক শামীম আহমেদ জানান, কয়েকটি লঞ্চে প্রায় ২০ হাজার সমর্থক নিয়ে তারা সমাবেশ মাঠের অদূরে কীর্তণখোলার নদীর কেডিসি ঘাটে নামেন। পঙ্কজ নাথ সেখান থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে সমাবেশ মাঠের দিকে যান। কর্মীদের মাঠে রেখে পঙ্কজ মঞ্চে ওঠেন। তিনি পৌঁছার পর ড. শাম্মী আহমেদ বক্তৃতা শুরু করেন। শামীম জানান, তখনও মিছিলের প্রায় অর্ধেক অংশ মাঠে পৌঁছায়নি। শাম্মী বক্তৃতা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তার অনুসারীরা বোতল, ইটের টুকরা ও বাঁশ দিয়ে পঙ্কজ সমর্থকদের পেটাতে শুরু করে। এসময় মাঠের মধ্যে হুলুস্থুল পরিবেশ তৈরি হয়।
শাম্মী সমর্থক মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘শাম্মী সমর্থকরা মাঠের মধ্যে দাঁড়ানো ছিল। পঙ্কজের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে ঢূকে তাদের দেখে কয়েকজনকে হাতের প্ল্যাকার্ডের বাঁশ দিয়ে আঘাত করে। তখন কয়েক মিনিট হুলুস্থুল হলে পুলিশ ও র্যাব এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।’ কামাল খান দাবি করেন, র্যাব ও পুলিশের লাঠিপেটায় পঙ্কজ সমর্থকরা আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, পঙ্কজ নাথের সমথর্কদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের বিরোধ শুরু হয় ২০১৬ সালে। দিনে দিনে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। একাধিকবার রক্তাক্ত সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়। একপর্যায়ে পঙ্কজবিরোধীদের প্রত্যক্ষ সমর্থন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লার একক নিয়ন্ত্রিত জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা কমিটির সুপারিশে গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর পঙ্কজ নাথকে দলীয় সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এরপরে পঙ্কজবিরোধীদের সমর্থনে মেহেন্দিগঞ্জের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ড. শাম্মী। তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হলেও অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল করেছেন জেলা রিটানিং কর্মকর্তা। শাম্মী মনোনয়ন পাওয়ার পরও হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে পঙ্কজ সমর্থকের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর হয়।
গত ২০ ডিসেম্বর পঙ্কজ এলাকায় ফিরলে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। শাম্মীর সমর্থকরা ভিন্ন বলয়ে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিন নৌকার মিছিল করছেন। তাদের দাবি, ২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শাম্মী প্রার্থিতায় ফিরবেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :