রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ লীগের (বিআরইল) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান সভাপতি, মোঃ সেলিম পাটওয়ারী কার্যকরী সভাপতি ও মনিরুল ইসলাম মজুমদার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ও সঞ্চালনা করেন সেলিম পাটওয়ারী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, এস এম লুৎফর রহমান, কক্সবাজার জেলা সভাপতি শামসুল আলম বাহাদুর। এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিআরইল-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রেনায়েল আলম, সরকার নাহারুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক প্রমুখ।
প্রধান অতিথি বলেন, রেলওয়ে দেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড়ো গণপরিবহন। রেলের উন্নয়ন হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি রেলশ্রমিকরাও উপকৃত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য রেলের ভেতরে কালো বিড়াল লুকিয়ে আছে। তাই বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও রেলের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। উল্টো প্রতি বছর রেলওয়েকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। লোকসানের কারণে পুরাতন রুটে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আবার নতুন রুটে রেলের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষরা।
রেলওয়েকে লাভজনক করতে হলে সর্বপ্রথম রেল প্রশাসনকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। বিশেষত রেলের কেনাকাটা হতে শুরু করে গ্রাহক সেবা পর্যন্ত রন্ধে রন্ধে দুর্নীতির যে আখড়া গড়ে উঠেছে তার মূলোৎপাটন করতে হবে। সারাদেশে রেলের বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব সম্পত্তি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে রেলের আয় বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে নিয়ে একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। কিছুদিন পর রেলখাতে যে অস্থিরতা দেখা যায় তা দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ করতে হলে এখানে অস্থায়ী বা আউটসোর্সিং চাকরি ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ দিতে হবে। রেলওয়ে শ্রমিকদের সকল ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। কাউকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করা যাবে না। প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা যাবে না।
সম্মেলনে নিম্নলিখিত ২৫ দফা দাবি গৃহীত হয়েছে :
১. বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় রেললাইন বাস্তবায়ন করে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে।
২. চাল, ডাল, তেল, আটা, পেয়াজ, আলু, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে শ্রমজীবী মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।
৩. বৈশ্বিক ঊষ্ণতা ও কার্বন নিঃসরণ প্রশমনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ প্রকল্পে বৈশ্বিক উষ্ণতারোধ ফান্ড পাওয়াসহ রেলওয়ের বিভিন্ন কেনাকাটায় কার্বন ট্রেড সুবিধা প্রাপ্য হবে।
৪. রেলওয়ের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন্দরসমূহে হ্যান্ডেলিংকৃত কন্টেইনারের ৫০% রেলের মাধ্যমে পরিবহনের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং প্রস্তাবিত আইসিডিসমূহ নির্মাণ পূর্বক সকল রেল ট্র্যাক ডবল লাইনে উন্নীত করতে হবে সে মোতাবেক জনবল ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।
৫. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ৯ম পে-কমিশন এর মাধ্যমে ১১ হতে ২০ গ্রেডের বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে এবং অন্তবর্তী সময়ের জন্য ৫০% মহার্ঘভাতা প্রদান করতে হবে।
৬. পেনশন ৯০% এর স্থলে ১০০% এবং গ্র্যাচুইটি প্রতি টাকায় ২৩০ টাকা এর স্থলে ৫০০ টাকা প্রদান করতে হবে। কর্মচারীদের ইন্সুরেন্স সরকার ঘোষিত ৮,০০,০০০/- (আট লক্ষ) টাকা ও দাফন-কাফন বাবদ ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা প্রদান করতে হবে।
৭. সকল ট্রেড ইউনিয়নের মতামতের ভিত্তিতে নিয়োগ বিধি ২০২০ এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করে দ্রুততার সাথে শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
৮. নিয়োগ বিধিতে মঞ্জুরীকৃত সকল পদের বিপরীতে পদোন্নতির ব্যবস্থা সংযোজন করতে হবে। কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীদের পোষ্যের চাকরির বিধান পূর্বের ন্যায় বহাল করতে হবে।
৯. রানিং স্টাফদের দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত মাইলেজ সুবিধা বাতিল করা যাবে না। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ বিমান এর সাথে মিলিয়ে তাদের সুবিধাদি আপগ্রেড করতে হবে।
১০. রেলওয়ের কল্যাণ ট্রাস্টকে সেনা কল্যাণের ন্যায় ঢেলে সাজাতে হবে এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।
১১. রেলওয়ের অপচয় দুর্নীতিরোধে টেকনিক্যাল নিরীক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে।
১২. রেলওয়ে হাসপাতাল ও ডিসপেন্সারী সমূহে নিয়মিত ডাক্তারসহ জরুরি ঔষধ ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. নিয়োগযোগ্য শূন্য পদ পূরণের জন্য স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেলপোষ্যদের ৪০% চাকরি কোটা নিশ্চিত ও সুষম বণ্টন করতে হবে।
১৪. দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ, খুলনা-মংলা রেলপথ ও বগুড়া-জামতৈল রেলপথ চালু করতে হবে।
১৫. লাকসাম-ঢাকা কর্ড রেলপথ, নোয়াখালী-সুবর্ণচর, সোনাইমুড়ি-লক্ষ্মীপুর, পদ্মা সেতু লিংকে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা, ভাটিয়ারী ষোলশহর, সান্তাহার-আমুরা, আবদুলপর-রাজশাহী ডুয়েলগেজ, ঢাকা-মানিকগঞ্জ পাটুরিয়া রেললাইনসহ প্রস্তাবিত সকল রেলপথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৬. নিরাপত্তা ও দ্রুত গতির স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ লেবেল ক্রসিং সমূহে ইন্টারলকিং সিস্টেম এবং আন্ডারপাস ও ওভারপাস চালু করতে হবে।
১৭. ০৩/১২/২০১৭ মহাপরিচালকের পত্রের মর্মমতে সকল টি.এল.আর সাবস্টিটিউটদের আত্মীকরণ করতে হবে। দক্ষ টি.এল.আরদের বাদ দেওয়া যাবে না। আউটসোর্সিং সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
১৮. পাহাড়তলী, সৈয়দপুর, কেলোকা; কারখানা সমূহকে আধুনিকায়ন করে ইঞ্জিন, কোচ, ওয়াগন নির্মাণ ও সংযোজনের কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৯. রেলওয়ে আবাসন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে এবং স্থান ও আয়তন ভিত্তিক বাসা ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। রেলওয়ের অতি পুরাতন (৫০ বছর উর্ধ্ব) বাসা-বাড়িসমূহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের লক্ষ্যে ৫% বাসা ভাড়া কর্তন সাপেক্ষে বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। এতে রেলের সকল বাসা-বাড়ি রেলকর্মচারীদের ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
২০. মহিলা কর্মচারীদের জন্য চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, পৃথক এবাদত খানা ও ওয়াশরুম এর ব্যবস্থা করতে হবে।
২১. রেলের অব্যবহৃত ভূমি রেল কর্মচারীদের স্থায়ী আবাসনের জন্য বরাদ্দ প্রদান করতে হবে এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত আবাসিক ভবন নির্মাণ করতে হবে এবং পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
২২. প্রস্তাবিত মেডিকেল কলেজে ৪০ % কোটা নির্ধারণ পূর্বক ৫০% রেয়াতিহারে রেলপোষ্যদের অধ্যয়নের সুবিধা দিতে হবে।
২৩. iBAS + + সংক্রান্ত সৃষ্ট জটিলতা দ্রুত নিরসন করতে হবে।
২৪. এলএম, এএলএম, ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ, অফিস সহকারী, মেডিকেল স্টাফ, ট্রেড এ্যাপ্রেন্টিস, অফিস সহায়ক, টিটিই, ট্রেন পরিচালক, কন্ট্রোল কর্মচারী ও কেবিন মাস্টারদের নায্য দাবি সমূহ পূরণ করতে হবে।
২৫. বি.আর.ই.এল এর পেশকৃত সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :