খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মিল মালিকরা শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত। তারা একে অপরকে দোষ দেন।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা একে অপরকে দোষ দেন। কথায় কথায় বলেন, সরকারকে সাহায্য করছে, বরং তারাই সরকারের কাছ থেকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা ও ঋণ নিয়ে সেই টাকায় গাড়ি-বাড়ি করছেন। আর বলেন, ব্যবসা নেই। মিল চালাতে পারছিনা।
চালের দাম বাড়ানোর জন্য মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের দায়ী করে মন্ত্রী বলেন, অবৈধপন্থায় ব্যবসা পরিচালনা করা থেকে সরে না এলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। মজুদদারদের লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। আইন হয়েছে, অচিরেই তা কার্যকর হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রায় প্রতিটি জেলায় ২-৩ জন করে ব্যবসায়ী আছেন, তারা প্রতিদিন সকালে মোবাইল ফোনে অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ধান-চালের দাম ঠিক করে দেন। এ সুযোগ তারা নিয়েছেন জাতীয় নির্বাচনের অন্তবর্তীকালে। সেটি এখনও তারা বহাল রেখেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সভায় মিল মালিকরা চালের দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী করেন কর্পোরেট ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের। জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম দুদু বলেন, মিলে কোনো ধান-চাল মজুদ করা হয়না। মজুদ করেন আড়তদার ও কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা।
সভায় এর পাল্টা জবাব দেন আড়তদাররা। শহরের রাজাবাজার চালের আড়তদার সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, কোনো আড়তেই চাল মজুত নেই। মিলাররাই দালালদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে ধান মজুত করে রাখেন।
সভায় অভিযানের বিষয়ে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উপর ক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী। মন্ত্রী খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এ কাজ প্রশাসন কেন করবে তোমরা কি ঘোড়ার ঘাস কাট? তোমরা কেন নিয়মিত বাজার মনিটরিং কর না?’
আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ জেলায় চালের দামের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে রোববার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী। এসময় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাজী সাইফুদ্দিন, বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আফসানা ইয়াসমিন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন-এ-কাইয়ুম প্রমূখ।
লাইসেন্স ছাড়া চাল মজুত রাখার দায়ে উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের শেরুয়া বটতলা এলাকার তুলি সেমি অটো রাইস মিল সিলগালা করা হয়েছে। পাশাপাশি গুদামঘরে রাখা সব চাল সরকারি দরে সরকারি খাদ্য গুদামে দেয়ার নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী। এছাড়াও লাইসেন্স না থাকায় মির্জাপুর এলাকার মেসার্স শাহ আলম রাইস প্রোসেসিং মিলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :