করোনা কাল একদিন কেটে যাবেই যাবে , পৃথিবী আবার শান্ত হবে ।আবার মাঠে বৈশাখী মেলায় মেতে উঠবে বাঙালী -.
সবাই কে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা .. সুস্থ থাকুন ঘরে থাকুন নিরাপদ থাকুন ।
“আমি মেলা থেকে তালপাতার এক
বাঁশী কিনে এনেছি ।”
বৈশাখ মাস এলেই কেবল আমরা -বিশেষ করে বাঙালিরা বুঝি , লাল সাদা রঙ আর ইলিশ পান্তা ।তবে এটাও ঠিক যে লোক উৎসব গুলো আছে জন্য পহেলা বৈশাখ এলে মনে হয় অনেকের -একদিন বাঙালি ছিলাম রে ।
উৎসব জাতীর প্রাণ । উৎসব জাতির সৃষ্টির চৈতণ্য ।যে জাতীর উৎসব নেই , সে জাতীর প্রাণ নেই । মানুষের নি: সঙ্গ একাকীত্বের দিন থেকে সমষ্টির জীবনের উত্তরণের পথেই উৎসবের সৃষ্টি হয় । প্রতিদিনের তুচ্ছতার উর্ধ্বে উৎসব । উৎসব জীবনের ছন্দস্পন্দন । আমাদের বর্ণিল
বৈশাখী উৎসব আসলে লোক উৎসব - যে উৎসব লোক বিস্তৃত , সাধারণ মানুষের আনন্দে মূর্ত , তাকে বলা চলে লোক উৎসব ।
উৎসব আসলে মিলনানন্দ । একের সঙ্গে এক , একের সঙ্গে বহুর মিলনে গড়ে উঠে উৎসব । আমরা জানি যে মানুষ তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠান ও আচার পালন করে থাকে । এই অনুষ্ঠান ও আচারের বৃহত্তর , সামগ্রীক ও সমষ্টিগত রূপ হলো উৎসব । উৎসব মানে বন্ধন , উৎসব মানে সামাজ সংহতি । পার্বণ হলো উৎসবের আদিরুপ ।
সমাজের ক্রমবিবর্তনে অগ্রসরের কারণে , আজকাল উৎসব ব্যপক , সর্বাত্নক ও বহুমুখী হয়ে উঠেছে । আজকাল মানুষ গোষ্ঠিগত নয় , বরং বিশ্বগত ।
আমরা যারা গ্রামে গন্জে বেড়ে উঠেছি , কম বেশী সবার নানারকম গ্রামীন উৎসব মেলার আনন্দ প্রাণে ধারণ করেই এখনো ফেলে আসা দিন গুলোর আনন্দ পোহাই ।
তবে তখন কার মেলার থেকে এখনকার মেলার আদল পাল্টেছ বটে । যুগের পরিবর্তনে মেলার পরিবর্তন । যেমন শিল্প মেলা , বৃক্ষ মেলা , বাণিজ্য মেলা , গ্রন্থ মেলা , পোষাক মেলা , কুটিরশিল্প মেলা , যুবমেলা ইত্যাদি । ইতিহাস ঘটালে জানা যায় যে , মহাভারতেও মেলার কথা আছে শঙ্কর মেলা , যে মেলায় নাকি পুরুষের শৌয্যবীর্য্যের প্রদর্শনী হতো ।বিক্রম আদিত্যের রাজত্বকালে কবি বা পণ্ডিতের মেলা হতো ।এছাড়াও গ্রীসে ও প্রাচীন রোমে ও মেলা বসতো । গ্রীসের অলিম্পিক , গিম্বিয়ান , মিনিয়ান , এবং ইসথোমিয়ান মেলা উল্লেখ যোগ্য । এসব মেলাও মানুষের শারিরীক ও মানষিক উৎকর্ষ বিধানই ছিল অন্যতম লক্ষ্য। আমাদের বাংলার মেলার প্রচলন বহুকাল থেকেই হয়েছে । মধ্যযুগের লড়াই , তরজা, বোলান , মুর্শিদা, পীর ফকির , আউল- বাউল , ভা সান যাত্রা , কথকতা , পালা গান ইত্যাদি ঘিরেই বসতো মেলা । এমন কি সাধক সন্ত , সন্নাস্যী, পীরদের থানে , দেউলে দরগায় , মন্দিরে, মঠে , মসজিদে , চার্চে মেলা বসতো , এখনো বসছে । তখনকার মেলা গুলো তে মূর্খ্য ছিল শারিরীক কলাকৌশল প্রদর্শন , কৃষিপণ্যের সমাবেশ ও বিপণন, সামাজিক সংস্কৃতির ক্রিয়াকর্মের উন্নতি বিধান , মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন । সর্বপরি মানুষে মানুষে ঐক্যসাধন বা সংহতি বিধান ।
কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে , এক শ্রেণীর মেলা প্রাচীন ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে চলে আসছে , আবার এক শ্রেণীর মেলা নতুন যুগে, যুগের প্রয়োজনে মানুষ সৃষ্টি করছে । হয়ত আগামী দিনেও করবে ।
সবার জন্য শুভকামনা।
শুভ নববর্ষ।
আপনার মতামত লিখুন :