শয়তান মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেয়। মন্দ কাজে প্রলুব্ধ করে। ক্রমে ক্রমে আল্লাহ কুফর ও শিরকে লিপ্ত করে। সবশেষে চিরদুঃখের ও অশান্তির জায়গা জাহান্নামে পৌঁছিয়ে দেয়।
৯৯. যারা ঈমান আনে ও তাদের রবের ওপর ভরসা করে, তাদের ওপর শয়তানের কোনো আধিপত্য নেই।
১০০. শয়তানের আধিপত্য শুধু তাদের ওপর, যারা তাকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে, আর যারা আল্লাহর সঙ্গে (অন্য কাউকে) শরিক করে। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৯-১০০)
তাফসির : আগের আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার কৌশল শেখানো হয়েছিল। মানুষের চেয়েও শয়তান হাজার গুণ বেশি ক্ষমতাবান।
শয়তানের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। অসহায় হয়ে মানুষ তখন নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে এবং আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে। ফলে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শয়তানের অশুভ থাবা থেকে রক্ষা করেন। এ প্রসঙ্গে আলোচ্য দুই আয়াতে বলা হয়েছে, শয়তান খাঁটি ঈমানদারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
যারা আল্লাহর ওপর দৃঢ়ভাবে ভরসা করে ও তাঁর আশ্রয় কামনা করে, আল্লাহ তাকে শয়তানের ক্ষতি থেকে হেফাজত করেন।
দ্বিতীয় আয়াতের মূলকথা হলো, সাধারণত যারা শিরক বা কুফরি করে, শয়তান তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। আর যদি কোনো মুসলমান শয়তানের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়, তাহলে শয়তান তার অন্তরে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয়।
আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের ওপর শয়তানের কোনো জবরদস্তি চলে না।
কিন্তু যারা নিজেরাই বিভ্রান্ত হয় ও শয়তানের অনুসরণ করে, তাদের শয়তানের পথে চলার অবকাশ দেওয়া হয়। এ বিষয়টিই দ্বিতীয় আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আল্লাহ তাআলা শয়তানের কর্মপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি ঈমানদারদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, এমন নয় যে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। বরং ঈমানদার মানুষের চিন্তাচেতনায় প্রভাব বিস্তার করার কোনো শক্তি শয়তানের থাকবে না।
শয়তান তাদেরই বিভ্রান্ত করতে সক্ষম, যারা সৎপথ অনুসরণ না করে শয়তানের পথ অনুসরণ করে।
তারা কারা, যাদের ওপর শয়তানের কর্তৃত্ব চলে না? যারা আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দা; যারা আল্লাহর আনুগত্য, দাসত্ব ও তাঁর ইবাদতে নিষ্ঠাবান। যারা ঈমান আনে ও ঈমানের পথে চলে। যারা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে। যারা শয়তান থেকে আত্মরক্ষায় সদা সতর্ক থাকে। যারা শয়তানের প্ররোচনা অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে। যারা শয়তানকে শত্রু হিসেবে জানে ও শত্রু হিসেবে গ্রহণ করে। এসব লোকের ওপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তাদের ওপর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব খাটাতে পারে না। শয়তান তাদের ভয় পায়। এর অর্থ এই নয় যে আল্লাহর খাঁটি বান্দারা কখনো পাপাচারে জড়ায় না। বরং এর অর্থ হলো—তাদের মন-মস্তিষ্ক ও জ্ঞান-বুদ্ধির ওপর শয়তান চূড়ান্ত প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। তাই কখনো কখনো তাদের মাধ্যমে পাপ কাজ সংঘটিত হলেও তারা খুব দ্রুত নিজেদের ভ্রান্তি উপলব্ধি করতে পারে। ফলে তারা তওবা করে ও ভবিষ্যতে পাপাচার ত্যাগ করার অঙ্গীকার করে।
শয়তান মানুষকে পাপে লিপ্ত হতে বাধ্য করে না। সে শুধু কুপ্ররোচনা দিয়ে মানুষকে পাপ কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। যারা পাপ করে ও অসৎপথে চলে, তারা নিজের ইচ্ছায়ই তা করে। ফলে এর দায়ভার তাদেরই নিতে হবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :