মা-বাবা সন্তানের প্রথম বিদ্যালয়। মা-বাবার কাছ থেকেই সন্তান ভালো-মন্দের শিক্ষা পেয়ে থাকে। মা-বাবার চোখেই সন্তান পৃথিবীকে দেখতে ও বুঝতে শেখে। সন্তানের মন-মনন তৈরিতে মা-বাবার ভূমিকা সব থেকে বেশি। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে... (বুখারি, হাদিস, ১৩৫৮, মুসলিম, হাদিস, ২৬৫৮, আহমাদ, হাদিস, ৭১৮১)
শৈশব থেকেই সন্তানের প্রতি যত্নশীল
ভালো-মন্দ, কোন কাজে আল্লাহর নাফরমানি শিশুরা তা বুঝতে অক্ষম। তাই মা-বাবাকে শৈশব থেকেই তাদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হবে, তাদের মনে শৈশব থেকেই গুনাহ-পাপাচারের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে। সন্তানকে কখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাপাচারের প্রতি উৎসাহিত করা যাবে না। কারণ, পৃথিবীতে কোনো মা-বাবা সন্তানকে ইসলামে নিষিদ্ধ কাজের বিষয়ে নিষেধ না করলে এবং এর ক্ষতির দিক না বুঝালে তাদেরকে পরকালে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। কারণ, তারা সন্তানের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করেনি।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
হে ইমানদারগণ, তোমারা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গ (স্ত্রী-সন্তানদেরকে) জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। (সূরা তারহীম, আয়াত, ৬)
সন্তানের পাপাচার ও অন্যায়ের দায়ভার
কোরআনের ভাষ্যমতে মা-বাবা সন্তানদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ না নিলে সন্তানের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের দায়ভার তাদেরকেও বহন করতে হবে। এমনকি তারা মারা যাওয়ার পরও সন্তানের গুনাহের একটা অংশ তাদের আমলনামায় জমা হতে থাকবে।
এক হাদিসে জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ ভালো কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে সে তার নিজের সওয়াবও পাবে এবং তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, তবে তাদের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না। আবার কেউ মন্দ কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে তার উপর নিজের গুনাহ বর্তাবে উপরন্তু তার অনুসারীদের সম-পরিমাণ গুনাহের অংশীদারও হবে, কিন্তু তাতে অনুসরণকারীদের গুনাহর পরিমাণ একটুও কমানো হবে না। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ, হাদিস, ২০৩)
মা-বাবা সন্তানকে পাপাচার থেকে বিরত রাখলে...
তবে মা-বাবা যদি সন্তানকে পাপাচার ও গুনাহ থেকে বিরত রাখেন এবং তাদেরকে সঠিক ইসলামি শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং মা-বাবা পৃথিবীতে কখনো সন্তানকে পাপাচারের প্রতি উৎসাহ না দিয়ে থাকেন কিন্তু এরপরও সন্তান পাপাচারে লিপ্ত হয়, তাহলে সন্তানের এমন কাজের জন্য মা-বাবাকে কবরে শাস্তি ভোগ করতে হবে না।
আর সন্তান যদি মা-বাবার দেখানো পথ অনুযায়ী নেক আমল করে তাহলে মা-বাবার কবরে এর সওয়াব পৌঁছাবে। এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ৪৩১০)
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :