মানব জাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাজিল করেছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, এটি এমন কিতাব, যার মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। এটা হিদায়াত এমন ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য, যারা অদৃশ্য জিনিসসমূহে ঈমান রাখে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা-কিছু দিয়েছি, তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে। (সূরা বাকারা, আয়াত, ২-৩)
হেদায়েতের বাণী কোরআন তিলাওয়াত মুমিনের হৃদয়কে সতেজ রাখে এবং তার হৃদয়ে মহান রবের ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। বর্ণিত হয়েছে, মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করা হলে কম্পিত হয় এবং তার আয়াতসমূহ তাদের কাছে পাঠ করা হলে তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে। আর তারা তাদের রবের ওপরই নির্ভর করে’ (সূরা আনফাল, আয়াত, ২)
অপর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এরা সেই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখো, আল্লাহর জিকিরই সেই জিনিস, যা দিয়ে অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয় (সূরা আর রাদ, আয়াত, ২৮)।
হাদিসে কোরআন তিলাওয়াতকে সর্বোত্তম ইবাদত বলা হয়েছে। (বুখারি, হাদিস, ৫০২৭)।
কোরআন তিলাওয়াত মুমিনের আমলের পাল্লা ভারি করে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের কোনো একটি অক্ষরও পাঠ করবে, সে নেকি পাবে। আর নেকি হচ্ছে আমলের ১০ গুণ। আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর ও মীম একটি অক্ষর। (তাই আলিফ, লাম ও মীম বললে ৩০টি নেকি পাবে) (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস, ২১৩৭)।
কোরআন তিলাওয়াতের সময় পবিত্র পরিচ্ছন্ন হওয়া জরুরি। এবং সুন্নতের অনুসরণ জরুরি। আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কালাম কোরআন তিলাওয়াতের সময় এর মর্যাদা, গুরুত্ব ও সম্মান বজায় রাখতে হবে। এসময় অজু অবস্থায় উত্তম পোশাক ও টুপি পরিধান করে কিবলামুখী হয়ে তিলাওয়াতের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
কেউ পবিত্র অবস্থায় খালি গায়ে তিলাওয়াত করতে চাইলে তা জায়েজ হবে। কিন্তু আলেমরা এমন করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান এবং এ বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন। তাদের মতে, তাসবিহ, দোয়া-দরুদ ও মোনাজাত খালি গায়ে জায়েজ হলেও উল্লিখিত পদ্ধতিতে করা বাঞ্ছনীয়।
কোরআন তিলাওয়াতের বেশ কিছু আদব রয়েছে। যা হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। কোরআন তিলাওয়াতের সময় আদবগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।
কোরআন তিলাওয়াতে আদবগুলো হলো-
১. পবিত্র হয়ে পরিচ্ছন্ন স্থানে কিবলামুখী হয়ে বসা।
২. নিজেকে আল্লাহর সামনে তুচ্ছ জ্ঞান করা।
৩. আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়ে তিলাওয়াত শুরু করা।
৪. ধীরে ধীরে অনুভব করে তিলাওয়াত করা।
৫. রহমতের আয়াতে রহমত প্রার্থনা করা।
৬. শাস্তির আয়াতের বেলায় পানাহ চাওয়া।
৭. জনসমাগমের জায়গায় তিলাওয়াত না করা।
৮. তিলাওয়াতকালে দুনিয়াবি কাজে মশগুল না হওয়া।
৯. অন্য কোনো কাজ করতে হলে কোরআন বন্ধ করা।
১০. কোরআনের অক্ষর-শব্দ-বাক্য শুদ্ধ ও সুন্দরভাবে সুর করে আদায় করা।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :