আমরা দিন দিন এতটাই উদাসীন হয়ে উঠছি যে, জানাশোনার পরও আমরা কেবল অন্যায়, অশ্লীলতা ও শরয়ি সীমালঙ্ঘনের পেছনেই ছুটে চলছি অবিরত। যেখানে ইসলামের শিক্ষা, ‘তোমরা অশ্লীলতার ধারে কাছে যাবে না।’ সেখানে অশ্লীলতা ও শ্লীলতাহানি ঘটে এমন পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।
এমনকি আমরা অনেকে ইসলামের হালাল বিধানকে হালাল জানার পরও তা মানছি না। কিংবা আমাদেরকে হালাল উপার্জন করতে হবে। হালাল খাবার গ্রহণ করতে হবে। অবৈধ উপায়ে সম্পদ ও অর্থ উপার্জন ত্যাগ করতে হবে। এসব মানার পরিবর্তে বরং এগুলোকে এড়িয়ে চলাকেই জাগতিক সফলতা মনে করছি।
ভাবছি, আমরা যত পয়সা কড়ি সম্পদশালী হতে পারব, ততই বুঝি সফলতা আসবে। বাস্তবে বাহ্যত এমন লোক সাময়িক সুখ শান্তি সমৃদ্ধি অর্জন করলেও ; বাস্তবে তা চিরস্থায়ী হয় না। সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা সম্ভব হলেও। এই সম্পদ ও প্রাচুর্য কোনো কাজে আসে না। এমনকি হিতে বিপরীতও হয়। এমন বেশ কিছু নজির আমরা সম্প্রতি দেখতে পেয়েছি সংবাদ মাধ্যমে।
বয়োবৃদ্ধ বাবা মারা গেছেন। সন্তানরা তার কাফন দাফন সম্পন্ন করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, বরং তারা আগে বাবার জায়গা জমি বণ্টন করার জন্য লড়াইয়ে মত্ত হচ্ছেন। সামাজিক চাপের মুখে এরপর তারা একরকম বাধ্য হয়ে মৃতের দাফন সম্পন্ন করেছেন। এটি আমাদেরকে কী বার্তা দিচ্ছে? তবে আমরা কী মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুত্বের দিকে ছুটছি!
আচ্ছা দুনিয়ায় এত এত জায়গা জমির মালিক, জগৎ শ্রেষ্ঠ ধনকুবের, প্রসিদ্ধ ধনী। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মালিক। কেউ কী তাদের অর্থ কড়ি সম্পদ সাথে নিয়ে পৃথিবী ছেড়েছেন? এমন দু একটি উদাহরণ কী আছে আমাদের কাছে? তবে আমরা এই অন্যায় অর্থ অর্জন ও সম্পদ গ্রাসের পেছনে কেন ছুটছি? যা কখনো কোনো উপায়েই আমাদের জন্য বৈধ নয়।
কেনো আমরা এই অবৈধ অর্থ সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে উঠছি। এমনকি এমনও সংবাদ শোনা যাচ্ছে দৈনিক পত্রিকা মারফত যে, আপন ভাই বোনের হক-অধিকারও নষ্ট করা হচ্ছে। আমাদের মতো অনেক মানুষই আমরা এসব করছি। নিকটাত্মীয়দের জায়গা জমি সম্পদ আত্মসাৎ করছি। ভুলভাল বুঝিয়ে তাদের সম্পদ গ্রাস করার অবৈধ লোভ সংবরণ করতে পারছি না।
অথচ সম্পদ অর্থ বিত্ত এগুলো কেউ সঙ্গে নিয়ে কবরে যায় না। কেউ গিয়েছেন। পৃথিবীতে এমন কোনো নজির নেই। এটাই বাস্তবতা।
আর যদি জীবিত অবস্থায় আমরা আমাদের জমানো অঢেল অর্থ সম্পদগুলো সঠিকভাবে বিভিন্ন দাতব্য কাজে ব্যয় করি। জনসেবায় খরচ করি। মসজিদ মাদ্রাসা সংস্কার করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক মেরামত ও রাস্তাঘাট সম্প্রসারণে অর্থ দান করি। শিক্ষা দীক্ষায় ব্যয় করি। তবে কতই না ভালো হয়। অবশ্যই সে দিন আসার আগে, যে দিন আমাদের অর্থকড়ি সম্পদ কোনো কাজে আসবে না।
এজন্য পবিত্র কোরআনের নির্দেশ হলো আমরা যেন ভালো কাজে খরচ করি। ভালো কাজের সহযোগী হই। মন্দ কাজে ব্যয় থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কল্যাণ ও তাকওয়ার কাজে একে অপরের সহযোগী হও। অন্যায় ও পাপাচারের কাজে সহযোগী হয়ো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দানে কঠোর। (সুরা মায়িদা-০২)
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দান করার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবি হজরত সাআদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন। তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও বিনিময় তোমাকে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারি)
আমাদের মনে রাখা উচিত, আমাদের সঞ্চিত রেখে যাওয়া অর্থ কড়ি সম্পদ এগুলো মৃত্যুর পর আমাদের কোনো কাজে আসবে কিনা? তা আমাদের কারও জানা নেই। তাই জীবিত অবস্থায় এখনই উপযুক্ত সময় হলো, আমরা যথাসাধ্য যে কোনো ভালো কাজে অংশ গ্রহণ করব। যাবতীয় মন্দ অন্যায় অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকব। যথাসময়ে সম্পদের সঠিক ব্যবহার করব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হন।
এবুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :