রাজধানীর যাত্রবাড়ীর গৃহিণী আসিফা তাহমিনা এবছর রমজানের ছেলে-মেয়েদের হোটেলে বানানো ইফতারি কিনে খাওয়ান। এর কারণ বেলা ১১টার পর থেকেই গ্যাস থাকেনা। আর গ্যাস আসে গভীর রাতে। তা দিয়ে কোনোরকম সাহরি বানিয়ে নেন। এ প্রতিবেদককে আসিফা তাহমিনা বলেন, রমজানে দিসে গ্যাস না থাকার কারণে এক দিনও বাসায় ইফতার বানাতে পারিনি। চিন্তা করছি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনব। এভাবে আর চলছে না।
আসিফা তাহমিনার মতোই গ্যাস স্বল্পতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। রান্নার সময় গ্যাস সংকট। তিতাসের ক্ষুব্ধ কয়েকজন গ্রাহক প্রতিবেদককে বলেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে তারা হিমশিম খাচ্ছি। এর পর প্রতি মাসে গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে। কিন্তু রান্নার প্রয়োজনে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এলপি গ্যাস, ওভেন ও ইলেকট্রিক চুলা কিনতে হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, রমজানে গ্রাহকদের গ্যাস সংকটে পড়তে হচ্ছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আবার শুরু হলেও তা আগের তুলনায় কম। এ ছাড়া ঢাকা ও আশপাশের এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেশি হওয়ায় আগের চেয়ে গ্যাসের চাহিদাও বেড়েছে। এছাড়া রমজানে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকেও (পিডিবি) গ্যাস দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, তিতাসের এলাকাগুলোতে দৈনিক ২১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে। কিন্তু আমরা এখন পাচ্ছি ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখনো ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি । গ্যাসের এই সংকট পুরো গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার রমজান মাস শুরুর পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি আবাসিকে সাহরি ও ইফতারের সময়ও গ্যাস থাকছে না। থাকলেও গ্যাসের চাপ এতই কম যে তাতে রান্নার কাজ করা যাচ্ছে না।
রাজধানীর রায়েরবাগ, ধোলাইপাড়, টিকাটুলী, মালিবাগ, মিরপুর, মগবাজার, আজিমপুর, লালবাগ, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, মতিঝিল, সেগুনবাগিচা, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকাগুলোতে গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া গেছে।
পেট্রোবাংলার থেকে জানানো হয়, শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাসাবাড়িতে সরবরাহ কমানো হয়েছে। আবার রমজানে বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
দেশে এখন দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট। সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে আসে ২২৫ থেকে ২৩০ কোটি ঘনফুট। আর বাকিটা এলএনজি আমদানি করে মেটানো হয়। ২০৩০ সালে দিনে গ্যাসের চাহিদা হবে ৫৬০ কোটি ঘনফুট। এর কতটা আমদানি করে মেটানো হবে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পেট্রোবাংলা।
বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মিরপুর, খিলগাঁও, শাহজাহানপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের সংকট চলছে। এ বিষয়ে গ্রাহকরা আমাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিতাস কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি। গ্যাসের সিস্টেম লসের নামে তিতাস যদি চুরিটা বন্ধ করতে পারত, তাহলেও এই সংকট এত তীব্র হতো না।
জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, চলমান সেচ ও গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এখন সহনীয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সামনের দিনে জ্বালানির বৈশ্বিক বাজারে প্রভাব না ফেললে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি এখনকার মতোই ভালো থাকবে।
লালমাটিয়ার বাসিন্দা শেখ সাইফুর রহমান বলন, প্রায় এক মাস ধরেই দুপুরের পরে প্রায়ই গ্যাস থাকে না। তাই রোজার আগে আগে সিলিন্ডার কিনেছি। এখন দুপুরে গ্যাস যায় আসে ইফতারের পরে। সিলিন্ডারের চুলায় ইফতারের ব্যবস্থা করছি।
পেট্রেবাংলার সূত্র জানায় জানা গেছে, গত সপ্তাহে গ্রিডে গড়ে গ্যাস সরবরাহ ছিল ২ হাজার ৮৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রায় ২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি প্রয়োজন। তবে গত সপ্তাহে সরবরাহ আরও ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট বেশি ছিল। কিন্তু এরপরও রান্নাঘরে চুলায় গ্যাস নেই।
একুশে সংবাদ.কম/আ.জ.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :