সরকারী চালের বস্তা পরিবর্তন করে গুটি স্বর্ণা নামে সরকারী চাল বাজারে বিক্রি করছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার অসাধু কিছু ব্যবসায়ী। আর এসব সরকারী চাল বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রনালয়ের অধিনে সরকার প্রতিবছর মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে থাকে। সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারীত ওজনের বস্তায় এসব চাল ক্রয় করা হয়। ক্রয় করা এসব চাল নির্ধারীত সুফল ভোগীর মাঝে বিতরন ও বিক্রি করে আসছে খাদ্য মন্ত্রনালয়ে। এর মধ্য নির্ধারীত ডিলারের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির সুফল ভোগীদের মাঝে প্রতি মাসে কার্ড প্রতি ৩০কেজি হারে ১৫টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করে আসছে। একই ভাবে ভিজিডি কার্ডধারী সুফল ভোগীদের মাঝেও কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিনামুল্যে বিতরন করা হয়।
তাই ওজন ঠিক রাখতে এবং এসব সুফল ভোগীদের মাঝে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাল বিতরন ও বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তার উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী ৩০ কেজি ওজনের চাল ক্রয় করেন। একই ভাবে ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির জন্য তা সরবরাহ করে থাকে।
এর বাহিরে আর কোন বস্তা ৩০ কেজি ওজনের কেনা হয় না। আর এসব চালের বস্তায় খাদ্য অধিদফতরের সীলমোহর দেয়া থাকে। যাতে খুব সহজে তা সরকারী সম্পদ বলে চিহ্নিত করা যায়।
কিন্তু এইসব চাল সুফল ভোগীদের কাছে বিক্রি না করে কৌশলে কালো বাজারে বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হচ্ছেন অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। এ ক্ষেত্রে তারা পন্থা অবলম্বন করে খাদ্য অধিদফতরের সীলমোহর যুক্ত বস্তা পরিবর্তন করে অন্য চাল আড়তের সীলমোহরের বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে সরবরাহ করছে।
বেসরকারী চাল আড়তগুলোর বাজারে সরবরাহ করা চাল প্রতি ছোট বস্তায় ২৫ কেজি ও বড় বস্তা ৫০ কেজি ওজনের। ৩০ কেজি ওজন শুধুমাত্র সরকারী চাল। এ কারনে চক্রটি সরকারী চালের ৩০ কেজির বস্তা পাল্টিয়ে ২৫কেজি ওজনের নতুন বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে দেদারছে বিক্রি করে আসছে।
এ ক্ষেত্রে একদিকে যেমন সরকারী সম্পদ কালোবাজারে বিক্রি করছে। একই ভাবে নিম্নমানের চালকে গুটি স্বর্ণাসহ বিভিন্ন নামে ভুয়া সীলমোহর দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারীত করছে অসাধু ব্যবসায়ীর এ চক্রটি।
লালমনিহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম চৌধুরী মোড় এলাকার মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের গুদামে শুক্রবার (৪ আগষ্ট) দুপুরের পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শত শত সরকারী চালের বস্তা। আর এইসব সরকারি ৩০ কেজি ওজনের চালের বস্তা পরিবর্তন করে ২৫ কেজি ওজনের দিনাজপুরের চিতা বাঘ মার্ক গুটি স্বর্ণা নামে প্যাকেট করা হচ্ছে। প্যাকেট শেষ হলে দ্রুতই তা চলে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন বাজারে। খুবই নিরাপত্তার সাথে অনেকটা গোপনীয়তা রক্ষা করেই করা হচ্ছে বস্তা পরিবর্তন ও সরবরাহের কাজ। গোপন ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারন করা হলেও ক্যামেরা ওপেন করা যায়নি। সেখান থেকে সাংবাদিকরা চলে আসা মাত্রই কৌশলে সড়ানো হয় সবকিছুই।
স্থানীয় একাধিক চাল ব্যবসায়ীর দাবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসুচি ও ভিজিডি`র এসব চাল কম দামে ক্রয় করে বস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে অধিক মুল্যে বিক্রি করছে এ চক্রটি। এভাবে তারা দীর্ঘ দিন ধরে সরকারী সম্পদ তছরুপ করে জনগনের সাথে প্রতারনা করছে। উচ্চতর তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের মালিক অলিয়ার রহমান প্রথম দিকে ক্রেতার পরিচয়ে মুখ খুললেও পরে সাংবাদিক পরিচয়ে পুরো বিষয় গোপন করেন। প্রথম দিকে অলিয়ার রহমান বলেন, ‘সরকারী এসব চাল কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন ভাইয়ের। আমি শুধু নই, বেশ কিছু গুদামে দেয়া আছে এসব চাল। প্রায় দুইশত মেঃটন চাল দিয়েছিল। আমরা শুধু বস্তা পরিবর্তন করে ৩০ কেজির স্থলে ২৫ কেজি করে পাঠিয়ে দেই। তিনি কোথায় কি ভাবে বিক্রি করেন তা তিনি জানেন না।’
তবে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এসব চাল সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। গুদাম মালিককে আমি কোনভাবেই চিনি না। আমার নাম বললেই হবে? আমি তাকে এসব সরকারী চাল দিয়েছি তার কাছে কি ডকুমেন্ট আছে দেখেন। কোন অডিও বা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারে কি না। অলিয়ার কেন আমার নাম বলেছে তা আমি জানি না। এর সাথে তিনি জড়িত নন বলে জোর দাবি করেন।’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অনেকেই গোডাউনে গোপনভাবে এই প্যাকেটগুলো করছে। বিষয়টি আমি অবগত হলাম। অভিযান চালিয়ে সরকারী চাল ধরা পড়লে অবশ্যই ওইসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘সরকারি চাল কোন ভাবে কোন গোডাউনে থাকা কথা নয়, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি সরকারি চাল স্বর্ণা চাল নামে প্যাকেটজাত করে তাহলে অবশ্যই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :