একটি নির্যাতিত দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৫৩ বছরের আগের দেশটিতে মানুষের ভরসা ছিল কুপি-হারিকেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের উন্নয়নের। দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু ভাবলেন, দেশের শিল্পকারখানার উন্নয়নে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের কোন বিকল্প নেই। স্বাধীন দেশ গড়ে তোলার জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ে কাল ক্ষেপন করলেন না জাতির পিতা।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালের ৩১ মে সাবেক ওয়াপদা থেকে পৃথক হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আলোকিত ও শিল্পায়িত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের সমন্বিত সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতাসহ যাত্রা শুরু করেছিল।
১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেল তেল কোম্পানি থেকে কম মূল্যে (কিস্তিতে) ৫টি গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নেন। বঙ্গবন্ধুর এই দূরদর্শীতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখে। বঙ্গবন্ধু সেদিন গ্যাসক্ষেত্রে যদি কিনে না নিতেন, তাহলে আজ বাংলাদেশের মানুষ সাশ্রয়ী গ্যাস ব্যবহার দূরহ হতো।
বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ আজ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণও পথে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন, তখন বাংলাদেশের বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। গ্রামীণ জনপদে তখন ১০ ঘন্টার লোডশেডিং ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।
ঢাকায় পর্যায়ক্রমে লোডশেডিংয়ে সাধারণ মানুষ দিশে হারা। শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনায় এসেই শেখ হাসিনা বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে যতরকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার তার সবকিছুই করার ব্যবস্থা নেন। ভাড়ার বিদ্যুৎ ছাড়াও সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
শেখ হাসিনার দূরদর্শীতায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আজ ৩০ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ আদর্শ। প্রচুর খোলা জায়গা সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদ। সোলার বিদ্যুৎ দিয়ে কৃষক সেচ পাম্প চালানোর ব্যবস্থা করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট শর্তে চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বুধবার (৩০ আগস্ট) অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ৯টি প্রস্তাব উপস্থাপন হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের ১টি প্রস্তাবনা।
সাঈদ মাহবুব খান বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সৌদি আরবের অ্যাকোয়া পাওয়ার কোম্পানি, বাংলাদেশের কমফিট কম্পোজিট নিট লিমিটেড, ভিয়েলাটেক্স স্পিনিং লিমিটেড এবং মিডল্যান্ড ইস্ট পাওয়ার লিমিটেড বাংলাদেশকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও সৌদি আরবের অ্যাকোয়া পাওয়ার কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে বেসরকারি খাতে রামপালে ৩০০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ট্যারিফ অনুমোদনের প্রস্তাবটি অনুমোদন পেয়েছে।
নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে ১২ শতাংশ মূল্যছাড়, ৬ শতাংশ উৎসে কর এবং সাড়ে ১৮ শতাংশ প্ল্যান্টখাতে উক্ত কোম্পানিকে আনুমানিক ১০ হাজার ৭৬১ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :