নদীমাতৃক দেশ চীন। দেশটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাবরই এগিয়ে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যান্য পন্থাগুলির চেয়ে এই জলবিদ্যুতে বেশি আস্থা রাখে দেশের প্রশাসন। যা তাদের বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশে পরিণত করেছে। সেই অনুযায়ী আরও বেশি করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে জোর দেয় শি জিনপিং সরকার। অভিযোগ উঠেছে দেশটি নদীতে বাঁধ দিতে গিয়ে অন্য কোনও দেশের কথা ভাবছে না।
ভূপ্রকৃতিগত কারণে চিনের অবস্থান পড়শি দেশগুলিকে তার উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য করেছে। সেই সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনীতিগত ক্ষমতা তো রয়েছেই। যে কারণে চাইলেও জিনপিংয়ের উপর কথা বলতে পারে না ছোট দেশগুলি। আর এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের উপর। চীন থেকে বয়ে আসা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাংলাদেশের অন্যতম ভরসার নাম।
ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের বাঁধের কারণে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করে না। ফলে অনেক সময়েই বিপদে পড়তে হয় বাংলাদেশেকে। বাংলাদেশ ছাড়াও চীনের নদীবাঁধ সংক্রান্ত নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশ। তালিকায় আছে লাওস, তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশ।
চীনের ১৩টির মধ্যে অন্তত ১১টি জলবিদ্যুৎ উৎপন্নকারী নদীবাঁধের বিরুদ্ধে পানি আটকানোর সরাসরি অভিযোগ রয়েছে। শুকনো আবহাওয়ার সময়েও পানি ছাড়া হয় না বলে অভিযোগ। যে কারণে খরার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় দেশগুলিতে।
একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করে পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি করছে চিন। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, হিমালয় সংলগ্ন এলাকায় ভূমিধস এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নেপথ্যেও দায়ী চীনের এই সব প্রকল্প।
উচ্চতর ভূখণ্ডে অবস্থানের কারণে পাহাড়ি নদীগুলির সুতো ধরা আছে চীনের হাতেই। ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, ইরাবতী, মেকং প্রভৃতি নদীর উৎস চিনে। তাই পানির জন্য নীচের দেশগুলিকে চীনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়।
২০২০ সালের নভেম্বরে করোনা অতিমারির আতিশয্যের মাঝেই চিন তিব্বত সংলগ্ন এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের উপরিভাগে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিল। এই বাঁধের উচ্চতা হবে ৫০ ফুট।
ব্রহ্মপুত্র নদ ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, অসম এবং বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। এই বাঁধ তৈরি হলে ব্রহ্মপুত্রের উপকূলে পানিসঙ্কট দেখা দিতে পারে। এই প্রকল্পটি থেকে বছরে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে চিনের।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, পানির বিষয়ে আরও বেশি সহনশীল হওয়া উচিত চীনের। পানিবণ্টন নীতি, চুক্তিগুলি তাদের মেনে চলা উচিত। তা না হলে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ আগামী দিনে পানির অভাবে ধুঁকবে।
উল্লেখ,চীনে অনেক ছোট-বড় নদী ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। একসময় চিনকে বার বার কাঁদিয়েছে সে সব নদী। বন্যায় ভেসেছে বিস্তীর্ণ উপত্যকা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীকে ঠেকিয়েছে চীন। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে তারা। বাঁধ দিয়ে আটকেছে নদীর পানি। ফলে বন্যার পরিমাণ আগের চেয়ে কমে এসেছে।
বর্তমানে চীনে মোট নদীবাঁধের সংখ্যা ৯৮ হাজার। এর মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। চীনের কাছে যা অগ্রগতির হাতিয়ার, সেটাই কিন্তু তার প্রতিবেশী দেশগুলির অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একুশে সনবাদ/আ.ব.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :