AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

যাত্রী সংকটে গণপরিবহন, উপচে পড়া ভিড় মেট্রোরেলে


Ekushey Sangbad
জাহাঙ্গীর আলম
০২:১৪ পিএম, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪
যাত্রী সংকটে গণপরিবহন, উপচে পড়া ভিড় মেট্রোরেলে

পালকি দিয়ে শুরু ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা। শুরুর দিকে ধনীদের মধ্যে এটির ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। পরে আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষ পালকি ব্যবহার করতে শুরু করে। এরপর ঢাকার দিন বদলাতে থাকে ক্রমশ। চারশ’ বছরের এই পুরোনো শহর ঢাকার গণপরিবহনে আসে আমূল পরিবর্তন।

রাজধানীতে বসবাসকারী দুই কোটি মানুষের চলাচলে ভোগান্তি কমাতে ঢাকার রাস্তায় গড়াল আধুনিক গণপরিবহন মেট্রোরেল। উত্তরা-মতিঝিল লাইনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিস চলাচলের ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন শত শত যাত্রী। অন্যদিকে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে বাস সার্ভিসে। ফলে শুধু মতিঝিল-মিরপুর নয়, উত্তরার বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন রুটের বাসগুলোতে তীব্র যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে।

প্রতিদিন সকালে মতিঝিল থেকে মিরপুরে একটি বেসরকারি আফিসে চাকরি করেন রাহাত। সাচ্ছন্দে প্রতিদিন অফিস করছেন তিনি। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত ৮ বছর ধরে কোনদিন ৮টার আগে বাসায় পৌঁছাননি। তবে এখন তিনি সন্ধায় ৬টা নাগাদ মতিঝিলের বাসায় ফিরে যান। তার মতে, এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র মেট্রোরেলের কারণে। আগে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যেত সেখানে এখন অল্প সময়েই যাওয়া যায়।

বর্তমানে সকাল থেকে রাত অবধি পুরোদমে মেট্রোরেল চলছে।চালু হওয়ার পর থেকেই চাপ বেড়েছে যাত্রীর। উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে কিংবা মিরপুর থেকে মতিঝিল কিংবা উভয় পথেই যাত্রী চলাচল করছে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যেই। দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়েও স্বস্তিতে চলাচল করছেন সাধারণ মানুষ। আর তাতে সময় এবং অর্থ দুইই বেঁচে যাচ্ছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রফিক জানান, আমি থাকি পল্লবী এলাকায়, অফিস পল্টনে। আগে বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যেতে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতাম। এখন মেট্রোরেলে ২০ মিনিটের মধ্যে অফিসে চলে যেতে পারি। আগের মতো বাসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয় না। তাই আগের মতো বাসে উঠা হয় না।

বিহঙ্গ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন খোকন জানান, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাসের মান আগের থেকে বাড়াতে হবে। কারণ মেট্রোরেলে চলাচল করলেও কিছু যাত্রী থাকবে যারা বাস ব্যবহার করবে। তাদের কথা চিন্তা করে আমরা বাসের মান বাড়াব। তাহলে অনেক যাত্রী পাওয়া যাবে।

মতিঝিল-মিরপুর-১২ রুটে ৩৫টি বাস চলাচল করে বিকল্প পরিবহনের। বিকল্প গত নভেম্বর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত রুট সম্প্রসারণ করে এই আশায় যে মেট্রোরেলের কারণে তাদের ব্যবসায় যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে। মঙ্গলবার কোম্পানিটির মাত্র ২৭টি বাস চলাচল করে, বাকিগুলো পল্লবী এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়।

এছাড়া যাত্রী কমে যাওয়ায় সম্প্রতি মিরপুর সুপার লিংক বাস মালিকরা এই রুটে ৫০টির পরিবর্তে ৩০টি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাসমালিকরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে যাত্রীসেবা উন্নয়নে মনোযোগ দেবেন।

প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণার উল্লেখ করা হয়, মেট্রোরেলের যাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ আগে পাবলিক বাস ব্যবহার করতেন। জরিপে অংশ নেওয়া ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ যাত্রী মেট্রোরেল চালুর আগে যাতায়াত করতেন সিএনজিচালিত অটোরিক্সায়, ৬ দশমিক ৮০ শতাংশের বাহন ছিল মোটরসাইকেল, রিক্সার যাত্রী ছিলেন ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রাইভেটকার, ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ রাইড শেয়ারিং সেবায় প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেল এবং ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ যাত্রী অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার করতেন। যাত্রীরা জানান, রাজধানীর বাসগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। সেখানে মেট্রোরেল বড় ধরনের স্বস্তি বয়ে এনেছে। হরতাল-অবরোধেও মেট্রোতে চলাচল সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নে। ফলের বাসের যাত্রীরা ঝুঁকে পড়েছেন মেট্রোরেলে।

সরজমিন মতিঝিল-মিরপুরের রুটের বিভিন্ন বাসে ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে বেশির ভাগ স্ট্যান্ডে যাত্রীদের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকছে বাসগুলো। আগে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে যাত্রীদের যে চাপ ছিল, তা এখন নেই। একসময় ১০ নম্বর গোলচত্বরে আসার আগেই বাস যাত্রীকে পূর্ণ হয়ে যেত। এখন ১০ নম্বর গোলচত্বরেও যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল বাসগুলোকে। সে তুলনায় মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে বেড়েছে। বাসে অপেক্ষারত যাত্রী ও বাসচালকদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলছেন, সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অফিসগামী যাত্রীদের ভিড় থাকে। তবে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে বাসে যাত্রী কম। যাত্রীর জন্য বাসগুলোকে দীর্ঘক্ষণ স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাত্রী খরায় বেশি ভুগছে মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী বাসগুলো। সে তুলনায় মিরপুর থেকে সাভার, গাজীপুর, নিউমার্কেট কিংবা বাড্ডাগামী বাসগুলোকে যাত্রীর জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়নি।

গণপরিবহন ব্যবস্থায় স্বেচ্ছাচারিতা দূর করে শৃঙ্খলা ফেরাতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গত বছরের ৪ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর সর্বশেষ মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ানবাজার স্টেশন চালু করা হয়। আর গত ২০ জানুয়ারি থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল অংশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল।

বর্তমানে ১৬টি স্টেশনে চলাচল করছে মেট্রোরেল এগুলো হচ্ছে-উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেলে সহজে যাতায়াতের জন্য গত তিন দিনে প্রায় ২০ হাজার এমআরটি পাস কিনেছেন যাত্রীরা। আর যাত্রীদের ভিড় কমাতে মেট্রোরেলের চলাচলের মধ্যবর্তী সময় কমানোর পাশাপাশি নতুন বগি বাড়ানোরও চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানিয়েছেন, , গত তিন দিনে আমাদের এমআরটি পাস কিনেছেন প্রায় ২০ হাজার লোক। ভিড় কমাতে আমাদের বগি বাড়ানোর চিন্তাও আছে। যে সিস্টেমে আছে সেখানে প্রত্যেক কোচে আরও দুটি বগি যুক্ত করতে পারবো। এছাড়া নতুন কোচ প্রয়োজন হলে ভাবা হবে। পাশাপাশি আমরা সার্ভে করে দেখবো মেট্রো ট্রেন চলাচলের মধ্যবর্তী সময়টা কতটা কমিয়ে আনা যায়।

অন্যদিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল সকাল থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু থাকায় যাত্রী সংকটে লোকসান গুনছেন বলে দাবি করেছেন বাস মালিকরা। মিরপুর থেকে মতিঝিল রুটে গত কয়েকদিনে যাত্রী অর্ধেক হয়ে গেছে বলে জানান তারা। তাই এখন এসব বাস অন্য রুটে চালানোর চিন্তা করছে বাস মালিকরা।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী এই পরিষেবা নিচ্ছেন। সকালে পিক আওয়ারে প্রতিটি ট্রেনে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৮০০-২০০০ জন যাতায়াত করে।


একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা

 

Link copied!